জাতীয় সংবাদ

কোটা বাতিলের আন্দোলন তুঙ্গে

# সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি আজ
# ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার # এতে সাধারণ জনগণের সরকারের প্রতি আস্থা ফিরে আসে #

ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। গত ৫ জুন সেই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়, আর তাতেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে

প্রবাহ রিপোর্ট : রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শনিবার (৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহবাগ মোড় ছেড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। মোর্চাটির অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে দেওয়া প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল ও সব ধরনের চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো শনিবার বিকেলে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থানের শুরুর দিকে শাহবাগ মোড়ে মোতায়েন পুলিশের সাথে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’; আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’; ‘আঠারোর পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে’; ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’; ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’; ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন। কোটা বাতিলের পক্ষে ২০১৮ সালেই ছিল আ’লীগ সরকার এবং তারা ক্ষমতায় থাকাকালীনই এই কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করা হয়। নেপথ্যের কাহিনী ঃ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে (যেসব পদ আগে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরি বলে পরিচিত ছিলো) নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই সরকার জানায়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে (৯ম থেকে ১৩তম) নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে কোনো কোটা বহাল নেই, তৃতীয়ও চতুর্থ শ্রেণির পদে (১৪তম থেকে ২০তম পর্যন্ত) কোটা বহাল রয়েছে, তবে সংশ্লিষ্ট কোটার প্রার্থী না পাওয়া গেলে সাধারণ প্রার্থীর মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে হবে। ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কোটার বিষয়ে আগের জারি করা পরিপত্র স্পষ্ট করার পাশাপাশি মন্ত্রিসভার বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সরকারি চাকরিতে অষ্টম বা তার ওপরের পদেও সরাসরি নিয়োগে কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ হাইকোর্ট বাতিলকৃত কোটা পুনরায়বহাল করে। যার ফলে পুনরায়আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন হল থেকে শুরু করে শাহবাগ চত্বরে সমবেত হয়। ৪ঠা জুলাই সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে জমায়েত হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তারা। অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, রোববার বিকেল তিনটা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, শাহবাগ ও ঢাকা শহরের সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন। এ সময় নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, এটা শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়, শিক্ষক-অভিভাবকদেরও আন্দোলনে নেমে আসতে হবে। শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবিতে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবিগুলো হলো ঃ
১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
২. পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যাতীত)।
৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া।
৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button