স্টাফ রিপোর্টার
করোনায় ২০২০ সালের এপ্রিল মাসপ চাকরী হারিয়ে হতাশ হওয়া যুবক পরিবারের চাপ মুক্ত হতে স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন। এরপর থানায় প্রথমে নিখোঁজের জিডি ও পরে অপহরণ ও গুম’র প্রচার করা হয়। দু’বছর স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকা খুলনার যুবককে কক্সবাজার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাব ৬ এর পরিচালক লে কর্ণেল মোস্তাক আহমেদ শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি র্যাব ৬ সদর দফতরের আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত ৭ জানুয়ারী সোনাডাঙ্গার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে মোঃ রফিক হোসেন পল (৩২), স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে যান এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ হিসেবে জিডি করা হয় এবং বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হন। কিন্তু কোন প্রকার আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ায় উল্লেখিত ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছে বা অপহরণ করে মেরে ফেলা হয়েছে বলে বিভিন্ন রকম প্রচার চালায়। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম করার বিভিন্ন অপপ্রচার প্রতিরোধে এবং বিষয়সমূহ খতিয়ে দেখার লক্ষ্যে বিভিন্ন নিখোঁজ ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরেু করে র্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল। এরই অংশ হিসেবে আভিযানিক দলটি গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিখোঁজ ব্যক্তির অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান-৬ এক একটি আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, নিখোঁজ ব্যক্তি মোঃ রফিক হোসেন পল স্বেচ্ছায় আতœগোপন করে কক্সবাজার অবস্থান করছে এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আভিযানিক দলটি ২৯ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজার শাহিন বীচ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময়ে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে যাওয়া মোঃ রফিক হোসেন পলকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, স্বেচ্ছায় নিখোঁজ ব্যক্তি করোনা পূর্ববর্তী সময় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। করোনার কারণে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে চাকুরী হারানো এবং পারিবারিক চাপের কারণে হতাশা থেকে মুক্তির জন্য স্বেচ্ছায় আতœগোপন করেন। আতœগোপনে থাকাকালীন তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখেন। এ সময় তিনি প্রথমে ঢাকায় ৭ মাস মাস্ক বিক্রয় করেন। এরপর ঢাকা সদরঘাটে ৩ মাস হকার হিসেবে খেলনা বিক্রয় করেন। পরে মুন্সিগঞ্জে ৯ দিন হকারী করেন। তারপর নারায়নগঞ্জে ৫ মাস টোকাই হিসেবে পুরাতন বোতল ও লোহা কুড়িয়ে বিক্রয় করেন। সবশেষে কক্সবাজারের শাহিন বীচের ইউনুসের চায়ের টং দোকানে মাসিক ৯ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করেন। একজন ব্যক্তি নিখোঁজ হলেই যে তাকে গুম করে হত্যা করা হয়েছে এই ধারণাটি সঠিক নয়। নিজস্ব বিবেক, বুদ্ধিমত্তা ও বিশেষ সচেতনতায় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে এড়িয়ে চলা সম্ভব। উদ্ধারকৃত ব্যক্তিকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।