স্থানীয় সংবাদ

মোংলার পশুর নদীতে কয়লা বোঝাই কার্গো জাহাজ ডুবি

জলজপ্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কা

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি ঃ মোংলা বন্দরের পশুর নদীতে ৯৫০মেট্টিক টন কয়লা নিয়ে এম,ভি ইশরা মাহমুদ নামের একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। এ সময় ওই জাহাজে থাকা ১১জন স্টাফ-কর্মচারী সাঁতরিয়ে কুলে উঠে গেলে প্রাণে বেঁচে যান তারা। অতিরিক্ত ড্রাফটের (ধারণক্ষমতার বেশি বোঝাই) কারণে ফাটল ধরে পানি ঢুকে ধীরে ধীরে ডুবতে থাকে কার্গোটি। ডুবে যাওয়া জাহাজটি হতে সাথে সাথেই কয়লা অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে কার্গোটি বন্দরের মুল চ্যানেলের (পশুর নদীর) অনেক বাহিরে চরে ডুবায় চ্যানেল নিরাপদ ও দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ এবং সকল ধরণের নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ডুবন্ত কার্গো জাহাজের মাস্টার কাজী কামরুল ইসলাম জানান, মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়ীয়ার ৬নম্বর এ্যাংকোরেজে থাকা মার্শাল আইল্যান্ড পতাকাবাহী বিদেশী জাহাজ এম,ভি প্যারাস থেকে কয়লা বোঝাই করে কার্গো জাহাজটি। পরে যশোরের নওয়পাড়ার একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথিমধ্যে পশুর নদীর বানীশান্তা নোঙ্গরে অবস্থানরত কার্গোটি অতিরিক্ত বোঝাইয়ের ফলে তলা ফেটে পানি উঠে একদিকে কাত হয়ে যায়। এরপর পানি উঠতে থাকলে দ্রুত জাহাজটি চালিয়ে বানীশান্তা নোঙ্গর থেকে ছেড়ে চরকানা চরে উঠিয়ে দেয়া হয়। চরে উঠিয়ে দেয়ার পরও সেখানে ধীরে ধীরে ডুবে যায় জাহাজটি। এ সময় জাহাজে থাকা ১১স্টাফ-কর্মচারী দ্রুত সাঁতরিয়ে কুলে উঠে প্রাণে বেচে যান। এর পরপরই ডুবে যাওয়া এম,ভি ইশরা মাহমুদ কার্গো জাহাজ থেকে কয়লা অপসারণ করে পাশের একটি বার্জে (নৌযান) সরিয়ে নিচ্ছেন মালিকপক্ষ। মাস্টার কামরুল বলেন, শুক্রবার রাতে বিদেশী জাহাজ থেকে কয়লা বোঝাই করে কার্গোটি রাতেই বানীশান্তা নোঙ্গরে রাখা হয়। মুলত অতিরিক্ত ড্রাফটের (ধারণক্ষমতারিক্ত) বোঝাইয়ের কারণে শনিবার বেলা ১১টার দিকে তলা ফেটে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে দাবী করেন তিনি। তবে কি পরিমাণ কয়লা বোঝাই ছিলো সে সম্পর্কে মাস্টার কামরুল আরো বলেন, কয়লা বোঝাইয়ের বিদেশী জাহাজের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদলের বোট নোট পাইনি এখনও। তাই কি পরিমাণ কয়লা বোঝাই হয়েছিলো তা সঠিক বলতে পারছিনা। তবে এ জাহাজের ধারণক্ষমতা ১হাজার মেট্টিক টন। ধারণা করা হচ্ছে ৯শ থেকে সাড়ে ৯শ কিংবা তার চেয়ে কম-বেশি লোড হয়ে থাকতে পারে। তবে অতিরিক্ত লোড/ড্রাফট হয়েছিলে বলে মনে হচ্ছে বলে দাবী তার। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগ) মোঃ মাকরুজ্জামান বলেন, কয়লা নিয়ে কার্গো জাহাজটি পশুর নদীর চরে ডুবে যাওয়ায় বন্দরের মুল চ্যানেল নিরাপদ ও সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। এ দুর্ঘটনার পরও পশুর চ্যানেলে দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিকসহ সকল ধরণের নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি। কয়লা নিয়ে জাহাজ ডুবির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ‘সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, কয়লা একটি দার্হ্যপদার্থ জাতীয় বিষাক্ত পণ্য। এ কয়লা জোয়ার-ভাটায় নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়ে জলজপ্রাণীর মারাত্মক ক্ষতি হবে। তাই দ্রুত এ কয়লা অপসারণ করাসহ কয়লাবাহী জাহাজের চালকদের আরও বেশি সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য এর আগে একই জায়গায় গত বছরের ১৭নভেম্বর ৮শ মেট্টিক টন কয়লা নিয়ে তলা ফেটে ডুবে ছিলো এম,ভি প্রিন্স অব ঘাষিয়াখালী-০১। মারাত্মক ক্ষতি হবে। তাই দ্রুত এই কয়লা অপসারণ করাসহ কয়লাবাহী জাহাজের চালকদের আরও সচেতন হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button