বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের দীর্ঘদিনের পুরাতন সব গাছ কর্তন
বোর্ড অব ট্রাষ্টিজের সভায় উপস্থাপন না করে সদস্যদের পাশ কাটিয়ে

টেন্ডার ছাড়াই লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল বিক্রয়সহ নানা অভিযোগ, কারণ ছাড়াই পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত না করে ৩৮টি শিরিষ ও কড়াই গাছ কেটে ফেলা হলো
আটরা গিলাতলা প্রতিনিধি ঃ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের চোখের চিকিৎসা- সেবার একনামে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী খুলনার শিরোমণি বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের সুনাম ক্ষুন্ন হতে চলেছে। অভিযোগ আছে প্রতিষ্ঠানটির জনৈক কর্মকর্তা নিজের ব্যক্তি স্বার্থে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রয়, বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই জনবল নিয়োগ, বিনা করণে বহু বছরের পুরাতন প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ কর্তন, টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই পুরাতন বাস, জেনারেটর ও সিলিং ফ্যান বিক্রয়সহ নানা অভিযোগ উঠেছে। আর এ সকল বিষয় গুলো প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ট্রাষ্টিজের সভায় না তোলায় ক্ষুব্ধ হয়েছে বোর্ড সভার অনেক সদস্যগন। প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তার ব্যক্তি স্বার্থে সরকার এবং প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত করেছে। জানাগেছে, খুলনার শিরোমণি বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের ক্যাম্পাসের দীর্ঘদিনের পুরাতন ছোট-বড় প্রায় ৩৮টি শিরিষ ও কড়াই গাছ কারণ ছাড়াই কেটে ফেলা হচ্ছে। স্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় না গিয়ে নামমাত্র মূল্যে কোটেশনের মাধ্যমে এ সকল গাছ গুলি সর্বোচ্চমূল্য ১১ হাজার টাকা দরে বিক্রয় করা হয়েছে বলে সুত্রে জানাগেছে। গত ২৯ অক্টোবর-২৩’ কোটেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ২৬টি বড় শিরিষ গাছ এবং ছোট ৬টি শিরিশ গাছ পায় শিরোমণি বিসিকের মেসার্স শেখ শাহিন এন্ড ট্রেডার্র্স। তিনি গাছ গুলো কেটে নেওয়ার সময় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের পুরাতন বড়বড় শিরিষ গাছ সহ ছোট-বড় প্রায় ৩৮/৪০টি শিরিষ ও কড়াই গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, কোন কারণ ছাড়াই প্রতিষ্ঠানের পুরাতন বড়বড় সব গাছ গুলি বিক্রয় করে দেওয়া হয়েছে। যে গাছ গুলি বিক্রয় করা হয়েছে তার মধ্যে বড় গাছ গুলির দাম এক একটার ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। অথচ শুনেছি গাছ গুলির এক একটি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১১হাজার টাকা করে। এছাড়াও শিরিষ গাছ ছাড়া অন্য গাছ না থাকলেও কাটা হয়েছে দীর্ঘদিনের পুরাতন কড়াই গাছ যার বর্তমান বাজার দর প্রায় ৪০/৫০ হাজার টাকা করে। অভিযোগ আছে এর আগে প্রতিষ্ঠানের একটি পুরাতন বাস, দুটি জেনারেটর এবং বেশ কিছু ফ্যান বিক্রয় করা হয়েছে যার বিক্রয় প্রক্রিয়া ছিল অস্বচ্ছ। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও অভিযোগ আছে। যথাযথ নিয়ম নীতি না মেনে এ সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। গুঞ্জন আছে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্জ তালুকদার আবদুল খালেকে বিষয় গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা না দিয়ে তাকে এবং বোর্ড অব ট্রাষ্ট্রিজের অনেক সদস্যদের পাশ কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানের জনৈক একজন উর্ধতন কর্মকর্তা এ সকল কাজ নির্দ্বিধায় করে চলেছে। কথা বললে চেয়ারমানকে দিয়ে চাকুরীচ্যুতের ভয় দেখিয়ে ঐ ব্যক্তি এ সকল কাজ করেই চলেছে। চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগে এসে ঐ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকে জিম্মি করে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে সকল সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নিয়ে থাকেন এমনটি প্রতিষ্ঠানের সর্বমহল অবহিত আছেন। প্রতিষ্ঠানের ট্রেজারার সৈয়দা লুৎফুন নাহার বলেন, দীর্ঘ এক বছর হতে চলেছে প্রতিষ্ঠানের বোড অব ট্রাষ্ট্রিজের সভা আহবান করা হয়নি। যেহেতু বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়নি সেহেতু এ সকল বিষয় গুলো বোর্ড সভায় তোলার প্রশ্নই ওঠেনা। তবে যে কোন গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বোর্ড সভায় তুলে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তিনি জানায় গাছ কাটা, জেনারেটর এবং ফ্যান বিক্রয়ের বিষয়ে আমি অবহিত নই। তবে প্রতিষ্ঠানের ট্রেজারার হিসাবে আমাকে জানানো উচিত ছিল।
এ বিষয়ে সাক্ষাৎকার নিতে গত দুদিন প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার গিয়েও পরিচালক ও উপ-পরিচালকে পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মোঃ আব্দুর রবের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি জানান, সকল সিদ্ধান্ত বোর্ডের সদস্য আলহাজ্জ শেখ আকরাম হোসেন এবং উপ-পরিচালক শেখ মুহিতুজ্জামানকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে বিস্তারিত জানতে হলে তিনি ১৮ ফেব্রুয়ারী রবিবার অফিসে আসতে বলেন। তবে ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারী রবিবার ও সোমবার অফিসে গিয়ে তাদেরকে পাওয়া যায়নি। একাধিক বার পরিচালকের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেনি। তবে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা প্রফেসর ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানের এতো গুলো গাছ কি কারণে কাটা হবে তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখা দিয়ে বোর্ড সভায় তোলা অবশ্যই উচিত ছিল। তাছাড়া প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ কাটা হবে বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। গাছ কাটার প্রয়োজন হলে অবশ্যই পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করে স্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিক্রয়ের উদ্যোগ নিতে পারতো। তিনি জানান, গাছ কাটা বলেন, জেনারেটর ও সিলিং ফ্যান বিক্রয়সহ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছ্ইু জানি না। এ গুলো যা হয়েছে তা প্রতিষ্ঠানের পুর্বের রীতিনীতি ভঙ্গ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, জরুরী ভিত্তিতে ম্যানেজমেন্টের বোর্ড সভা আহবান করে বোর্ডের সদস্যদের অবহিত করা না হলে এর দায় পরিচালককেই নিতে হবে।