ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ব্যবহার উপযোগী টয়লেট অপর্যাপ্ত : আইসিডিডিআর,বি
প্রবাহ রিপোর্ট : সরকারি হাসপাতালের ৬৮ শতাংশ টয়লেট অবকাঠামোগত দিক বিবেচনায় ব্যবহার উপযোগী, যার মাত্র ৩৩ শতাংশ পরিচ্ছন্ন। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ৯২ শতাংশ টয়লেট ব্যবহার উপযোগী থাকলেও এর ৫৬ শতাংশই অপরিচ্ছন্ন। ঢাকার ১২টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গবেষণা চালিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি-র গবেষকরা। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) সহযোগিতায় এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এই গবেষণাটি সম্প্রতি প্লাস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। গবেষণায় ২ হাজার ৪৫৯টি টয়লেট পর্যবেক্ষণ করে ঢাকার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে টয়লেট ব্যবহারের সুবিধা, ব্যবহার উপযোগিতা এবং পরিচ্ছন্নতা মূল্যায়ন করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে রোগীদের জন্য টয়লেটের সাপেক্ষে ব্যবহারকারীর অনুপাত বেশি বলে দেখা গেছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতি একটি টয়লেটের বিপরীতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২১৪ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে টয়লেট প্রতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৪ জন। এই অনুপাত ওয়াটারএইড প্রস্তাবিত আদর্শমানের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। হাসপাতালের বহির্বিভাগে টয়লেট নির্মাণের ক্ষেত্রে ওয়াটারএইড প্রণীত নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতি ২০-২৫ জন রোগী বা পরিচর্যাকারীর জন্য প্রথম ১০০ জনের ক্ষেত্রে একটি করে টয়লেট এবং অতিরিক্ত প্রতি ৫০ জন রোগী বা পরিচর্যাকারীর জন্য একটি অতিরিক্ত টয়লেট থাকতে হবে। গবেষণায় বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাংলাদেশ জাতীয় ওয়াশ (ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন) স্ট্যান্ডার্ড ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা ২০২১ অনুযায়ী অন্তর্বিভাগে প্রতি ছয়টি বেডের জন্য একটি টয়লেটের মানদ- পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে প্রতিটি টয়লেটের বিপরীতে ব্যবহারকারী ১৭ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে এই সংখ্যা ১৯ জন। ব্যবহারের সুবিধা, সাধারণ ব্যবহার উপযোগিতা, পরিচ্ছন্নতার অভাব দেখা গেছে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা টয়লেট সুবিধা পাওয়া গেছে ১ শতাংশের কম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। মাত্র ৩ শতাংশ হাসপাতালে মাসিকের সময় ব্যবহৃত প্যাড এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ময়লা ফেলার ঝুড়ি ছিল। গবেষণায় টয়লেটের ব্যবহার উপযোগিতা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ ব্যবহৃত মানদ- অনুযায়ী। দৃশ্যমান মলের উপস্থিতি, মলের তীব্র গন্ধ, মাছি, থুতু, পোকামাকড়, ইঁদুর এবং কঠিন বর্জ্যরে উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে টয়লেটের পরিচ্ছন্নতা মূল্যায়ন করা হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি-র অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট এবং এই গবেষণার প্রধান তদন্তকারী ডা. মো. নুহু আমিন বলেন, ঢাকার হাসপাতালগুলোর প্রকৃত স্যানিটেশন পরিস্থিতি আমরা যা দেখছি তার চেয়েও খারাপ হতে পারে। কারণ, আমরা গবেষণাটি করেছিলাম কোভিড-১৯ মহামারির ঠিক পরে। তখন অনেক হাসপাতাল কোভিড রোগীদের চিকিৎসা থেকে সাধারণ চিকিৎসা সেবার দিকে মনোনিবেশ করেছে। এর ফলে তখন রোগীর প্রবাহ এবং টয়লেট ব্যবহার কমে যেতে পারে। ডা. নুহু আমিন বলেন, হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন ও কার্যক্ষম টয়লেট বজায় রাখার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে, লিঙ্গভিত্তিক প্রয়োজনীয়তা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।