শাহ্পুর পশুরহাটে ছোট ও মাঝারী গরুর চাহিদা বেশি
# পশুর হাটে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম বাড়তির অভিযোগ ক্রেতাদের #
# দিনজুড়ে সমগ্র হাট ছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনায় মুখরিত #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ ঈদের বাকি মাত্র ৩দিন। আগামী ১৭ জুন (সোমবার) পালিত হবে মুসলিম উম্মার সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা বা কোরবানীর ঈদ। মহান রবের সান্নিধ্যে আর হুকুম পালনে মুসলমানেরা পশু কোরবানীর মাধ্যমে আত্মত্যাগে বলিয়ান হয়ে পালন করবে পবিত্র এই উৎসব। ইতিমধ্যেই আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে খুলনার বৃহত্তম পশু কোরবানীর হাট জোড়াগেটসহ খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে পশু বিক্রির হাট। তাছাড়া খুলনা শহরের বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চল ডুমুরিয়া, শাহ্পুর, সাতক্ষীরা, তালা, আঠারো মাইল, চুকনগর, নোয়াপাড়া, জিয়ালা, বর্ণী, আন্দুলিয়া, জামিরা, ফুলতলা, আড়ংঘাটা, দিঘলিয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার হাট ও খামারগুলোতে ইতিমধ্যেই কোরবানী পশু কেনাবেচা শুরু হয়েছে।।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) খুলনার ডুমুরিয়ার শাহপুর পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে পিওর দেশি, ক্রস, জার্সি, শাহীওয়ালসহ বিভিন্ন জাতের গরু ও ছাগলের যথেষ্ট গরুর সররবাহ। সমগ্র হাট ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে বলে জানা গেছে, হাটে এবার বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারী গরুর চাহিদা বেশি। ঈদ নিকটে আসায় ক্রেতারা কোরবানী পশু কিনতে দিনজুড়ে হাটে ঘোরাাঘুরি করেছে, অনেক ক্রেতারাই তাদের সাধ্যমধ্য তাদের কোরবানীর পশু ক্রয় করেছে। হাটে আসা ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এই হাটটিতে পর্যাপ্ত কোরবানীর পশুর সরবরাহ থাকলেও দাম গত বছরের তুলনায় বাড়তি। তবে বিক্রেতারা বলছেন, বর্তমানে গরুর খাবারের দামসহ পরিচর্চার খরচ বহুগুনে বেড়েছে। ক্রেতারা বলছেন যে কোরবানী গরু গত বছর ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে, তা এবার ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দাম হাচ্ছে। ৯০ হাজার টাকার গরু দাম হাকাচ্ছে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ২ লক্ষ টাকার গরু চাওয়া হচ্ছে আড়াই লক্ষ ১০ হাজার টাকা মতো। তবে ছোট ও মাঝারী গরুর চাহিদা থাকায় বিক্রেতারা দাম বহুগুনে বেশি চাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেতা। অপর দিকে, যে খাসি গত বছর ১৮/২০ হাজার টাকায় বিক্রয় হয়েছে, তা এবারের হাটে ২৭/২৮ হাজার টাকার মতো হাচ্ছেন বিক্রেতারা।
হাট ঘুরে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষ্য শাহ্পুর কোরবানী পশুর হাটে ক্রেতাদের ছোট ও মাঝারী সাইজের গরুর প্রতি ঝোঁক বেশি। কারণ খামারিরা দ্রুত বর্ধণশীল বিদেশী জাতের বড় আকারের হাইব্রীড গরুর লালন পালন বেশি করে থাকেন। অতি বর্ধনশীল গরু আকারে বড় হওয়ার কারণে দাম বেশি পাওয়ার আশায় অনেক খামারিরা দেশি হতে বিদেশী গরু পালনে বেশি আগ্রহ দেখায়। অপরদিকে ক্রেতাগন তাদের পশু কেনার নির্দিষ্ট বাজেটের কারণে ছোট ও মাঝারী সাইজের গরুর প্রতি বেশি আগ্রহ থাকায়, বড় গরু কেনার প্রতি তেমন একটা ঝোক থাকে না। ডুমুরিয়া অঞ্চলের আন্দুলিয়া শাহাপুরের একাধিক গরু মালিক ও খামারির সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে ভারতীয় গরুর আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি গরুর চাহিদা বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া সরকারি ভাবে গ্রাম পর্যায়ে পশুপালনে সরকার বহুমুখি উদ্যোগ ও সুযোগ সুবিধা দিয়েছে খামারি বা কৃষকদের। যে কারণে অনেকেই এখন পশুপালনে বেশি আগ্রহী, বিশেষ করে গরু লালন-পালনে। বর্তমানে দেশি গরুর উপর ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি, তবে ছোট এবং মাঝারী সাইজের প্রতি। তবে বর্তমানে খাবারের দাম বেশি থাকায় গরু পালনে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে খামারীদের।
ডুমুরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকার খামারি রবিউল ইসলাম জানান, ঈদের আর মাত্র ৩দিন বাকি। ঈদ নিকটে আসায় হাটে খুলনার বিভিন্ন এলাকা হতে পশু ক্রয়ের জন্য ক্রেতারা আসছেন। ক্রেতারা গরু দেখছেন, দাম দর করছেন। তবে তারা দাম অনেক কম বলছেন। বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। বিশেষ করে খড়, কুড়া, খৈ, ভূষি ইত্যাদির। আমার খামারে কোরবানীর জন্য ১৫টি গুরু প্রস্তুত করেছিলাম। বাড়ী হতে ৭টি গরু বিক্রি হয়েছে, বাকি গরু হাটে নিয়ে এসেছি। হাটে প্রচুর ক্রেতার সমাগম, তবে দাম কম বলছে।
হাটে আসা পশু বিক্রেতা রহিম জানান, আমি ৩টা মাঝারী সাইজের দেশি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। অনেক ক্রেতাই আসছেন, দেখছেন পছন্দও হচ্ছে তাদের। তবে দাম দরে পরছে না। কারণ এমন দাম বলছে, তাতে দাম বালার উপায় নাই। তাছাড়া কোরবানীর পশুর বাড়তি খাওয়া আর যত্ম নিতে হয়। এমনিতেই খাবারের দাম বিশেষ করে কুড়া, খৈ, ভূষি, খড় ইত্যাদির দাম আকাশ ছোয়া। তারপর যে দাম বলছে গরুর পিছনে খরচের আসল টাকা তো উঠবেই না, বরং কষ্টই বৃথা যাবে।
ক্রেতা ফকির লিটন জানান, শাহ্পুর হাটে এসেছি কোরবানী পশু ক্রয়ের জন্য। হাটে পশুর ব্যপক সরবরাহ তবে ব্যাপারীরা দাম বেশি বলছে। গত বছর যে গরু ৮০ হাজার টাকায় কেনাগেছে, বর্তমানে সেই গরু ১ লক্ষ টাকার উপরে দাম চাচ্ছে। আমার দরকার ৮৫ হতে ৯০ কেজি মধ্যে একটা গরুর। এরপর তো আবার হাসিল খরচ, ঈদের আগ পর্যন্ত পরিচর্চা। তবে খাবারসহ অন্যান্য খরচের অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়তি যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
অপর ক্রেতা আলামিন জানান, হাটে কোরবানীর পশু যে দাম, কেনা তো দূরের কথা, দাম বলা যাচ্ছে না। কারন নিজে একটা গরু কোরবানী দেওয়া সম্ভব হয় না। ভাগে দিতে হয়। ভাগে দিতে গেলে এক লাখের নিচে গরু কেনা যায় না। গত বছর এক লাখে যে গরু কিনেছি, এবার শাহপুর হাটে তা চাইছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার মতো। কারণ অধিকাংশ গরুই ব্যাপারীর। তারা গ্রাম হতে সস্তায় কিনে এনে এখন আমাদের গলায় ছুরি ধরছে।
ক্রেতা আশিকুর রহমান (আপেল) জানান, দুপুরে দিকে গতকাল হাটে গিয়ে ছিলাম। আমার ৮০ হাজার টাকার মধ্যে একটা গরু দরকার। গোটা হাট ঘুরেছি, ৮০ হাজার টাকার গুরু দাম ব্যবসায়ীরা হাকাচ্ছে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার মতো। হাটে ক্রেতার তুলনায় পশু বেশি থাকায় ব্যবসায়ীরা দাম ইচ্ছা মতো হাকাচ্ছে। হাটে মাঝারী ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে।
দৌলতপুর পাবলা এলাকার বাসিন্দা ইমন জানান, কোরবানী আল্লাহর জন্য। আমার সাধ্যের মধ্যে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা গরু কিনলাম। হাটে পশুর ক্রেতা। ছোট এবং মাঝারী গরুর চাহিদা অনেক বেশি। এ কারণে ক্রেতারা ছোট ও মাঝারী গরুর দাম একটু বেশি চাচ্ছে।
কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু বলেন, গো-খাবারের দাম একটু উর্ধ্বমুখি। আর আামদের দেশে ব্যবসার কোনো নীতি নেই, লাভটাই আসল। খাবারের দাম দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা একটু দাম বেশি যাচ্ছে। যেহেতু পুরা শহরে এখনো হাট জমে উঠেনি। বিভিন্ন এলাকা হতে শহরে গরু এখনো পুরাদমে আমদানি শুরুই হয়নি। শহরের বিভিন্ন হাটে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরু শহর মুখি হলে দাম অনেকটাই হ্রাস পাবে বলে মনে হয়।