খুলনায় বেশি অগ্নিনির্বাপন ঝুঁকিতে আছে সিটি কর্পোরেশন এলাকা
কমিটি গঠন, আজ থেকে মাঠে নামছে ফায়াসার্ভিস বিভাগ, নগরীতে ঝুঁকিপুর্ন ভবন রয়েছে ৪৮টি, ভাঙ্গা হয়েছে ৫টি

‘বড় বাজার, নিউ মার্কেট, আক্তার চেম্বার, হেলাতলা মার্কেট, খানজাহান আলী মার্কেট, তুলাপট্টিসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নেই’
কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনায় সবচেয়ে অগ্নিনির্বাপন ঝুঁকিতে আছে সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। বড় বাজার, নিউ মার্কেট, আক্তার চেম্বার, হেলাতলা মার্কেট, নিক্সন মার্কেট, খানজাহান আলী মার্কেট, তুলাপট্টি এসব জায়গায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নোটিশ দিয়েছেন খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন শপিং মল, বড় বড় ভবন, ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে। কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষে আজ ( মঙ্গলবার) থেকে মাঠে নামছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগ। ইদানিং দেখা যাচ্ছে রেঁস্তোরা খোলা হয়েছে, বড় বাণিজ্যিক ভবনের টপ ফ্লোরে। এদের অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা আছে কি না সন্দেহ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে যেন একেবারেই উদাসীন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচে যুগের পর যুগ চোখ বুঁজে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ফুটপাত ও সড়ক দখল করে ব্যবসা চালাতেও কার্পণ্য করছেন না কেউ। মার্কেটগুলোর সরু সরু গলিপথ এমনভাবে তারা আগলে রেখেছেন যে, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতাও চালাতে পারবে না। ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিনির্বাপণ বিধিমালা অনুযায়ী ফায়ার এক্সিট, ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টরের (ধোঁয়া শনাক্তকরণ যন্ত্র), ফায়ার সেফটি নেই। এছাড়া খুলনার বড় বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতানগুলোতে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় কনটিনজেন্সি প্ল্যান রাখা জরুরি হলেও তা রাখা হয়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগের উপ-পরিচালক মামুন মাহমুদ বলেন, জোন ওয়ারি হিসাব অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এই কমিটি আজ মঙ্গলবার থেকে মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে যাদের অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নেই তাদের তালিকার কাজ শুরু করবে। যেসকল ভবন, রেঁস্তোরা, ক্লিনিকসহ শপিং মলে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে তাদেরকে নোটিশ করা হবে, তারপরেও যদি অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না করে তাহলে আমরা আদালতের সরানাপন্ন হবো। তিনি বলেন, সবেচেয়ে অগ্নিনির্বাপন ঝুঁকিতে আছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। তিনি বলেন, বর্তমানে অগ্নিনির্বাপনে সরঞ্জামের কোন সংকট নেই। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগের সহকারি পরিচালক মো: ফারুক বলেন, বড় বাজার, ন্উি মার্কেট, ্আক্তার চেম্বার, নিক্সন মার্কেট, হেলাতলা মার্কেট, খানজাহান আলী মার্কেট, তুলাপট্টি এসব জায়গায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নোটিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, খুলনা মহানগরীতে বড় বড় ভবনগুলোতে ফায়ার এলার্ম নেই। ক্লিনিকেও নেই। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী খুলনা ঝুঁকিপুর্ন ভবন আছে ৪৮টি। এর মধ্যে ৫টি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বাকীগুলো সেইভাবেই আছে। তিনি আরও বলেন, যখন কেউ ভবন তৈরি করে, সিঁড়ি করা হয়ে যায়। তখন আমাদের কেউ ডাকে না। করার পর ডাকে। তখন দেখা যায়, বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সিঁড়িটা করেননি। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর রাতে নগরীর খাজা খানজাহান আলী হকার্স মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মার্কেটের তিনটি দোকান পুড়ে যায়। এর আগে গত ৫ অক্টোবর খুলনার বড় বাজারের ডেল্টাঘাট এলাকায় আগুনে সাতটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কারখানা পুড়ে যায়। অনেক সমস্যা মোকাবিলা করে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে এগিয়ে আসে। এ দুর্ঘটনায় অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। একই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে খুলনা শপিং কমপ্লেক্সের পাশে রহিমা কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আধাঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এর আগে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই রাতে রেলওয়ে হাসপাতাল রোডে (নিক্সন মার্কেট) অবস্থিত মানিক মিয়া শপিং কমপ্লেক্সের এলাহী ফ্যাশনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৬৮ লাভ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও সচেতন হচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। সাধারার মানুষের অভিযোগ দুর্ঘটনার পর জানা যায় গাড়ির ফিটনেস ছিলো না, ভুল চিকিৎসার পর জানা যায় ক্লিনিকের লাইসেন্স ছিলো না, আগুন লাগার পর জানা যায় ভবনের নকশায় ত্রুটি। এসব বিষয়ে আগে থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজরদারি বা মনিটরিং করতেন তাহলে অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে মানুষ রক্ষা পেতো। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের ওই ভবনে অগ্নিকা-ের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সেখানে ১৩ ইউনিট কাজ করে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় । এ অগ্নিকা-ে নারী-পুরুষ-শিশুসহ ৪৬ জনের মৃত্যু হয় এর একটি বড় উদাহারন। এছাড়া এর আগে বহু আগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পর পরই পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। এর আগে যা. তাই বলে তাদের মন্তব্য। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগে সূত্র মতে, অগ্নিকান্ড প্রতিরোধ, প্রতিকার ও নির্বাপক ব্যবস্থায় যা যা প্রয়োজন, খুলনার মার্কেটগুলোতে তার কোনোটাই নেই বললেই চলে। প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিচ্ছি, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বড় বাজারে মাইকিং করছি। সরেজমিনে খুলনার মার্কেটগুলো পরিদর্শন করে প্রতিদিন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করছি।
সূত্র মতে, খুলনা শপিং কমপ্লেক্স, খুলনা বিপণিবিতান, চাঁদনিচক সুপার মার্কেট, নিক্সন মার্কেট, নান্নু সুপার মার্কেট, আব্দুল জব্বার মার্কেট, হ্যানিম্যান মার্কেট, খাজা খানজাহান আলী হকার্স মার্কেট, হার্ডমেটাল গ্যালারি, এস এম এ আব্দুর রব মার্কেট, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিপণিবিতান, হেরাজ মার্কেট, বড় বাজারের ওয়েস্ট মেকড রোড, ভৈরব স্ট্যান্ড রোড, হেলাতলা রোড, কালীবাড়ী রোড, ক্লে রোড, কেডি ঘোষ রোড, স্যার ইকবাল রোডের একাংশ ও স্টেশন রোড অগ্নিকান্ডর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পায়ে চলা পথের মাধ্যমে একটি মার্কেট আর একটি মার্কেটের সঙ্গে সংযুক্ত। এসব পথে একজন হাঁটলে আর একজনের হাঁটার জায়গা থাকে না। সূত্রমতে, বড় বাজারসহ এর আশপাশে ছোট-বড় ১০ সহস্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সব ধরনের পোশাক, ওষুধ, পণ্য ও খাদ্যদ্রব্য পাইকারি বেচাকেনার পাশাপাশি খুচরা বিক্রি হয়। যে কারণে ঈদের বাজারে লাখো মানুষের যাতায়াত হয় এই এলাকায়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগের উপ-পরিচালক মামুন মাহমুদ বলেন, সরকারিভাবে আমরাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে মানুষদের সেবা দিতে কোন টাকা পয়সা লাগে না। আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট নেই, নেই কোন ক্ষমতা। আমরা এখন থেকে যেসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নিনির্বান ব্যবস্থা নেই। তাদেরকে নোটিশ করব, এতেও যদি কাজ না হয়। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে মামলা করবো। উল্লেখ্য. গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের ওই ভবনে অগ্নিকা-ের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সেখানে ১৩ ইউনিট কাজ করে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। এ অগ্নিকা-ে নারী-পুরুষ-শিশুসহ ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এতে সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষ রয়েছেন।