খুমেক হাসপাতালে লেবার ওয়ার্ডে দুই আউটসোর্সিং কর্মীকে শোকজ

৪৯৫ পিস ডিষ্টিল ওয়াটার চুরির হোতারা দিল উল্টো অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার ঃ গত ২৩ মার্চ খুলনা মেডিকেল কলেজ ( খুমেক) হাসপাতালের প্রসুতি বিভাগের ময়লার ভাগাড়ে পাওয়া গিয়েছিল ৪৯৫ টি ডিষ্টিল ওয়াটার। আনসার সদস্যরা হাসপাতালে প্রসুতি বিভাগের একটি পরিত্যক্ত রুমের ময়লার স্তুপ থেকে জব্দ করেন। যা ছিলো বালিশ দিয়ে চাপা দেওয়া। বিষয়টি ধামা চাপা দেওয়ার জন্য উল্টো ওই ওয়ার্ডের আউটসোসির্ং ও সরকারি স্টাফরা ঘটনার কয়েকদিন পর আনসার সদস্য’র বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লেবার ওয়ার্ডে দুই আউটসোর্সিং কে শোকজ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ওয়ার্ড থেকে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: মো: হুসাইন সাফায়াত বলেন, লেবার ওয়ার্ডে দুই আউটসোসির্ংয়ে নিয়োজিত কর্মরত দুই মহিলা রূমানা ও পাপিয়াকে ওই ওয়ার্ড থেকে সরিয়া নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদেরকে শোকজ করা হয়। তিনি বলেন, একই সময়ে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিন সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন আগেই করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনের পর পরবর্তীতে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুমেক হাসপাতালের সূত্র মতে, লেবার ওয়ার্ডে কর্মরত আউটসোর্সিং রূমানা ও পাপিয়া বেগমকে শোকজ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ওয়ার্ড থেকে তাদেরকে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নেন। জানা যায়, আউট সোর্সিং রূমানা ও পাপিয়া আয়াকে দেওয়া হাসপাতালের সহকারি উপ-পরিচালক ডা: মো: নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী স্বাক্ষরতি এক কৈফয়ত তলবে উল্লেখ করা হয় আপনি লেবার ওয়ার্ডে ইউনিটে দেওয়া হয়। কিন্তু আপনার নামে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ আসছে যে, ওষুধ চুরি প্রভাব বিস্তার ( মাফিয়া চক্র) নিয়ন্ত্রণ এবং আনসার সদস্যদের নামে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো। যা আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহন নীতিমালা -২০১৮ এর পরিপন্থি। আপনি আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ব্যর্থ এবং দায়িত্ব্ পালনে ব্যর্থতার কারণে রোগীরা সঠিক তথ্য ও সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আপনার এহেন আচরনে হাসপাতাল প্রশাসন চরমভাবে বিব্রত। এই চিঠি পাওয়া তিনদিনে মধ্যে জবাব দেওয়া নির্দেশ দেওয়া হলো। এর আগে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ গত ৩১ মার্চ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এছাড়া আলাদা ভাবে খুলনা জেলা কমাড্যান্ট এর কার্যালয় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। তাদের তদন্ত কমিটি কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে, প্রতিবেদন যে কোন মুর্হুতে তাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেবেন। তাদের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পায়নি বলে ওই দপ্তরের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন। খুমেক হাসপাতাল সূত্র জানা যায়, ডিউটি কালীন সময়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লেবার ওয়ার্ডেও সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখা আনসার সদস্যগণের নির্ধারিত পোশাক (ইউনিফর্ম) পরিধান ব্যতিত লেবার ওয়ার্ডে ঘোরাঘুরি গল্প গুজব করা সহ আড্ডা দেওয়া ও মহিলা কর্মীদের ড্রেসরুমে উকিঝুকি মারা, সরকারি ডিস্ট্রিল ওয়াটার নিয়ে যাওয়ার সময় কর্মরত আউটসোর্সিং মহিলা কর্মচারীদ্বয়ের কর্তৃক বাধা দেওয়ায় আনসার সদস্যগণ গালিগালাজ করেন মর্মে অভিযোগ দাখিল করেন। কন্ট্রাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসিং’র আউটসোর্সিং কর্মচারি রুমানা ও পাপিয়াসহ ওই ওয়ার্ডে সরকারি স্টাফরা। এতে স্বাক্ষর করেন ওই ওয়ার্ডের বর্তমানে ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স ।
্উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ বিকালে খুমেক হাসপাতালের আবাসিক অফিসার ডাঃ সুমন রায়ের নেতৃত্বে আনসার সদস্যরা প্রসুতি বিভাগের একটি পরিত্যক্ত রুমের ময়লার স্তুপ থেকে ৪৯৫ টি ডিস্টিল ওয়াটার জব্দ করেন। যা ছিলো বালিশ দিয়ে চাপা দেওয়া। জব্দের সময়ে কন্ট্রাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসিং’র আউটসোর্সিং কর্মচারি রুমানা ও পাপিয়া তেড়ে আসে আনসার সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মিদের দিকে। কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ওয়ার্ডের সাব ইনচার্জ রঞ্জু মোহান্তি গণ-মাধ্যম কর্মিদের সাথে অসদাচরন করেন। এর কয়েকদিন পর যে যাদের বিরুদ্ধে ডিস্টিল ওয়াটার চুরির অভিযোগের তীর, তারাই উল্টো আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যাতে ওই ওষুধ চুরির মুল ঘটনানাটি আড়াল করা যায়। এই ঘটনার কয়েকদিন আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল থেকে ওষুধ চুরি করে পাচারের সময় হাসপাতালের ফ্রি সার্ভিস সালেহা বেগম ও তাঁর স্বামী আব্দুর রাজ্জাককে আটক করেছিলেন হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ওষুধ জব্দ করা হয়। পরে তাঁদের সোনাডাঙ্গা থানায় সোপর্দ করে মামলা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন) থেকে ওষুধ চুরি করে পাচারের সময় হাসপাতালে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাদেরকে আটক করেন। হাসপাতাল কতর্ৃৃপক্ষ সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে। পরে পুলিশ এসে তাদেরকে ওষুধসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: ইখতিয়ার উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।