বাগেরহাটে রাজস্ব দিয়ে সুন্দরবনে ছুটছেন মৌয়ালরা

মধু আহরণ মৌসুম শুরু
আজাদুল হক, বাগেরহাট প্রতিনিধি ঃ বাগেরহাটের পুর্ব-সুন্দরবনে মধু আহরন মৌসুম শুরু হয়েছে। বন বিভাগের মাধ্যমে সরকার কে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে পেশাদার মৌয়ালরা সোমবার ( ১ এপ্রিল) থেকে মধু সংগ্রহে নেমে পড়েছেন। এর আগে জলযান হিসেবে নৌকা মেরামত শেষ করে সাথে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সুন্দরবনের মধু আহরণ করতে ছুটে চলেছেন মৌয়ালরা। দলবদ্ধভাবে মৌসুমের শুরু থেকেই বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মৌয়ালরা মধু আহরণের কর্মকাজ শুরু করেছেন। তবে বন বিভাগ বলছে, মধু আহরণেল নামে হরিণ শিকারসহ বন্যপ্রানী পাচার ও কীটনাষক দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে সকল ব্যবস্থা গ্রহন করছে বন বিভাগ। পুর্ব-সুন্দরবনের বাগেরহাট বিভাগীয় বন কার্যলয় সুত্রে জানা গেছে, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সুন্দরবনে মধু আহরণের মৌসুম ধরা হয়েছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষায় এর আগে মধু সংগ্রহের সময় সিমা নির্ধারণ ছিলো তিন মাস। তবে ২০২২ সাল থেকে এপ্রিল ও মে এ দুই মাস মধু সংগ্রহের জন্য মৌয়ালদের পাস-পারমিট দিয়ে আসছে বন বিভাগ। এবারের মৌসুমে পুর্ব-সুন্দরবনের চাদঁপাই ও শরনখোলা রেঞ্জের প্রথম পর্যায় ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ কুইন্টাল মধু এবং ২০০ থেকে ২৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে গত বছর মধু না পাওয়ায় আহরণ হয়েছিল ৫৪১ কুইন্টাল মধু এবং ১৬১ কুইন্টাল মোম। মধু সংগ্রহের নিয়ম এবং বন আইনের নীতিমালা অনুসরণ করে ১ এপ্রিল সকাল থেকেই মৌয়ালদের পাস (অনুমতিপত্র) দেওয়া শুরু হয়েছে। সুন্দরবনের পুর্ব ও পশ্চিম বিভাগে ১ হাজার ৫০০ কুইন্টাল মধু এবং ৪৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিভাগীয় বন কার্যলয় থেকে। এর আগে গত বছর ৩৬৫টি পাস নিয়ে ২ হাজার ৪৫০ জন মৌয়াল ১ হাজার ২২৫ কুইন্টাল মধু এবং ৩৬৭ দশমিক ৫ কুইন্টাল মোম আহরণ করেছিলেন, যা থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয় ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা। মধু আহরণের জন্য প্রস্তুতি নেয়া ঢাংমারী এলাকার নিতাই চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, মৌসুমের শুরুতে খলিশা ফুলে মধু আসে, খলিশা ফুলের এ মধুটা বিশ্বের কাছে সব চেয়ে বেশী পরিচিত এবং দামও বেশী। এর ২০ থেকে ২৫ দিন পর আসে গরাণ ফুলের মধু। মৌসুমের শেষে আসে কেওড়া, গড়ান ও ছইলা ফুলের মধু। এই তিন প্রজাতির মধুর মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ও দামি হচ্ছে খলিশার মধু। কারণ, খলিশা ফুলের মধুর মধ্যে কোন পানি বা মিশ্রিত থাকে না। মৌসুমের প্রথম ফুলের মধু যা একদম খাটি। এছাড়া এ বছর এই অঞ্চলে সে রকম বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টি না হওয়ায় ফুল শুকিয়ে ঝরে যায়, তাই মধু জমে কম। মৌয়ালদের অভিযোগ, আগে বন বিভাগ তিন মাস (এপ্রিল, মে ও জুন) মধু আহরণের অনুমতি দিত। কিন্তু গত দুই বছর শুধু এপ্রিল ও মে মাসে মধু আহরণ করতে দিচ্ছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের প্রায় অর্ধেক এলাকায় মধু আহরণের অনুমতি দেয় না বন বিভাগ। এ কারণে আগের চেয়ে মধু আহরণের পরিমাণ বেশ কমে গেছে বলে জানান তারা। মৌয়ালরা আরো জানান, গত বছর তাঁদের দলের প্রত্যেক সদস্য দুই মণ করে মধু পেয়েছিলেন। পাস সংগ্রহ, সরকারি রাজস্ব এবং লোক ও খাওয়া খরচ মিলিয়ে মৌসুমে তাদের একেকজনের খরচ হয় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর দুই মণ মধু বিক্রি করে একেকজন পেয়েছিলেন ৬০ হাজার টাকা। এ বছরও আশানুরূপ মধু পাবেন বলে মনে করছেন তারা। তবে মধু আহরণের জন্য প্রতি বহড়ে ৫-৭ জন লোক প্রয়োজন কিন্ত এ বছর লোক পাওয়া খবই সমস্যা হচ্ছে, কারণ সুন্দরবনে বাঘের প্রবনাতা বেশী ফলে ভয়ে এখন আর সুন্দরবনে লোক যেতে চায়না। পূর্ব সুন্দরবনের মোংলার চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, প্রতি বছরই ১৫ মার্চ থেকে মধু আহরণের মৌসুম শুরু হয়। চাঁদপাই ও শরনখোলা রেঞ্জে বনে তেমন ফুল না ফোটায় মৌয়ালরা পাশ নিয়ে লোকসান হবে বলে বনে ওই সময়ে বনে যায় না। আর এর মুল কারণ জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাবে পূর্ব সুন্দরবনের গাছে ফুল একটু দেরিতে আসে। তাই ১৫ মার্চ পাশ না দিয়ে ১ এপ্রিল থেকেই পাশ দেয়া হচ্ছে এবং সেই পাশ নিয়ে মৌয়ালরা বনে যাবেন। তবে অপরাধ মুলক কর্মকান্ডের জন্য বন রক্ষীরা পৃথক টিম গঠন করে টহল অব্যাহত রয়েছে।