স্থানীয় সংবাদ

পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর ৪০ গ্রাম প্লাবিত : রাস্তা-ঘাট ও মৎস্য ঘের সহ বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

এমপি রশীদুজ্জামানের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন

এম. মোসলেম উদ্দীন আহম্মেদ, পাইকগাছা প্রতিনিধি ঃ
পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ। বাঁধ ভেঙ্গে ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গিয়ে ও পানির ¯্রােতের সাথে ভেসে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে অনেক এলাকা। ৪ হাজার পুকুর-জলাশয় ও চিংড়ি ঘের ভেসে গিয়ে ৭২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে হিমশিম খাচ্ছেন পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে প্রাথমিক মেরামত করতে পারলেও কিছু কিছু এলাকার বাঁধ এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। অনেকেই বলছেন ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর ক্ষয়ক্ষতি আইলা’র ক্ষয়ক্ষতি ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রায় সবগুলো ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সোলাদানা ও দেলুটী ইউনিয়ন। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে মেরামত কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন। মূল ঘূণিঝড় আঘাত হানে রোববার রাত ১০-১১টার দিকে। প্রবল গতিবেগ নিয়ে ঘূর্ণিঝড় রেমাল রাত আড়াইটা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সোমবার সকালের দিকে আবহাওয়া কিছুটা পরিচ্ছন্ন দেখা গেলেও দুপুরের পর থেকে শুরু হয় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয় সোমবারের ঝড়-বৃষ্টি। এতে সাধারণ মানুষের চরম দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এদিকে রেমাল এর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদার বেড়িবাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী উপজেলার পৌরসভা সহ সবকটি ইউনিয়নে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পোল্ডার অভ্যন্তরে লবণ পানি ঢুকে পড়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে ৪০ থেকে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পৌরসভার শিববাটী এলাকার একাধিক স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে ভিতরে পানি ঢোকে। রাড়–লী ইউনিয়নের জেলে পল্লী সহ কয়েকটি স্থান থেকে এলাকায় পানি প্রবেশ করে। অনুরূপভাবে গড়ইখালী, লস্কর, গদাইপুর সহ অন্যান্য ইউনিয়নে বাঁধ ভেঙ্গে বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় উপজেলার সোলাদানা ও দেলুটী ইউনিয়ন। জেলা পরিষদ সদস্য রবিউল ইসলাম গাজী ও সিপিপি টিম লিডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর আঘাতে আইলার চেয়েও ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে সোলাদানা ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের বরই তলা সুধীরের বাড়ী, ভাঙ্গাড়িয়া, সোলাদানা বাজার সংলগ্ন নতুন গেট-পুরাতন গেট, হরিখালী, পশ্চিম কাইনমুখী, বেতবুনিয়া খেয়াঘাট ও সোনাখালী এলাকা সহ অসংখ্য স্থানে ওয়াপদার বাঁধ ভেঙ্গে ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানির প্রবল ¯্রােতে নতুন গেট ও পুরাতন গেট এলাকার প্রধান সড়কের পিচ ভেসে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে প্রধান সড়ক। সোলাদানা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ অসংখ্য শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান। এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে এ ইউনিয়নের কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত করেছেন বলে জানান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হক। অনুরূপভাবে দেলুটী ইউনিয়নের তেলিখালী, কালিনগর, দারুন মল্লিক, দেলুটী, জিরবুনিয়া, গেওয়াবুনিয়া, চকরিবকরি ও মধুখালী সহ কয়েকটি স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে ইউনিয়নের ১৫ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম জানান, ঝড়ে বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য খুঁটি ভেঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে ও তার ছিড়ে যায়। মঙ্গলবারের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলেও কিছু ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা রয়েছে যেখানে স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক জানান, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী উপজেলায় ৪ হাজার পুকুর জলাশয় ও মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কমপক্ষে ৭২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন সোলাদানা ও দেলুটী ইউনিয়ন পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ ও সড়ক মেরামত কাজ তদারকি করার মাধ্যমে এগিয়ে নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পাউবো’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এসএম রিফাত বিন রফিক, ওসি ওবাইদুর রহমান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মলঙ্গী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুল হাসান টিপু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনন্দ মোহন বিশ^াস, জেলা পরিষদ সদস্য রবিউল ইসলাম গাজীসহ আরো অনেকে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ প্রাথমিক মেরামত করা গেলেও কিছু এলাকার বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এসএম রিফাত বিন রফিক জানান, কি পরিমাণ বাঁধের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপনের কাজ চলমান রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ প্রাথমিক মেরামত করা হয়েছে, অবশিষ্ট বাঁধের কাজ দ্রুত মেরামত করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির নিরুপনের কাজ অব্যাহত রয়েছে। ঝড়ে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১ হাজার ২শ বসত ঘর সম্পূর্ণ এবং দেড় হাজার বসত বাড়ী আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা করছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় খাদ্য সহায়তা প্রদান সহ সবধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশা করছি সকলের প্রচেষ্টায় সবাই মিলে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠবো। সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান বলেন, ঝড়ের আগে থেকেই নির্বাচনী এলাকার দু’উপজেলায় অবস্থান করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্ষতিগ্রস্থদের সবধরণের সহায়তা ও সহযোগিতা করা হবে বলে স্থানীয় এ সংসদ সদস্য জানান।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button