খুলনার বই মেলায় শেষের দিকে শিক্ষার্থীদের বাড়ছে ভীড়

মেলার সময় বাড়ানোর দাবির পক্ষে-বিপক্ষে দু’পক্ষ অনড়
স্টাফ রিপোর্টারঃ আর মাত্র দু’ দিন পর বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে খুলনার একুশে বই মেলা। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারী এই বই মেলার সমাপ্তি টানতে চান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্টল কমিটির চান আরো দু’দিন মেলার সময় বাড়ানো হোক। এই নিয়ে দু’পক্ষই তাদের সিদ্ধান্তে রয়েছেন অনঢ়। এদিকে শেষের দিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মেলায় ভীড় করছে। তাার তাদের পছন্দসহ বই কিনতে ছুটছে এক স্টল থেকে অপর স্টল পর্যন্ত। একই সাথে মেলার মূল মঞ্চে বইয়ের মোড় উন্মোচনের হিড়িক পড়েছে। সোমবার বিকেলে মঞ্চে পরপর তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। কবি শাহ পারবীন আখতারের দু’টি কবিতার বই। বই দু’টি হলো ‘মনের আয়নায় খুঁজি ও শ্রাবণে পূর্নিমা চাঁদের জ্যোৎ¯œা’। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আলমগীর কবির, অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির, রূপান্তরের প্রধান নির্বাহী স্বপন গুহ, মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনার সমন্বয়কারী এড. মোমিনুল ইসলাম। উপাস্থাপনায় ছিলেন বিশিষ্ট কবি হুসাাইন বিল্লাহ। সরকারী ছুটির দিন হওয়ায় সোমবারও পুরো মেলা জুড়ে কবি লেখক, সাহিত্যিক আর পাঠকের ভীড় ছিল লক্ষণীয়। বই মেলা সময় দু’ দিন বাড়ানোর দাবি করলেও সাব না করে দিয়েছে মেলা কমিটির সদস্য সচিব ও বয়রা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের উপ-পরিচালক মোঃ হামিদুর রহমান। একই সুরে কথা বললেন বিশিষ্ট কবি হুসাইন বিল্লাহ। তিনি জানান, আরো একটি সংগঠন ১ মার্চ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত মেলা করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। এ জন্য সময় একদিনও বাড়ানো সম্ভব নয়। বয়রা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার ২১শে বই মেলায় গেটে দশর্কদের ভীড়। বইয়ের দোকানগুলোতে ভীড় লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে প্রথম দিকে যাদের তেমন উপস্থিতি ছিল না সেই ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা সোমবার মেলায় এসছে স্ব স্ব স্কুল ড্রেস পড়ে। কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এসে মেলা মাঠ করেছে পরিপূর্ণ। রোভার পলস হাই স্কুলের শিক্ষিকা সাগতা কুন্ডু এসেছেন ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে। তিনি বলেন, এবার মেলার পরিবেশ ভাল। শিক্ষার্থীরা যাতে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলে সেই জায়গা থেকে তাদের বই মেলায় নিয়ে আসা। তবে বর্তমান শিক্ষার্থীরা বড়ই বই বিমুখ। তারা বই উপহার পেলেও আগের মত তেমন খুশিও হয় না। এ জন্য অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবেন। টেক্সাটাইলস মিল হাইস্কুলের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস এসছে কয়েকজন সাথীকে সঙ্গে নিয়ে। সে বলে, তার মটু-পাতলু গল্পের বই পড়তে ভাল লাগে। এ জন্য সেই বইটা কিনতে খুজছি। তবে দাম খুবই বেশী বলে কিনতে পারছি না। সে বলে, তারা ৪২জন শিক্ষার্থী মেলায় এসেছে। বাক আবৃত্তি অনুশীলন চক্রস্টলের প্রতিনিধি সুলতান মাহমুদ শ্রাবন বলেন, তিন শ্রেণীর পাঠক তিন ধরনের বই পড়তে আগ্রহী। কলেজ শিক্ষকরা প্রথমার বই পড়তে চায়, বাচ্চারা ভূতের গল্প বই পড়তে চায়। মধ্য বয়সীরা প্রেমের গল্পের কাহিনী সম্বলিত বই কিনতে চায়। সব মিলিয়ে এবার মেলা জমে উঠেছে। তবে ২৯ ফেব্রুয়ারী যেহেতু বৃহস্পতিবার সেহেতু শুক্রবার ও শনিবার দু’দিন বই মেলার সময় বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। একই দাবি করেন বই মেলা স্টল কমিটির সাঃ সম্পাদক ও বুক পয়েন্ট স্টলের প্রতিনিধি আল আমিন। তিনি জানান, মেলার সময় শেষ শুক্রবার মাত্র একদিন বাড়ানোর গেলে তাদের দু’ দিনের লোকসান পোষানো যেত। আসফিয়া বুক ডিপো স্টলের প্রতিনিধি কেএম তুহিন বাবু বলেন, ছুটির দিনে দর্শক সমাগম প্রচুর হয়েছে। বেচাবিক্রি অনেক ভাল। পরিবেশও খুব ভাল। তিনিও মেলার সময় বাড়ানোর জোর দাবি জানান। গার্ডিয়ান পাবলিকেশন স্টলের প্রতিনিধি মুনতাসির মামুন বলেন, তার স্টলে সবচেয়ে বেশী বিক্রি হচ্ছে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ নামক বইটি। তিনিও মেলা একদিন বাড়ানোর দাবি জানান। আফসার ব্রাদার্স নামক স্টলের প্রতিনিধি ফিরোজ মৃধা জানান, তার স্টলে অনুবাদ বই বেশী বিক্রি হচ্ছে। মধ্য বয়সী পাঠকরা বই বেশী কিনছেন। আগামী শুক্র ও শনিবার এই দু’দিন বই মেলার সময় বাড়ালে ভাল হতো বলে তিনি মনে করেন। আলফা বুক হাউজ স্টলের প্রতিনিধি মনোজ কুমার দে বলেন, পদ্মজা বইটি তার বিক্রির শীর্ষে। মেলার সময় বাড়ালে ভাল হতো। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশ ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মোঃ আলমগীর জানান, যেহেতু পবিত্র শবে বরাত ও বৃষ্টির কারণে মোট দু’দিন তাদের বেচাবিক্রি খুবই কম হয়েছে। এতে স্টল মালিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেহেতু ক্ষতি পুসিয়ে নেয়ার জন্য মেলার সময় আরো দু’ দিন বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। তাছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে বই মেলার সময় বাড়ানো হয়েছে। সেহেতু খুলনার বই মেলার সময় বাড়ানো যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার, খুলনা উপপরিচালক মোহাম্মদ হামিদুর রহমান জানান, শেষ মূহুতে মেলা জমে উঠেছে। ছুটির দিনে মেলা কানায় কানায় পরিপূর্ন ছিল। তিনি জানান, মেলার সময় বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। কারণ ভিন্ন নামে আরো একটি বই মেলার অনুমোদন নিয়ে স্বাধীনতা একাডেমি নামক একটি সংগঠন খুলনায় অবস্থান করছে।