টানা তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ : ৭৬ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ

# দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ফের খুলনা বিভাগে,
# খুলনা বিভাগের সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস, খুলনায় ৩৯.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস #
# অস্থির গরমে রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে, ৩-৪ দিন পর বৃষ্টির সু-সংবাদ #
মোঃ আশিকুর রহমান ঃ তাপমাত্রার পারদ থেমে নেই, দিন দিন বাড়ছেই। তাপপ্রবাহে পুড়ছে গোটা খুলনা অঞ্চল। সেই সাথে টানা তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। কখনো তীব্র আবার কখনো অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের বেশকিছু অঞ্চলের ওপর দিয়ে। টানা এতদিনের তাপপ্রবাহ আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ। এ অবস্থায় চলতি বছর দেশে গত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপপ্রবাহ। যা এপ্রিল মাসজুড়েই অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শুক্রবার সকালে ঢাকার আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে জানান, ১৯৪৮ সাল থেকে ইতিহাসে এবারই প্রথম দীর্ঘসময় ধরে তাপপ্রবাহ বইছে বাংলাদেশে। চলতি এপ্রিলে টানা ২৪ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
তীব্র গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা, অতিষ্ট হয়ে পড়েছে জনজীবন। টানা তাপদাহে অতিষ্ঠ এখানকার জনপদ। অসহ্য গরমে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে প্রাণীকুল, জীব-বৈচিত্র। দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের তাপে গরম অনুভূত হচ্ছে। তীব্র প্রখরতায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে চারপাশে। নিম্ন আয়ের শ্রমমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। বাইরে নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, ইজিবাইকচালক ও রিকশা ভ্যানচালকদের গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে। হা-হুতাশ করতে দেখা গেছে তাদেরকে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না ঘর থেকে, অনেকেই বের হচ্ছেন তাও আবার ছাতা নিয়ে।
নগরীর মোড়ে মোড়ে শরবত বিক্রি হচ্ছে, ব্যক্তিগতভাবে, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এই তীব্র তাপদাহে পথচারীদের মাঝে, শরবত ও স্যালাইন বিতরন অব্যহত রেখেছেন। গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। খুলনা শিশু হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে রোগীর চাপে অস্থির হয়ে ওঠেছেন চিকিৎসকগণ। অনেক হাসপাতালে শয্যার সংকট দেখা দিচ্ছে। তীব্র এই গরমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক স্থানে নলকূপ ও পাম্পে ঠিকমতো পানি উঠছে না। এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের আজ ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। খুলনা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২৬ এপ্রিল (শুক্রবার) খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এছাড়া যশোর জেলায় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রী, খুলনায় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রী, সাতক্ষীরায় ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি, মোংলায় ৪০ দশমিক ০ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রী এবং কয়রায় ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে তীব্র রোদ্দুর উপেক্ষা করে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অসহ্য গরমে নাজেহাল হয়ে পড়েছে জীব-বৈচিত্র অস্থির হয়ে ওঠে। রোদের উত্তাপে বাইরে বের হলেই যেন চোখ মুখ পুড়ে যাচ্ছে। ছুটে চলা কর্মব্যস্ত নগরবাসী, পথচারী, বিভিন্ন গাড়ীর চালকেরা, পেশাজীবি-দিনমজুর, নি¤œআয়ের, স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। অনেক পোষ্য প্রাণী গরম সইতে না পেরে আশপাশের ড্রেন বা জলাশয়ে নেমে পড়েছে। স্থানীয় এলাকার ছোট ছোট বাচ্চারা পানিতে ঝাপ দিচ্ছে শরীরকে শীতল করতে। তীব্র গরমের কারণে নগরীর সরকারি-বেসরকারি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত বাসা-বাড়ীতে বিরতিহীন ভাবে চলছে এসি, এয়ারকুলার, ফ্যান । সারা দিন রোদের উত্তাপে পড়ে পথচারীরা দেহের তৃষ্ণা মেটাতে পান করছেন ডাব, আখের রস, ঠান্ডা লেবু ও বেলের শরবত, ঠান্ডা পানীয়। নগরীর দৌলতপুরের ব্যবসায়ী হামিম জানান, একি কি গরম! বয়সে এমন গরম দেখিনি। গরমে কোথাও শান্তি মিলছে না। এটা আমাদের কর্মফল। গাছপালার সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে পৃথিবী উত্তপ্ত হচ্ছে। যে কারণে আমাদের বেশি বেশি করে গাছ লাগানো দরকার। একমাত্র সবুজ বনায়নই আমাদের এই খরার হাত হতে রক্ষা করতে পারে। কি আর করার ব্যবসার কাজে তো বাইরে যেতেই হবে। তবে বাইরে গেলে রোদে মনে হচ্ছে গায়ে কে যেন গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সিএনজি চালক মিজান জানান, গরমে গাড়ী চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। খুব গরম, শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে। শরীরে দরদর করে ঘাম ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই কি করবো গাড়ি তো চালাতেই তবে। কারণ প্রতিদিনের সংসার খরচ, গাড়ি ভাড়া, ছেলে মেয়েদের লেখাাপড়ার খরচ। নগরীরে রিকশাচালক কালাম জানান, সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়ে বেলা ১০টা পর্যন্ত তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। এরপর তাপ বাড়তে থাকে। গা পুড়তে শুরু করে। অসহ্য গরম। এই গরমে বার বার গলা শুকিয়ে আসছে। ঠিকমতো রিকশাও চালানো যায় না। বাতাসের সঙ্গে মনে হচ্ছে গরম ভাপ উড়ছে। বৃষ্টি হলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। নাগরিক নেতা শাহিন জামাল পন বলেন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে হবে। যে শহরে থাকবে পর্যাপ্ত গাছপালা। খুলনা শহর ঘুরে সড়কের পাশে ছায়া পাওয়ার মতো কোন গাছ পাওয়া কঠিন। এক সময় শহরে প্রচুর পুকুর ডোবা নালা ছিল। এখন তা খুঁজে পাওয়া যায় না। খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, জলাশয় ভরাট করা ও গাছপালা কেটে স্থাপনা গড়ে তোলাই প্রধানত গরম বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এছাড়া লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় গরম অনুভুত হচ্ছে বেশি। যেহেতু গরমকাল, তাই সাধারনত এপ্রিল ও মে মাসে গরমের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তবে বৃৃষ্টিপাত হলে গরমের অনুভূত কিছুটা কমবে। বৃষ্টিপাত কম থাকার কারনেই এমন গরম অনুভুত হচ্ছে। গতকাল খুলনা বিভাগের সর্ব্বোচ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং খুলনায় ৩৯.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।