খুলনায় বিএনপি নেতা বকুলের বাড়ি হামলা ভাংচুর মামলায় সাবেক দু’ এমপি ও ১৬ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৯৮ জন আসামী

আসামী না দেয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল ইসলাম, ডিসি মোল্লা জাহাঙ্গীর, ডিসি (সিটিএসবি) রাশেদা বেগম, তৎকালীন এডিসি সোনালী সেনসহ পুলিশের ১৬ কর্মকর্তা, সাবেক এমপি এসএম কামাল হোসেন ও মন্নুজান সুফিয়ানসহ ৯৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে যে ওয়ার্ডে বকুলের বাড়ি সেই ওয়ার্ডের বাসিন্দা ১০নং ওয়ার্ড আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাজী তালাত হোসেন কাউট, সাঃ সম্পাদক ইমরুল ইসলাম ও থানা কমিটির সাঃ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বাশার, ১১নং ওয়ার্ডের আ’লীগ নেতা ইলিয়াস শিকদার আসামী না হওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন বাদী হয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আল আমিন মামলাটি আমলে নিয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা নির্দেশ প্রদান করেছে। ঘটনার ৬ বছর পর এ মামলা হলো। এ মামলার আসামীরা হলেন, কেএমপির তৎকালীন এডিশনাল কমিশনার কেএমপি সরদার রকিবুল ইসলাম (৫০) (বর্তমানে সরকারের আদেশে বর্তমানে বাধ্যতামূলক অবসরে), তৎকালীন ডিসি (নর্থ) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন, ডিসি (সিটিএসবি) রাশিদা বেগম, তৎকালীন এসি সোনালী সেন, তৎকালীন এডিসি (সিটিএসবি) মনিরা খাতুন, তৎকালীন এসি ভাস্কর সাহা, তৎকালীন ডিবির ওসি মিজান, তৎকালীন এস আই শওকত (ডিবি), তৎকালীন কনস্টেবল সানা মিয়া (ডিবি), খালিশপুর থানার তৎকালীন ওসি সরদার মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন এস আই মিঠু দত্ত, তৎকালীন এ এস আই সঞ্জয়, এএসআই কুমারেশ, তৎকালীন এস আই সেলিম হোসেন (ডিবি), তৎকালীন এস আই রতেœশ্বর মন্ডল, তৎকালীন এসআই অরূপ কুমার মন্ডল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি এস এম কামাল হোসেন, সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মনুজান সুফিয়ান, কেসিসির ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আমিনুল ইসলাম মুন্না ও ১৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ শফিউল্লাহ, ১৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা সমীর দত্ত (৫৫), ১৩নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাঃ সম্পাদক জিয়াউল আলম খোকন (৫৩), ১৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা মুন্সী নাজমুল আলম নাজু (৫৫), শেখ হাসিনার এপিএস-এর দালাল কমল চন্দ্র সেন (৬০), আলমনগর মহিলা পলিটেকনিক কলেজের পিছনের ডাঃ শেখ সুফিয়ান রুস্তুম (৪৫), ১৫নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা তত্তি ধর (৩০), খালিশপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদের অর্থদাতা ও সহযোগী ডাঃ সোহাগ (৩৮), ১৫নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা জনি মিয়া (৩০), ১৫নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ভূইয়া (২৫), যুবলীগ নেতা মোঃ ইসতিয়াক আলম লিয়ন (২৮), যুবলীগ নেতা মুন্সী নাহিদুল আলম (২৪), ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মনির বডিগার্ড মজনু মুন্সী (৪৫), কৃষকলীগ নেতা হীরা (৩২), ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামলীগের অর্থদাতা ফয়েজ খান (৪৫), ১৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ সেলিম বাপ্পী (২৮), নুরুল ইসলামের মোঃ পলাশ হোসেন (৩৮), নয়াবাটি শাপলা ভবনের সামনের মামুন ওরফে গরু মামুন (৩৪), পিপলস নিউ কলোনীর বাসিন্দা আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে ইলিয়াস আহম্মেদ খান বাবু (৩২), আ’লীগ নেতা মিজানুর রহমান মানিকের ছেলে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা স্বাধীন (২৬), দেলোয়ার হোসেনের ছেলে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা হাফিজুর রহমান সুমন (৩৫), তৈয়্যবা কলোনীর জুয়েল (৩০), বঙ্গবাসী মোড়ের আব্বাস আনছারী (৩৫), হাউজিং নিউ কলোনীর চটপটি সলেমানের ছেলে রাসেল (৩০), ১১নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাঃ সম্পাদক সরদার আলী আহম্মেদের ছেলে তানভীর হাসান নয়ন (২৮), পাচতলা কলোনীর সৈকতের ছেলে রিপন (২৯), নয়াবাটি বড় বাড়ির সামনের বাসিন্দা সেলিমের ছেলে সাদ্দাম (৩৬), সাজু (৩২) ও রাজ (২৯), তৈয়্যেবা কলোনীর বাসিন্দা কুদ্দুস মোল্লার ছেলে আরাফাত (৩২), ভাষান স্কুলের সামনের আমিন কন্ট্রাক্টরের ছেলে আতাং বাবু (৩৩), তৈয়্যবা কলোনীর ওহাবের ছেলে কিনো বাবু (৩৩), নয়াবাটি বড় বাড়ির সামনে রনি (৩০), নয়াবাটি বড় বাড়ির সামনের বাসিন্দা আলামিন ওরফে ঘাড়বেকা আলামিন (৩৫), বাংলার মোড়ের আহাদ শেখের ছেলে অপু (৩২), হাউজিং তিন তলা ধোপাবাড়ির পেদু শেখের ছেলে করিম (৩৪), দুর্বার সংঘ ক্লাব মোড়ের খোকনের ছেলে বাপ্পি ওরফে নাটা বাপ্পী (৩২), মুজগুন্নী রেলগেটের সাব্বির (২৭), বায়তুল মোকাদ্দার মসজিদের সামনের বাসিন্দা নয়ন ওরফে মুরগী নয়ন (৩৬), মনির হাজী সজিদের পিছনের বাসিন্দা আরিফ ওরফে চোরা আরিফ (৩৬), মুন্না (২৬), ভাষাণ স্কুলের সামনের বাসিন্দা নজরুলের ছেলে অভি (৩৩), হাউজিং নতুন কলোনীর হানিফ খন্দকারের ছেলে ইলিয়াস (৪৮), গোয়ালখালী কবরখানা রোডের সামনের আনিস (৩২), মিজান (৩৪), নয়াবাটির মোড়ের খোরশেদের ছেলে শাহ আলম (৩৫), গোয়ালখালীর মোড়ের আলতাফ হোসেনের ছেলে শহিদুল (৩৫), ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা শামসুল হক (৫০), সোহাগ (৩৬), মেঘার মোড়ের আলামিন সুইচ আলামিন (৩৬), হাউজিং তিন তলার কালামের ছেলে সুজন (২৫), স্কাউট মাঠের কাইয়ুমের ছেলে আলামিন (৩১), হাউজিং নিউ কলোনীর কাওসারের ছেলে বিপ্লব (৩৬), পৌরসভার মোড়ের সিয়াম (২৭), খালিশপুর নিউ মার্কেট বাজারের সিফাতুল্লাহের ছেলে ইমরান (৩১), নয়াবাটি বড় বাড়ির সামনের রেদওয়ান চুয়া (২৮), উত্তর কাশিপুর কবরখানা রোডের টিক্কা রুবেল (৩০), মেঘার মোড়ের রুবেল ওরফে কটকা রুবেল (৩২), নয়াবাটি রেললাইনের সুজন (২৮), নয়াবাটি বাইতুল মোকাদ্দাস মসজিদের সামনের অনিক কালা অনিক (২৬), ধোপাবাড়ীর মোকলেমের ছেলে হেলাল (৩০), নয়াবাটি মোড়ের বাসিন্দা যুবলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত হোয়াইট (৩৫)সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী একেএম শহিদুল আলম শহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও খুলনা-৩ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল প্রচারণা শেষে তার বাড়ি (১০নং ওয়ার্ডের গোয়ালখালি কবরস্থানের পাশে) যান। সেখানে পুলিশের সহযোগিতায় আ’লীগের লোকজন গাড়ি ভাঙচুর, গুলি বর্ষণ করেন। পুলিশ তাদের প্রত্যক্ষ মদদ দেন। এ কারণে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, আদালত নালিশী মামলাটি গ্রহণ করেছেন এবং কেএমপি কমিশনারকে বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার জন্য বলেছেন। এদিকে খালিশপুরের বাসিন্দা না হয়ে হোসেন অতিউৎসাহি হয়ে মামলাটি দিয়েছেন বলে বিএনপি নেতা-কমর্রিা মনে করেন। কারণ ঘটনার সাথে জড়িত অনেকে আসামী হননি। আবার যারা জড়িত নন, এমন লোকও আসামী হয়েছেন। বিষয়টি খালিশপুর থানা বিএনপির জন্য বিব্রতকর অবস্থা হয়ে দাড়িয়েছে বলে দলের অনেকে মনে করেন। কারণ এ হামলার নেতৃত্বদানকারী হোয়াইট সর্বশেষ আসামী। এ মামলা করার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি থাকা দরকার ছিল। তাহলে হামলাকারীরা সবাই আসামী হতো। টোকাই-চোর চোট্টা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার আসামী করে মামলাটি হালকা করে ফেলেছে বলে দলের অনেকে মনে করেন। তাছাড়া মামলার বাদী সম্প্রতি ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে মোবাইলে চাঁদা চাওয়ার ব্যাপারে ভিডিও ভাইরাল ও শোকজ হয়েছেন। বিষয়টি নিস্পতি না হওয়ার আগেই তিনি কিভাবে হামলার ঘটনায় মামলা করলেন-তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মামলার বাদী মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন বলেন, খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসী আমলী আদালত খালিশপুরে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। এটা রাজনৈতিক মামলা নয়, যারা ছিল না তাদের আসামী করিনি। ব্যক্তিগত মামলায় গণ আসামী করার সুযোগ নেই। খালিশপুর থানা বিএনপির নেতারা কেন নতুন করে দেশ স্বাধীনের একমাস পরও বসে থাকলো। বকুল সাহেবের বাড়িতে হামলার ঘটনায় কেন মামলা করলো না। অনেকটা কস্টের জায়গা থেকে তিনি বাদী হয়ে মামলা করেছেন বলে দাবি করেন।