স্থানীয় সংবাদ

খুলনার বাজারে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘ড্রাগন ফল’

# ড্রাগন ফলে রয়েছে অধিক পুষ্টিগুন : বিক্রিতে লাভবানও হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা #

মো. আশিকুর রহমান ঃ ঋতুভেদে বাজারে সাদৃশ্যমান নানা ফলের সমারহ। খুলনার ফলের বাজারে দেখা মিলছে আপেল, আঙ্গুর, বেদানা, মালটা, কমলা, আনার, পেয়ারা, কলা, পেয়ারা, বারি তরমুজসহ বিভিন্ন জাতের ফলের। এই সকল ফলের মাঝে দেখা মিলছে ড্রাগন ফল। খুলনা বাজারে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ড্রাগন ফল। পুষ্টিগুনে ভরপুর ড্রাগন ফলের ক্রেতা চাহিদা দারুনভাবে বেড়েছে, যে কারণে ক্রেতা চাহিদা বাড়তি হওয়াই ফলটি কেনাবেচা করেও বেশ সন্তুষ্ট বিক্রেতাও। বিক্রেতার বলছেন, খুলনা স্থানীয় অঞ্চলসহ যশোর বেল্ট বিশেষ করে ঝিকরগাঝা, নাভারণ, চৌগাছা অঞ্চল হতে খুলনায় বাজারে আসছে পুষ্টিগুনে ভরপুর এই ড্রাগন ফল। প্রতি ১৫/২০ দিন অন্তর চাষিরা এই ফল কাটেন, তারপর করেন বাজারজাত। সাধারনত বছরের মার্চ মাস হতে নভেম্বর পর্যন্ত ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নগরীর ফল বাজারে বর্তমানে ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে ১৫০/২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। হর্টিকালচার সেন্টার দৌলতপুর সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি ওই ফলের কয়েকটি জাত রয়েছে, যার মধ্যে আমেরিকান বিউটি, থমসন, ব্লাডি ম্যারি, রেড জাইনা, ভিয়েতনামী জাইনা, জামোরানো, সিউল কিচেন, আ্যালিস ইত্যাদি। এদেশে ড্রাগন ফলের চাষকৃত জাত হলো, লাল ফল (সাদা শাঁস), লাল ফল ( রঙিন শাঁস) ও হলুদ ফল। বছরের যে কোনো সময়েই এর চাষ করা হয়। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত, ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিন, ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন ক্যালসিয়াম, আয়রন, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৯ রয়েছে। তাছাড়া একটি ড্রাগন ফলে ৬০ ক্যালোরিশক্তি এবং প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম, বিটাক্যারোটিন ও লাইকোপিনের মতো এ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। যা ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। প্রতি মৌসুমে মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যায় প্রতিটি গাছ ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত ভাল ফলন পাওয়া যায় বলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। টক-মিষ্টি ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন চাষীরাও বলে জানা গেছে।
ড্রাগন চাষী আজমল হোসেন জানান, আমি প্রথমে ২০০ গাছ দিয়ে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করি। এখন আমাদের সম্বলিত ৪ একর বাগানে ১০ হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে। প্রথমে আমার বিনিয়োগ ছিল খুবই কম। বাংলাদেশে বর্তমানে দিনকে দিন ড্রাগন ফলের চাহিদা বাড়ছে। ড্রাগন ফল প্রথম বাজারে এলে ৪/৫’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। বর্তমানে দাম কমেছে। আমি ড্রাগন ফল চাষ করে আজ বেশ স্বাবলম্বী হয়েছে।
ড্রাগন ফল বিক্রেতা রুবেল জানান, বর্তমানে বাজারে দেশি ফলের মতোই ড্রাগন ফলের চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য ফলের তুলনায় ড্রাগন ফল বিক্রিতে লাভ বেশ বেশি। ক্রেতা চাহিদা অনেক বেড়েছে আগে হতে। বছরের মার্চ হতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই ফল পাওয়া যায়। ড্রাগন ফল বিক্রিতে বেশ লাভের মুখও দেখা যায়।
ক্রেতা সোহেল রানা জানান, বাচ্চারা ড্রাগন ফল বেশ পছন্দ করে। বিশেষ করে আমার মেয়ে লামইয়া খুব পছন্দ করে। টকটক হওয়ার কারনে বেশ পছন্দ করে। বাজারে গেলেই ড্রাগন আনতে বলে। দাম একটু বেশি আগে হতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন সিজিনের শেষ তাই দাম নাকি বেশি।
দৌলতপুর হর্টিক্যালচারের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মোঃ আক্তারুজ্জামান জানান, ড্রাগন লতানো কাঁটাযুক্ত গাছ, যদিও এর কোন পাতা নেই। গাছ দেখতে অনেকটা সবুজ ক্যাকটাসের মতো। ড্রাগন গাছে সাধারনত রাতে স্বপরাগায়ণ হয়ে ফুল ফোটে, তবে মাঝে মাঝে পরপরাগায়ণ হয়ে থাকে। এর ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ণ ত্বরান্বিত করে থাকে। তিনি আরো জানান, মার্চ থেকে মে মাসে ফুল আসে, আর শেষ হয় নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। জাতভেদে একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলের ওজন ৪০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।
পরিচর্চার বিষয়ে তিনি আরো জানান, রোপনের ক্ষেত্রে প্রথমে স্থান নির্বাচন। যে সম্পূর্ন সূর্যের আলো পড়ে, বর্ষার পানি দাড়ায় না, স্যাতস্যাতে জায়গা নয়। উত্তম সেচ ব্যবস্থাপণা। গাছটি কংক্রিট পিলারে সাথে রোপন করতে হবে। ড্রাগন চাষে রোগ ক্ষেত্রে পচন বেশি দেখা যায়। এ রোগ দেখা দিলে আটোষ্টিন/ব্যাভিষ্টিন নামক কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমান এই ফল বানিজ্যিক উৎপাদনে কেমন চাহিদা? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বাংলাদেশের মানুষ এখন ড্রাগন ফলের প্রতি বেশ আসক্ত, যে কারনে এর বানিজ্যিক চাহিদাও বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারনে ক্রমশঃই চাষীরা বানিজ্যিকভাবে চাষে আগ্রহী হচ্ছে। সব বয়সী মানুষের কাছে এই ফল বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button