স্থানীয় সংবাদ

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল বিল ডাকাতিয়া এখন খুলনার মানুষের অভিশাপ

সংকট নির্বাচনে নানা পরিকল্পনা স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস এলাকাবাসীর

**** ১১ টি খাল ভরাট হয়ে যাওয়া জলাবদ্ধতার মূল কারণ।
**** দুটি এক কিউমেক পানি নিষ্কাশন পাম্পের কার্যাদেশ প্রদান।
*** স্থায়ী সমাধানে নেয়া হয়েছে দুইটি মেগা প্রকল্প

আনিছুর রহমান কবির ঃ খুলনা-যশোর অঞ্চলে অবস্থিত বিল ডাকাতিয়া বা ডাকাতের বিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল । খুলনা ও যশোরের ৬ টি উপজেলার মোট চাষাবাদযোগ্য ৩০ হাজার একর জমি রয়েছে। এ সকল জমির মধ্য দিয়ে শোলমারী , হরি, হামকুড়া, সালতা, ভৈরব , ভদ্রা নদীসহ মোট ১১ টি নদী প্রবাহিত হয়েছে। এক সময়ে খুলনার বিল ডাকাতিয়া কৃষিজীবী মানুষের আশীর্বাদ ছিল। এ বিলে ধান, সবজি ও মাছ উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেকে, তবে ইতিমধ্যেই বিল ডাকাতিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ১১টি নদীর সবগুলোই ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিল ডাকাতিয়ার পানি নামার একমাত্র নদী শোলমারী নদীটি এখন পরিপূর্ণ ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে এখন বিল ডাকাতিয়া স্থানীয় মানুষের অভিশাপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান , উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে কাজ করলেও এখনো আশার আলো দেখছে না স্থানীয় বাসিন্দারা। সংকট নিরসনে শোলমারী দশ ভেন্ট রেগুলেটরের সাথে অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতের আওতায় দুটি এক কিউমেক পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি পাম্প বসানো কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে “খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় শোলমারি নদীর সাথে সম্পর্কিত বিল ও আবাসিক এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন” প্রকল্প এবং ভদ্রা সালতা নদী সিস্টেম খনন প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায় নামে দুটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা অংশের বিল ডাকাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিল ডাকাতিয়ার পানি বের হওয়ার একমাত্র নদী শোলমারি নদীটির সুইচগেটের একপাশে জলাবদ্ধতা, অন্যপাশে শুকিয়ে যাওয়ায় ভেসে গেছে সোয়া তিন হাজার হেক্টর জমির ৮ হাজার ২৫০টি মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে খেতের ফসল, কয়েক হাজার বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিল ডাকাতিয়ার প্রান্তিক মাছচাষিরা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসক নানা পদক্ষেপ নিলেও এখনো পর্যন্ত স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে এ সকল এলাকার লাখ লাখ মানুষ। নিজেদের ঘরবাড়ি ও ঘের বাঁচাতে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে প্রতিদিনই শত শত মানুষ উপস্থিত হচ্ছে এ সকল খালের পলি কাটতে ।
রিপন রায় নামে এক ব্যক্তি বলেন , ঘরবাড়ি সপ্তলিয়ে গিয়েছে এজন্য প্রতিদিন এসে শোলমারী নদীর এই সুইস গেটে দাঁড়িয়ে থাকি কখন পানি নামবে আর কখন ঘরবাড়িতে উঠতে পারব। শিবনাথ নামে এক বাসিন্দা বলেন আমাদের কোন কিছুই অবশিষ্ট নাই ঘের বাড়ি সবই তলিয়ে গেছে এখন চেয়ারম্যান তুহিনের ডাকে আমরা সাড়া দিয়ে দিনরাত কাজ করছি। আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করছে তারা নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে সত্য কিন্তু আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের সাথে নিয়ে স্থানীয়দের রক্ষার্থে এসকল এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বার নিজেরাই নদীর মধ্যে নেমে খাল খনন করছেন। গুটুদিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিন, শোলমারী নদীর মধ্যে গলা পানিতে থাকা অবস্থায় রিপোর্টারকে বলেন ভাই প্রতিদিন এসে সকলের সাথে নিজেও নদীর কলিকাতে সাহায্য করছি নিজের দায়বদ্ধতা থেকে পানি নিষ্কাশন এর ব্যবস্থা করছি , ডুমুরিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করছে ৯ নং গুটো দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ইজ্জত আলী মোড়ল বলেন, সবকিছু রেখে আমরা চেয়ারম্যান তুহিনের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেরাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কাজ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছি কারণ আমাদের সকলেরই ঘরবাড়ি ঘের সবই তলিয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী খনন ও পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থায়ী সমাধান করতে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড । খুলনা পানি উন্নয়ন বিভাগ -১, বাপাউবো,এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাযকিয়া সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন আমরা প্রাথমিক সমস্যার সমাধানের জন্য ইতিমধ্যেই তিনটি স্কেবেটর ও দুইটি ডেজার লাগিয়েছি কিন্তু এরপরেও আমরা মেগা প্রকল্পের জন্য আরো অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছি শীঘ্রই এর সুফল পাবে এলাকাবাসী। খুলনা পানি উন্নয়ন সার্কেল, বাপাউবো তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান বলেন , আমরা শোলমারী নদী থেকে এস কে ব্যাটার দিয়ে বালি তুলছি যাতে পানি প্রবাহিত হয় কিন্তু অপর প্রান্তের নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় এই পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না অতএব দ্রুতই আমরা এর একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করব ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে আমরা দুটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ নাজমুল হুসেইন খান জনগণের এ সকল দুঃখ দুর্দশা নিরাশনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসক সমন্বয়ভাবে কাজ করছে। ফ্রিজিবিলিটি স্টাডি ও বড়প্রকল্পের মাধ্যমে এ সকল সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক। শুধু আশ্বাস নয় , বিল ডাকাতিয়া ও আশপাশে এলাকার মানুষের দাবি, দ্রুত স্থায়ী সমাধান করে এ সকল এলাকার বসবাসকারী মানুষ পানি বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পাবে এমনটাই প্রত্যাশা খুলনাবাসীর।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button