রূপসায় ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিক কেউই রেহাই পায়নি

# আতংকে সাধারণ মানুষ #
# জবাই করে হত্যাসহ, বাড়িতে বাড়িতে ও বিভিন্ন এলাকায় ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর রূপসার অনেক পরিবার এখনো ঘর-বাড়ি ছাড়া। অনেকে হারিয়েছে তাদের জায়গা জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি একটি হত্যাকা- ও কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনাও ঘটেছে। রেহাই পায়নি ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সাংবাদিক পরিবার। তবে বর্তমানে সেনাবাহিনী টহলের পর সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরলেও চলছে অতি গোপনে নিরব চাঁদাবাজি। আর এসবের দায়ভার প্রতিপক্ষ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করলেও সরেজমিনে মিলেছে অন্যচিত্র। অধিকাংশ সহিংস ঘটনা ব্যক্তি আক্রোশে ঘটছে বলে অনুসন্ধানী সুত্র থেকে জানা গেছে। (৫ আগষ্ট) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পদত্যাগের পর সারা দেশের ন্যায় রূপসায় হাজার হাজার জনতা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নিতে রাস্তায় নেমে আসে। সাধারণ মানুষ যখন উল্লাসে ব্যস্ত ঠিক সেই মুহুর্তে তৎপর হয় একটি সুযোগ সন্ধানী মহল। তারা বিএনপির নেতা কর্মী পরিচয় দিয়ে শুরু করে ব্যাপক লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ। যার ধারাবাহিকতায় রূপসার রহিমনগর এলাকার একটি কুচক্রী মহল ৪০-৫০ জনের একটি সংঘবদ্ধ চিহ্নিত সন্ত্রাসী দল ওইদিন আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে নৈহাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বুলবুলের বাড়ির মেইন গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে প্রথমে ছোট ঘরের দরজা ভেঙে দুইটি মটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। উঠানে থাকা পানির ট্যাংকি কুপিয়ে বিনষ্ট করা হয়, দোতলা বাড়ির নিচতলা ও দোতলার প্রতিটি রুমের দামি মালামাল ভাংচুর করে তছনছ করে দেয়। এসময় ইউপি চেয়ারম্যানের রুমের আলমারি ভেঙ্গে ইটের ভাটার নগদ মোটা অংকের টাকা, স্বর্ণ সহ বিভিন্ন দামি মালামাল নিয়ে যাওয়ার মুহুর্তে আগুন দিয়ে সবকিছু জ্বালিয়ে দেয়। এরপর রাতে তারা দৈনিক প্রবাহ’র সাংবাদিক বেনজীর হোসেনের রূপসা তালিমপুর মিনাবাড়ী রোড সংলগ্ন মেসার্স ফাবিহা স্টোরের তালা ভেঙ্গে নগদ ৩০-৪০ হাজার টাকা, চালের বস্তা ১২/১৩টি মোট ৪ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এদিকে পূর্ব রূপসা ঘাটের তেল ব্যবসায়ী মো. সেলিম বেপারিকে মারধর করে উশৃংখল একদল যুবক তার তেলের দোকান কুপিয়ে ও পিটিয়ে ভাংচুর করে। তখন তেলের বাক্স নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, ৬’টি চেয়ার ভাংচুর করে, দোকানের বিভিন্ন যায়গায় কুপানো হয়। সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করে বিনষ্ট করে। তারা যাওয়ার মুহুর্তে নগদ টাকা, ইঞ্জিন চালিত নৌকার বিক্রয়ের তেল, গ্যাস সিলিন্ডার সহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায়। তালিমপুর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মিজানের বাড়ি ভাংচুর করে। এমনকি তার আপন ভাই রিয়াজুলকে তুলে নিয়ে নৃশংস ভাবে জবাই করে হত্যা করে। মো. জাকির হোসেনের চায়ের দোকানের পানির ড্রাম, দুইটি চেয়ার ভাংচুর করে দোকানের ঝাপ কুপানো হয়। পূর্ব রূপসা ঘাটের ভাতের হোটেলের আব্দুল লতিফ শিকদারকে তার নিজের সন্তানের সামনে এক মাতাল অহেতুক চড়থাপ্পড় মেরে কাঠের লাঠি হাতে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে প্রকাশ্যে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। পরে সুলতান মোল্লার বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পায়। চায়ের দোকানের আবুল হোসেন বেপারিকে মারধর করে ঝাপের লাঠি, দোকানের ভিতর থেকে সিগারেট, চা-সিগারেট বিক্রির টাকা, চায়ের ট্রে-নিয়ে যায়। মো. আলামিন হাওলাদারের চা-পানের দোকান ভাংচুর করে লুটপাট করা হয়। মো. শহিদ শেখের চা-পানের দোকানের সামনে এসে সন্ত্রাসীরা লাঠি দিয়ে পিটায়। এসকল ঘটনা আতংক সৃষ্টি করতে এধরণের সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানো হয়েছে বলে সাধারণ মানুষ জানান। অসহায় হকারদের দোকান সরিয়ে অন্যদের দোকান দখলে নেওয়া হয় বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এতে করে হকাররা রয়েছে আতংকে। নৈহাটীর খোড়ার বটতলাস্থ রবিউলের দু’টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসী দল তালাবদ্ধ করে দখলে নেয়। পরে তালা ভেঙ্গে দু’টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল মুক্ত করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা । ইলাইপুর আনসার ক্যাম্পের সন্নিকটে মেইন সড়কের পাশে গোলাম সরোয়ার হাওলাদারের মৎস্য ঘের থেকে সন্ত্রাসীরা মাছ মেরে নিয়ে যায়। ইলাইপুরস্থ মাকামের মোড় এলাকার একটি অসহায় পরিবারের বাড়ি ভাংচুর করে দুইটি ছাগল সন্ত্রাসীরা নিয়ে নিজেরা রান্না করে খেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ওই পরিবারের মালামাল নিয়ে সকলে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছে। নৈহাটী আলো ফুটবে মো. সালেহীন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সন্ত্রাসীরা ভাংচুর করে দামি মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। এমনকি রাত হলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত দল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যার ফলে সব এলাকার সাধারণ মানুষ জানমালের নিরাপত্তায় রাত জেগে গ্রাম পাহারাও দিচ্ছে। এভাবে রূপসা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুচক্রী মহল তাদের নিজেদের ফায়দা লুটতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যা সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। অপরদিকে পূর্ব রূপসায় বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তেল ব্যবসায়ী সেলিম বেপারি বলেন, আমাকে সন্ত্রাসীরা মারধর করে। দোকান থেকে নগদ টাকা, ৪’শ লিটার ডিজেল সহ বিভিন্ন দামি মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় দোকানঘর কুপানো হয় ও ভাংচুর করে তেলের বাক্স নদীতে ফেলে দেয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রূপসা কলেজের সার্বিক দ্বায়িত্বশীল ছাত্র মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ৫ আগষ্ট সৈরাচারী সরকার পতনের পরে স্বল্প সময়ের ভিতরে কিছু স্বার্থবাদী লোকজন রূপসা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, বাড়িঘর ভাংচুর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, ঘের দখল, জ্বালাও পোড়াও, দখল দারিত্ব ও বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। এর প্রতিবাদে ৫ তারিখ থেকে শুরু হয়ে এখনও পর্যন্ত এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। রূপসায় এ ধরনের অন্যায় হলে ছাত্রসমাজ সাথে সাথে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। রূপসা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো. সাইফুর রহমান মোল্লা বলেন, ৫ তারিখে সরকার পতনের পর উৎসুক জনতার সাথে মিশে কিছু উশৃংখল অতিউৎসাহীরা এবং আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, চাঁদাবাজি, দখল দারিত্ব করছে। যখন যেভাবে পারছি আমরা সাধারণ মানুষের পাশে সহযোগিতা করছি। যারা এগুলো করছে তারা আমাদের দলের কেউ না। দলের কেউ যদি এসবের সাথে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নৈহাটী ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বুলবুল বলেন, রহিমনগর এলাকার সন্ত্রাসী আজিজ, কামরান ও জহিরের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একদল সন্ত্রাস দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র, আগ্নেঅস্ত্র ও লাঠি-সোঁটা নিয়ে হটাৎ করে আমার বাড়িতে আক্রমণ করে। আমার রুমে আলমারিতে থাকা নগদ ৭-৮ লাখ টাকা ও ৫-৬ ভরি সোনা সহ দামি মালামাল নিয়ে যায়। যাওয়ার মুহুর্তে ফ্রিজ এবং বিভিন্ন আসবাবপত্র ও দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় এবং ভাংচুর করে।


