স্থানীয় সংবাদ

মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ওপর ভাগ্য নির্ধারণ হবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী মহিউদ্দিন আহমেদ ক্ষতিপূরণ পাবেন কিনা

# জীবনের শেষ লগ্নেও আজও আমার বাবা বুঁকবেঁধে আছেন কখন এই মামলা নিষ্পত্তি হবে #

যশোর ব্যুরো ঃ জীবনের শেষ লগ্নেও আজও আমার বাবা বুকবেঁধে আছেন কখন এই মামলা নিষ্পত্তি হবে। কথাগুলো বলছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীন আহমেদ এর বড় ছেলে আসিফ শাহারিয়ার সৌম্য। তিনি জানান, ১৯৮৫ সালে রাজ বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীন আহমেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত যশোরের শহীদ মশিউর রহমান কলেজে এলএলবিতে ভর্তি হন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীন আহমেদ। দুই বছর মেয়াদি পাস কোর্সে ১৯৮৮ সালে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষার পর পরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর এলএলবি পরীক্ষা এবং খাতা মূল্যায়ন নিয়ে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাবির সিন্ডিকেট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই বছরের ১৫ ফেব্র”য়ারি প্রতিবেদন দেন তদন্ত কমিটি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গুর”তর অসদাচরণ, অবহেলা, দায়িত্বহীনতার দায়ে রাবির আইন বিভাগের দুই শিক্ষককে যথাক্রমে ৭ ও ১২ বছরের জন্য খাতা দেখা থেকে বিরত রাখতে নির্দেশ দেন। একই বছরের ৬ এপ্রিল পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলে আমার বাবা, মহিউদ্দীন আহমেদকে অকৃতকার্য দেখানো হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি দেওয়ানি কার্যবিধি এবং তামাদি আইন বিষয়ে ২৫ নম্বরের মধ্যে তিনি ২৪ পেয়েছেন। খাতায় ১ নম্বরের জন্য অকৃতকার্য হওয়ায় তিনি এ বিষয়ের উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই সময় তাকে জানায় উত্তরপত্র (পরীক্ষার খাতা) বিক্রি হয়ে গেছে। এ নিয়ে একই বছরের শেষ দিকে তিনি যশোরের সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা করেন বাবা। ১৯৯০ সালের ১৯ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দিয়ে রায় দেন আদালত। এ রায়ের বির”দ্ধে ১৯৯১ সালে যশোরের জেলা জজ আদালতে আপিল করেন রাবি কর্তৃপক্ষ। ১৯৯৩ সালের ২৮ ফেব্র”য়ারি রাবির আপিল খারিজ করে দেন আদালত। পরে এ রায়ের বির”দ্ধে (সিভিল রিভিশন) হাইকোর্টে আবেদন করেন রাবি। এর ৬ বছর পর অর্থাৎ১৯৯৯ সালে হাইকোর্ট রাবির সিভিল রিভিশনটি খারিজ করে দিয়ে জেলা জজ আদালতের রায় বহাল রাখেন। এ রায়ের পর রাবি কর্তৃপক্ষ এলএলবির চারটি বিষয়ের উত্তরপত্রে আমার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদের প্রাপ্ত নম্বর গড় করে তাকে কৃতকার্য দেখায়। ২০০১ সালে তাকে এলএলবির সনদও দেওয়া হয়। এরপর মহিউদ্দিন আহমেদ ২০০২ সালের ২২ জুন রাবি কর্তৃপক্ষের কাছে মামলার খরচ ও ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লাখ টাকা দাবি করে চিঠি দেন। একই বছরের ২৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানায়, হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তাকে জানানো হবে। এ অবস্থায় আমার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে যশোর বারে আইন পেশায় যুক্ত হন। কিন্তু এরই মধ্যে ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট ছয়বার ব্রেইন স্ট্রোক আক্রান্ত হন তিনি। কয়েক দফা ব্রেইন স্ট্রোকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এরপর ক্ষতিপূরণের দাবি নিয়ে বিভিন্ন সময় রাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত তাকে কিছুই জানানো হয়নি। বিষয়টির সুরাহা করতে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর, ৫ নভেম্বর, ২০২০ সালের ৮ ফেব্র¤œয়ারি, ১৮ মার্চ রাবি রেজিস্ট্রারের দপ্তরেও আবেদন করেন ,আমার বাবা। প্রতিকার না পেয়ে ২০২০ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনেও আবেদন করেন আমার বাবা মহিউদ্দিন। আমার বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মঞ্জুরি কমিশিন রাবি কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়। তাতেও কোনো সাড়া না পাওয়ায় ২০২০ সালে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান আমার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদকে। নোটিশের পাওয়ার পরও ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনোরকম পদক্ষেপ না নেওয়ায় ২০২১ সালে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করেন আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমেদ। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে তাকে ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে ওই বছরের ২১ নভেম্বর হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে র”ল জারি করেন। র”লের শুনানি শেষে গত বছর২০২৩ সালের ৩ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামর”ল কাদের ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় প্রদান করেন। রায়ে আমার বাবা মুন্সি মহিউদ্দিন আহম্মেদকে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আদেশের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে রাবি কর্তৃপক্ষতে ক্ষতিপূরণের এ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হলে ৫ শতাংশ হারে ১৮ লাখ টাকার বার্ষিক সুদ দিতে হবে। এই রায়ের বির”দ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে, যা চেম্বার জজ আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি শেষে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কর্তৃপক্ষের করা লিভ টু আপিল আবেদনের ওপর ২০২৪ সালের ১০ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ধার্য করেছিলেন। অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেই চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হবে যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সি মহিউদ্দীন আহমেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন কিনা। এ প্রসঙ্গে ভুক্তভুগি মুক্তিযোদ্ধা মুন্সি মহিউদ্দিন আহমেদ এর বড় পুত্র আসিফ শাহরিয়ার সৌম্য আরো বলেন,বাবার শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট সংকটাপন্ন ও আমরা উদ্বিগ্ন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর মামলা পরিচালনার জন্য টাকার অভাব হয় না, যত অজুহাত আমার বাবার ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমার প্রশ্ন, মহামান্য হাইকোর্টের রায় এবং একজন বীরমুক্তিযোদ্ধার “ক্ষতিপূরণ” কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে উপেক্ষিত।দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলা নিয়ে শুধুই এটুকু বলতে চায় বিজ্ঞ আদালত মামলাটি দ্র”ত নিষ্পত্তি করে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার দাবির উপরে যথার্থ বিচার করে দেশ ও জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করবেন। জীবনের শেষ লগ্নেও আজও আমার বাবা বুঁকবেঁধে আছেন কখন এই মামলা নিষ্পত্তি হবে আর সন্তান হিসাবে আমি নিজেও খুব অসহায়। কারণ বাবা যখন মামলার অগ্রগতি আমার কাছে জিজ্ঞাসা করেন, আমি তাঁকে সান্তনা দেই কিন্তু এভাবে আর কতদিন?

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button