খুলনায়রোপা আমন চাষের কর্মযজ্ঞে ‘ব্যস্ত চাষীরা’

# খুলনাঞ্চলে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮০২ হেক্টর জমি
# সর্বশেষ তথ্যনুসারে আবাদের অগ্রগতি ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমি # লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে ৮ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৪০ মেঃ টন চাউল উৎপাদন হবে
মোঃ আশিকুর রহমান ঃ খুলনাঞ্চলের কৃষকের ব্যস্ততা এখন রোপা আমন ধানের আবাদ ঘিরে। চলছে চারা রোপনের মহা কর্মযজ্ঞ। যুগের পর যুগ ধরে এতদাঞ্চলের চাষিরা প্রকৃতির সাথে লড়াই করে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের জীবন-জীবিকার যুদ্ধ। প্রাকৃতিক দূর্যোগ তথা অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, কুয়াশা, পোকা-মাড়কের আক্রমন বিবিধ প্রতিকূলতা পার করে সারা বছর ধরে নানামুখি কৃষির চাষাবাদ অব্যহত রেখে চলেছে কৃষকেরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল সুত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের অধিভূক্ত ৪টি জেলা রয়েছে। খুলনা জেলার আওতায় রয়েছে মেট্রো দৌলতপুর, মেট্রো লবণচরাসহ রুপসা, বটিয়াঘাটা, দিঘলিয়া, ফুলতলা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা, বাগেরহাট জেলায় আওতায় রয়েছে বাগেরহাট সদর, ফকিরহাট, মোল্লা হাট, রামপাল, কচুয়া, মোড়লগজ্ঞ, শরনখোলা, মোংলা ও চিতলমারী উপজেলা, সাতক্ষীরা জেলার আওতায় রয়েছে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, তালা, দেবহাটা, কালিগজ্ঞ, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা এবং নড়াইল জেলার আওতায় রয়েছে নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে খুলনাঞ্চলের ৪ জেলার রোপা আমন (হাইব্রিড,উফশী ও স্থানীয় জাতের) আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮০২ হেক্টর জমি। যার মধ্যে খুলনার লক্ষ্যমাত্রা ৯৪ হাজার ৮১০ হেক্টর, বাগেরহাট ৭৩ হাজার ৩২২ হেক্টর, সাতক্ষীরা ৮৮ হাজার ৭৭০ হেক্টর ও নড়াইল জেলায় ৪২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে উপরোক্ত ৪ জেলায় রোপা আমন ধানের আবাদের অগ্রগতি হয়েছে ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে, যার হার ৯৩%। আশাকরা যাচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে রোপা আমন আবাদের অগ্রগতি শতভাগ সম্পন্ন হবে। একই সাথে আশা করা যাচ্ছে আবহাওয়াসহ সার্বিক দিক প্রতিকূলে থাকলে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে খুলনাঞ্চরে ৮ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৪০ মেঃ টন চাউল উৎপাদন সম্ভব হবে। খুলনাঞ্চলের উপজেলা ডুমুরিয়া, দিঘলিয়ারসহ ওই চার জেলার অধিভুক্ত বেশ কয়েকটি উপজেলার সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকেরা এখন চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন বোরো ধানের বীজতলা প্রস্তুতি। ওই সকল এলাকার প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকেরা কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই তারা তাদের জমিতে রোপা আমন ধানের রোপনের কর্মযজ্ঞ শেষ করেছে, কোথা কোথাও আবাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টিপাতের হার বেশি থাকায় তারা রোপা আমন ধানের চাষাবাদের কাজ স্বস্তি বোধ করেছেন।
নড়াইল কালিয়া উপজেলার জোকারচর গ্রামের কৃষক তৈয়েবুর কাজী জানান, এবার সাড়ে ৩ একর জমিতে রোপা আমানের আবাদ করেছি। এখানে উফশি চিকন বিনা-১৭, বিনা-৭, ব্রি-ধান ৪৯, এবং হাইব্রীড বেয়ার-১০, বেয়ার- ১১, ধানি গোল্ড, জাতের চারা রোপন করেছেন। কালিয়া কৃষি অফিস হতে বীজ ও সার দিয়ে সহয়তা করেছে। এবার বিগত বছর হতে বেশ বৃষ্টিপাত ভালো হয়েছে। যে কারণে আমন রোপনে বেশ স্বস্তি পেয়েছি। তবে বৃষ্টি বিকল্প হিসাবে সেচ ব্যবস্থা ও রেখেছি। আশাকরি লক্ষ্যামাত্রা পূরণে সক্ষম হবো।
কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আমিরুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে কালিয়া উপজেলার সালামাবাদ ইউনিয়নের ধুসহাটি ব্লকের রোপা আমন ধানের রোপন কর্মযজ্ঞ চলছে। এই ব্লকের প্রায় জমিতে রোপনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। কিছু অংশ বাকি আছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে। উপজেলা কৃষি অফিস হতে কৃষকদের বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এই ব্লকে উফশি চিকন বিনা-১৭, বিনা-৭, ব্রি-ধান ৪৯, ব্রি-ধান- ৮৭, ব্রি-ধান ৫১ ও ৫২, সুবর্ণা-৩ এবং হাইব্রীড বেয়ার-১০, বেয়ার- ১১, ধানি গোল্ড জাতের চাষা রোপন করা হয়েছে। আশাকরি আবহওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হবো।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কিশোর আহম্মেদ জানান, দিঘলিয়া উপজেলাতে চলতি অর্থবছরে ১৯৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমান ধানের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যার বাস্তবায়ন হয়েছে ১৮৫০ হেক্টর জমিতে। বাকি অংশ দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে। তিনি আরো জানান, কৃষকদের মাঝে নতুন নতুন জাত যেমন (ব্রিধান-১০৩) সম্প্রসারণ করেছি এবং সার্বক্ষনিক প্রযুক্তিগত সহয়তা দিচ্ছি। আশাকরি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হবো। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চল খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক বিভাষ চন্দ্র সাহা জানান, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে খুলনাঞ্চলের ৪ জেলার রোপা আমন (হাইব্রিড,উফশী ও স্থানীয় জাতের) আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮০২ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে উপরোক্ত ৪ জেলায় রোপা আমন ধানের আবাদের অগ্রগতি হয়েছে ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে, যার হার ৯৩%। আশাকরা যাচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে রোপা আমন আবাদের অগ্রগতি শতভাগ সম্পন্ন হবে। একই সাথে আশা করা যাচ্ছে আবহাওয়াসহ সার্বিক দিক প্রতিকূলে থাকলে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে খুলনাঞ্চরে ৮ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৪০ মেঃ টন চাউল উৎপাদন সম্ভব হবে।