খুলনায় হঠাৎ করেই পাসপোর্ট তৈরীর হিড়িক

স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে ফরম জমার সংখ্যা
অধিকাংশই সনাতন ধর্মাবলম্বী
আনিছুর রহমান কবির ঃ খুলনায় পাসপোর্ট তৈরির হিড়িক পড়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে ফরম জমার সংখ্যা। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯ টায় পর্যন্ত কাজ করেও শেষ হচ্ছে না। গত ৫ই আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্ম বিরতি ঘোষণা করে। এতে করে সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে। মসজিদ- মন্দিরে পাহারা দিতে শুরু করে মাদ্রাসার ছাত্র থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ। অপরদিকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের নেতা ও আমলাদের দেশত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। তবে দেশের পরিস্থিতি শান্ত এবং সুষ্ঠু থাকা সত্ত্বেও, গত ১৮ আগস্ট থেকে হঠাৎ করেই খুলনায় পাসপোর্ট তৈরির হিড়িক পড়ে। প্রতিদিনই বাড়ছে এর সংখ্যা। প্রতিদিন ৮ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত কাজ করেও এত ভিড় সামাল দিতে পারছে না খুলনা পাসপোর্ট অফিস। তবে পাসপোর্ট করতে আসা অধিকাংশই সনাতন ধর্মাবলম্বী, আর এ নিয়ে জনমালের নানা কৌতুহল দেখা দিয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের এক হিসাব মতে জানা যায়, স্বাভাবিক কার্যক্রম যখন চলে তখন প্রতিমাসে গড়ে জমা হয় ৫ থেকে ৬ হাজার। ৫ আগস্ট থেকে ১৭ ই আগস্ট পর্যন্ত পাসপোর্ট জমা পড়েছে ১৫০০, অপরদিকে ১৮ই আগস্ট থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত জমা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার যার অধিকাংশই ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বী।
সাত বছরের শিশু অন্বেষা বলেন, সকাল ছয়টায় আম্মুর সাথে এসেছি এখন ১২ টা বাজে এখনো পর্যন্ত ভিতরে ঢুকতে পারিনি ।
শুক্তো রানী ও দীপা রানী বলেন, ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জন হিন্দু লাইনে দাঁড়িয়ে আছে এটা তো দেখাই যাচ্ছে। ফরম জমা দিতে আসা অপর এক নারী বলেন, ভোর চারটায় এসেছি এখন একটা বাজে এখনো পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। তবে যারা আসছে তাদের অধিকাংশই ভারতে যাবেন, কেউ ডাক্তার দেখাতে, কেউ বেড়াতে, কেউ আবার মার্কেট করতে। সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা মেয়ের পাসপোর্ট করতে এসে বলেন যে দীর্ঘ লাইন দেখলাম তার অধিকাংশই হিন্দু।কৌতুহলবশতঃ আমি অনেককে জিজ্ঞেস করেছি, তারা এত একসাথে কেন পাসপোর্ট করতে এসেছে, কোন ভয় আছে কিনা, সকলেই বলেছে না, আমরা ঘুরতে যাব ,বাংলাদেশে আমরা ভালো আছি, খুলনা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার কুন্ডু বলেন, এদেশ আমাদের, এদেশে জন্মগ্রহণ করেছি । এদেশ আমাদের মাতৃভূমি এদেশ আমাদের মা। তবে আমাদের দেশটাকে কুসংস্কার ও গুজবমুক্ত করতে হবে। ৫ তারিখের পর মানুষের মধ্যে একটি আতঙ্ক বিরাজ করলেও , নিরাপত্তার স্বার্থে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পাহারা দিয়েছে আমাদের মন্দির, এতে করে আস্তে আস্তে দূরবিভূত হচ্ছে ভয়। তবে একসাথে এত হিন্দু কেন পাসপোর্ট করতেছে এটা আসলে আমার জানা নেই, হয়তো বা সামনে পূজা উদযাপন করতে যাচ্ছে। এবিষয়ে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, সব ধর্মের মানুষদের আশ্বস্ত করতে হবে, বাংলাদেশ একটি নিরাপদ আশ্রয় স্থান। এখানে যেন গুজবে ভয় না পেয়ে কেউ আতঙ্কিত না হয় এ বিষয়ে সকল প্রশাসনের সাংবাদিকসহ সকলকে এই বিষয়টি নজরে রাখতে হবে।
খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম যখন চলে তখন প্রতিমাসে গড়ে ফরম জমা হয় ৫ থেকে ৬ হাজার। ৫ই আগস্ট থেকে ১৭ ই আগস্ট পর্যন্ত পাসপোর্ট জমা পড়েছে ১৫০০, অপরদিকে ১৮ই আগস্ট থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত জমা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার যার অধিকাংশই ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বী। হিসাব করলে বলা যায় প্রায় ৯০% সনাতন ধর্মাবলম্বী তার মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। অপরদিকে প্রতিদিন যে পরিমাণ গ্রাহক আসছে পাসপোর্ট করতে তাদের ভিড় সামাল দিতে রাত ৯ টা পর্যন্ত কাজ করলেও আমরা শেষ করতে পারছি না। সাধারণ মানুষের দাবি খুব দ্রুতই গুজব ও কুসংস্কার থেকে ফিরে আসতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।