খুলনায় আতংকে মোড় নিচ্ছে ডেঙ্গু : একদিনে আক্রান্ত ৯৬

বিভাগে মোট ভর্তি ১ হাজার ৬৪৩, মৃত্যু ৬
কামরুল হোসেন মনি : খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। সেপ্টেম্বরে প্রতিদিনই অসংখ্যা মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। গত একদিনে (বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ) খুলনা বিভাগে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৯৬ জন। চলতি বছরে আক্রান্ত সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ হাজার ৬৪৩ জন। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। মৃত্যুতে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ছিলো ৪ জন। চলতি বছরে আক্রান্তদের মধ্যে খুলনা জেলায় শীর্ষ রয়েছে। এ জেলাতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু না হলেও ডেঙ্গু আতঙ্কজনত মোড় নিচ্ছে।
দেশে এবার বৃষ্টিতে ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু বিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে। চলতি বছর বর্ষার শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়া ও তাপ বৃদ্ধির কারণে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে কম। তবে বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ দেখছেন না। তাদের মতে, এ বছর ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব অনেক বেশি পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে মশা ও ভাইরাস দুটিই পর্যাপ্ত রয়েছে। ফলে চলমান বৃষ্টিপাতে রোগী ব্যাপক হারে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিপ্তরের সূত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও দুটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মিলে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৯৬ জন। এর মধ্যে খুলনায় ২১ জন, যশোরে ৩৬ জন, কুষ্টিয়ায় ৭জন, মেহেরপুরে ১০ জন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ জন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, বাগেরহাটে, মাগুরা ও নড়াইলে ৩ জন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর আগের দিন খুলনা বিভাগে একদিনে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিল ৯৪ জন। এর মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় খুলনাতে ৩২ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত খুলনা বিভাে গ মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ১ হাজার ৬৪৩ জন। এ সময়ে মৃত্য হয় ৬ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে খুলনাতে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৪১৭ জন। এছাড়া যশোরে ৩৩৪ জন, মেহেরপুরে ২৩২ জন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮২ জন, বাগেরহাটে ২৮ জন, সাতক্ষীরায় ১৮ জন, ঝিনাইদহ ৭২ জন, মাগুরায় ৩৭ জন, কুষ্টিয়ায় ১২৮ জন এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩৭ জন। এ সময়ে খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী মৃত্যু হয়েছে ৬ জনরে। এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন এবং যশোরে মৃত্যু হয় দুই জনের। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৪৩৫ জন। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন ১৯৯ জন।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, খুলনার ৯ উপজেলা ও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও দুটি বেসরকারি হাসপাতাল মিলে এ পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৪১৭ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৫ জন। এর মধ্যে রূপসা, দিঘলিয়া ও ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন করে এবং ২৫০ শয্যা খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ২ জন। এ পর্যন্ত খুলনার উপজেলাগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির মধ্যে পাইকগাছায় ৪ জন, দাকোপে একজন, বটিয়াঘাটায় ৬ জন, ডুমুরিয়ায় ৩ জন, রূপসায় ১০৮ জন, তেরখাদায় একজন, দিঘলিয়ায় ৬ জন এবং ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলো। এছাড়া খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ৯১ জন, বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন এবং সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ১৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা গ্রহন করেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গত ২৪ ঘন্টায় খুমেক হাসপাতালে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৬ জন। এসময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ জন। বর্তমানে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৩৯ জন। এ পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলো ২০৪ জন। এ সময়ের মধ্যে মারা ৫ জন। এর মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয় সেপ্টেম্বর মাসে। আরএমও বলেন, প্রতিদিনই প্রায় ৯-১০ জননতুন করে ডেঙ্গু রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। গত মাসের তুলনায় চলতি মাসেই ক্রমেই বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মানুষদের সচেতন হওয়ার কোন বিকল্প নেই। সচেতন না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বাইরে চলে যাবে।