‘কথা বলা গাছ’ কেটে ফেললেন স্থানীয়রা
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ কেটে ফেলা হচ্ছে ‘কথা বলতে’ পারা গাছটি ‘কথা বলছে গাছ’ কান পাতলে ভেতর থেকে ভেসে আসছে নারী কণ্ঠ। এমন খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে দলে দলে মানুষ আসেন, কান পাতেন গাছে নারী কণ্ঠ শোনার জন্য। বিষয়টিকে সম্পূর্ণ গুজব দাবি করে আলোচিত এই গাছটি শনিবার (২২ জুন) দুপুরে কেটে ফেলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসময় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (১৪ জুন) গর্জিনা গ্রামের সৌদি প্রবাসী সবুর মিয়ার বাগান থেকে একটি একাশিয়া গাছ (স্থানীয়দের ভাষায় লম্বু গাছ) কাটতে যায় ওই গ্রামের জুয়েল মোল্লার ছেলে নীরবসহ (১০) কয়েকজন শিশু। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে গাছের গায়ে আঘাত করলে গাছ কথা বলে উঠে। এ সময় শিশুরা ভয়ে বাড়ি গিয়ে পরিবারের লোকজনকে জানালে তারা গাছটি দেখতে আসেন। পরে গাছে কান পাতলে ভেতর থেকে আওয়াজ শুনতে পান বলে দাবি করেন। মুহূর্তেই এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোড়ন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসেন গাছটি দেখতে। এর মধ্যে, অনেকেই গাছের কথা শুনতে পেয়েছেন বলে দাবি করেন। অনেকেই নিজেদের মনের ইচ্ছা পূরর্ণে মানত করতেও শুরু করেন।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার দুপুরে রাঘদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান টুটুলের উপস্থিতে কেটে ফেলা হয় আলোচিত গাছটি। এ সময় ভীর করেন স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। গাছটি কাটার সময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মুকসুদপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম এবং প্রচুর সংখ্যক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান টুটুল বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে গাছে কথা বলে এমন বিভ্রান্তমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছিল। আসলে গাছ কোনো কথা বলে না। লম্বা হওয়ায় বাতাসে যখন বাঁধে তখন গাছে একটা শব্দ হয়। কেউ কেউ মনে করছেন গাছে কথা বলছে। এটা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক তথ্য। আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনসহ এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমরা গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেই।’
তিনি আরও বলেন, আমরা গাছের মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে বুঝানো হয়েছে। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। মালিকও চান না এখানে জনসমাগম হোক, তাই গাছটি কাটা হয়েছে।’
মুকসুদপুর থানার ওসি মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গ্রামবাসীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে গাছটি কেটে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয় সেজন্য আমারা উপস্থিত ছিলাম।’
গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শুকলাল বিশ্বাস বলেন, ‘গাছে কথা বলে এটা স্রেফ একটি গুজব। উদ্ভিদের প্রাণ আছে, কোষ আছে কিন্তু কথা বলার মতো কোনো ভোকাল সিস্টেম বা স্বরযন্ত্র নেই। তাই উদ্ভিদের পক্ষে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। বাতাসের কারণে বিভিন্ন ধরনের শব্দ হতে হতে পারে। শব্দ কখনো ভাষা হতে পারে না। তাই এটা সম্পূর্ণ গুজব ছাড়া কিছুই না।