স্থানীয় সংবাদ

রামপালে ওয়ারেশ কায়মের ভিত্তিতে দখল ও হুমকির অভিযোগ

রামপাল (বাগেরহাট) প্রতিনিধি ঃ অবৈধ পন্থায় চেয়ারম্যান কর্তৃক একটি ওয়ারেশ কায়েম সনদের ভিত্তিতে জোরপূর্বক জমি দখল ও বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলাধীন উজলকুড় ইউনিয়নের রনসেন গ্রামের বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের বেলায়েত হোসেন ওরফে বেলায়েত মহাজনের ১ম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ১৯৯১ সালের ১৫ এপ্রিল দ্বিতীয় বিয়ে করেন ফরিদা বেগমকে। স্ত্রী ফরিদা বেগমের একাধিক বিয়ে থাকায় মাত্র এক মাস ১৭ দিন সংসার করার পর বিগত ১৯৯১ সালের ২৯ মে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বেলায়েত হোসেন ও ফরিদা বেগমের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এ ঘটনায় ফরিদা বেগম বাগেরহাট নিম্ন আদালতে সাড়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা উল্লেখ পূর্বক মৃত. শেখ বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। যে মামলার নম্বর ৫৬৪/৯১। দীর্ঘ প্রায় এগারো মাস পরে ফরিদা বেগম অন্তঃসত্ত্বা রয়েছেন এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত ওই মামলা খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ ৩০ বছর পরে বেলাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি মৃত শেখ বেলায়েত হোসেনের সন্তান দাবি করে সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পারুল আক্তার এর কাছে থেকে একটি ওয়ারেশকাম সনদের জন্য আবেদন করেন। মহিলা মেম্বার পারুল আক্তার তার জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি কার্ড দেখে ভারপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ অলিয়ার রহমান বরাবর সুপারিশ করেন।
পারুল আক্তারের ওই সুপারিশের ভিত্তিতে বেলাল হোসেনকে ২ নং উজলকুড় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান ওলিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত একটি ওয়ারেশকায়েম সার্টিফিকেট দেন। এদিকে মৃত. শেখ বেলায়েত হোসেনের পুত্র ও কন্যারা জানতে পারেন তাদের মৃত পিতা বেলায়েত হোসেনের সন্তান দাবি করে বেলাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি মহিলা মেম্বারের কাছ থেকে একটি ওয়ারেশকায়েম সার্টিফিকেট গ্রহন করে। ঘটনা জানতে পেরে মৃত শেখ বেলায়েত হোসেনের সন্তানেরা মহিলা মেম্বার পারুল আক্তারের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগে বেলালের জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ ১৯৯৪ সাল রয়েছে বলে জানান । আর তাদের পিতার সঙ্গে ফরিদা বেগমের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে ১৯৯১ সালে যে ঘটনায় ফরিদা বেগম অন্তঃসত্ত্বা দাবি ১টি মামলা করলেও মামলার সত্যতা না পাওয়ায় ১৯৯২ সালে ভিত্তিহীন ওই মামলা খারিজ করে দেন আদালত। এ ব্যাপারে মহিলা মেম্বার পারুল আক্তারের কাছে মৃত. বেলায়েত হোসেনের পরিবারের সদস্যরা মামলার কপি সহ তালাক নামা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখালে পারুল আক্তার খোঁজ নিয়ে বেলালের দাবীর সত্যতা না পাওয়ায় চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত স্বারক নং- ২০২৩০১১৭৩৯৪০০০৮৭৩ ওয়ারেশ কায়েম সনদটি প্রত্যাহার করেন মহিলা মেম্বার। এদিকে সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পারুল (ওয়ার্ড নং ৪,৫,৬) ও প্যানেল চেয়ারম্যান অলিয়ার রহমান বেলালকে দেয়া ওয়ারেশকায়েম সনদ প্রত্যাহার করে নেন এবং তদন্ত ছাড়া ওয়ারেশকায়েম সনদ দেয়া ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন।
ওয়ারেশ কায়েম সার্টিফিকেট এর ব্যাপারে উজলকুড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুন্সি বোরহান উদ্দিন জেড এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন মৃত বেলায়েত হোসেন ওরফে বেলায়েত মহাজনের ছোট ভাই শেখ আজমল হোসেন একটি স্ট্যাম্পে বেলালকে ভাতিজা বলে স্বীকৃতি দেন। চেয়ারম্যানের এই স্বীকৃতির উপর ভিত্তি করে ওয়ারেশকায়েম সার্টিফিকেট দিয়েছেন। অথচ মহিলা মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান অলিয়ার রহমান তাদের ভুল স্বীকার করে প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেও অদৃশ্য কারণে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বলে বেলালকে ওয়ারেশকায়েম সনদ প্রদান করেন। ইতোমধ্যে যে সনদ দেখিয়ে কথিত সন্তান দাবি করা বেলাল হোসেন সহ এলাকার কিছু চিহ্নিত ভূমি দস্যুদের সঙ্গে নিয়ে একাধিক জমি দখল ও বিক্রি করাসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও জোরপূর্বক তালা মেরে রেখেছে। এদিকে মৃত বেলায়েত হোসেনের ছোট ভাই শেখ আজমল হোসেন বলেন সন্তান দাবি করা বেলালকে তিনি চেনেন না, দেখেননি কোনদিন। আর চেয়ারম্যান যে স্ট্যাম্পের উপর ভিত্তি করে তাকে ওয়ারেশ কায়েম সনদ দিয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। মৃত, বেলায়েত হোসেনের সন্তানেরা জানান, দীর্ঘ ২৫ বছরে কখনো আমাদের পরিবারের এমন কোনো সদস্যই দেখি নাই আমরা। অথচ অদৃশ্য কারণে বেলাল হোসেন আমাদের পরিবারের সদস্য দাবি করে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। যে কারণে আমাদের পরিবারের সকলেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ ব্যাপারে আমরা খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button