স্থানীয় সংবাদ

নগরীতে মানবপাচার চক্রের মুলহোতাসহ ৬ সদস্য গ্রেফতার : দুই কিশোরী উদ্ধার

কেএমপি হ্যালো অ্যাপস অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান : কেএমপি পুলিশ কমিশনার

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনায় মানব পাচার চক্রের মূলহোতাসহ ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার রাতে মহানগর এলাকার একটি রাইস মিল সংলগ্ন আদিলুর রহমান সড়ক দ্বিতীয় লেন এর শেখ মিজানুর রহমানের দ্বিতীয় তলার নিচতলা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় অপ্রাপ্ত বয়স্ক দুই কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সম্মেলনকক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন কমিশনার মো: মোজাম্মেল হক। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মিল্টন মন্ডল (৪০), মোঃ সাইফুল ইসলাম (২১), মোঃ হিমেল (২১), খাদিজা বেগম (২২), রতœা আক্তার ওরফে পায়েল (২০) এবং রাবেয়া বেগম (২০)। এর আগে চলতি বছরের গত ৫ মার্চ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের হ্যালো কেএমপি অ্যাপসের ইনবক্সে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তির গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে মানব পাচার চক্রে জড়িত কতিপয় ব্যক্তি দুই জন ভিকটিমকে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে খুলনা মহানগরীর লবণচরা থানা এলাকার মোহাম্মদ নগরে রাজা সাহেবের রাইচ মিল সংলগ্ন আদিলুজ্জামান সড়ক ২য় লেন এর জনৈক শেখ মিজানুর রহমান এর ২য় তলা বাড়ির নিচ তলায় আটক রেখে পতিতাবৃত্তি করাচ্ছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, লবণচরা থানা পুলিশের একটি চৌকস আভিযানিক টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মোহাম্মদ নগর এলাকার রাজা সাহেবের রাইচ মিল সংলগ্ন আদিলুজ্জামান সড়ক ২য় লেন এর জনৈক শেখ মিজানুর রহমান এর ২য় তলা বাড়ির নিচ তলা হতে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার এবং দুই তরুণীকে উদ্ধার করে। এসময় জানা যায়, আসামীরা ভিকটিমদেরকে গত ২ মাস পূর্বে যাত্রাপালায় গানবাজনা এবং অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে আসে এবং ভিকটিমদ্বয়ের নগ্ন ছবি ধারণ করে তাদেরকে জোরপূর্বক আটক রেখে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। তারা অনৈতিক কাজে লিপ্ত না হলে তাদের নগ্ন ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে এহেন জঘন্য কাজ করতে বাধ্য করে। এছাড়াও, সেখানে রাতের বেলায় আসামীরা ডিজে পার্টিসহ আগতদের মনোরঞ্জণের রঙ্গিন আলোয় নাচ-গানের ব্যবস্থা করে থাকে। এমতাবস্থায়, ভিকটিমরা পতিতাবৃত্তিতে ও নাচ-গানে অস্বীকৃতি জানালে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। তারা ভিকটিমদের এভাবে ফাঁদে ফেলে দীর্ঘদিন ধরে পতিতাবৃত্তি করাচ্ছে এবং ভারতের কলকাতা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও সুরাট সহ বিভিন্ন প্রদেশে বিক্রি করে অর্থ-সংস্থান করে। অভিযানকালে সেখানে যৌন উত্তেজক ঔষধসহ সেক্স টয় টাইপের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়। এ সময় আরো জানা যায়, বিগত ২ মাস যাবত বিভিন্ন জায়গায় যাত্রাপালায় গানবাজনা এবং অভিনয়ের কথা বলে ভিকটিমদ্বয়কে নিয়ে গেলেও তাদেরকে যাত্রাপালায় গানবাজনা এবং অভিনয় করতে দেওয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে দালালের মাধ্যমে পার্টি ঠিক করে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার জন্য এই কালক্ষেপন করা হয়। প্রেস বিফ্রিংয়ে উল্লেখ করা হয়, গত ২ মার্চ সকাল ৯ টার দিকে ঘটনাস্থলের বাসায় এনে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন লোকজনের সাথে আসামীরা কথা বার্তা বলে ও দাম দর পাকা করে। আসামীরা ভিকটিমদেরকে পতিতাবৃত্তি করানোর জন্য জোর জবরদস্তি করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটক করে রাখে। পরবর্তীতে সোমবার রাতে বেলায় আসামীরা ভিকটিমদেরকে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে দালালের নিকট হস্তান্তর করবে বলে জানায়। আসামীরা সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। ভিকটিমদেরকে কাজের কথা বলে ডেকে এনে পতিতাবৃত্তি করানোর জন্য ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে আটক রেখে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৭/১০/১১ ধারার অপরাধ করেছে বিধায় তাদের বিরুদ্ধে সোমবার লবণচরা থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button