জাতীয় সংবাদ

লালমনিরহাটে বিপৎসীমার ওপরে ধরলার পানি : শহর রক্ষা বাঁধে ধস

প্রবাহ রিপোর্ট : লালমনিরহাটে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধরলা নদীর পানি। গতকাল সোমবার সকাল ৬টায় ধরলা নদীর শিমুলবাড়ী ব্রিজ পয়েন্টে পানি বাড়ার রেকর্ড করা হয়। সেই সঙ্গে মোগলহাট-ওয়াপদা বাজার শহর রক্ষা বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এর আগে, গত রোববার লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ধরলার পানি বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানায়, সকাল ৬টায় ১৮ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৪০ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ৩৯ সেন্টিমিটার, বিকাল তিনটায় ৩৮ সেন্টিমিটার, সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। ধরলা নদীর তীরবর্তী ও পাশে থাকা মোগলহাট, কুলাঘাট ও বড়বাড়ি ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে স্থানীয়রা জানান, কুলাঘাট ইউনিয়নের ওয়াপদা বাজার থেকে মোগলহাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটারের লালমনিরহাট শহর রক্ষা বাঁধটিতে ধস দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদস্যরা বাঁধ পরিদর্শন করলেও কোনো প্রকার কাজ শুরু করেননি। বাঁধটি ভেঙে গেলে লালমনিরহাট শহরসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হবে। মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বলেন, আমার ইউনিয়নে দেড় হাজার পরিবারের তালিকা দিয়েছি। ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পেয়েছি। এর বাইরে কোনো ত্রাণ এখনও পাইনি। বাঁধটিতে ধস দেখা দিয়েছে। দ্রুত কাজ করা উচিত। এ ব্যাপারে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী-১ রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে বেশ কিছু স্থানে গর্ত হয়েছে। এখন পানি বাড়ছে। পানি কমলে সিনথেটিক বস্তা দিয়ে আমরা কাজ করবো। জিও ব্যাগ ফেলে কোনো লাভ হবে না বরং অর্থ নষ্ট হবে। লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাত আরা ফেরদৌস বলেন, আমরা শুকনো খাবার বিতরণ করছি। কিছু বরাদ্দ পেয়েছি। গতকাল সোমবার বরাদ্দ বিভাজন করা হবে। তবে ধরলার পানি বাড়লেও কমেছে তিস্তার পানি। এর আগে উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। তবে তা কমতে শুরু করায় লালমনিরহাটের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৮৬ মিটার। যা বিপদ সীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও চরবাসী জানান, ভারতে সিকিমে উৎপত্তি স্থল থেকে ভারতে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। নদীর বাংলাদেশ অংশের উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ফারাক্কা গেট খুলে বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হয়। একইভাবে শুষ্ক মৌসুমে গেট বন্ধ করে রাখা হয়। বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে ভারত তাদের অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে উজানের ঢলে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তাই বর্ষাকাল শুরু হলে বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। এবারও এর ব্যর্তয় ঘটেনি। টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢেউয়ের কারণে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পরিবারগুলো। তিস্তা ব্যারাজ বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ টানা তিন দিন ধরে বিপৎসীমার ১০/১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে তা কমতে শুরু করে। গতকাল সোমবার সকাল ৬টায় ছিল বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচে এবং সকাল ৯টায় আরও কমে গিয়ে তা বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, সকাল থেকে তিস্তা নদীর এ পয়েন্টে পানি প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। বন্যা পরিস্থিতির বেশ উন্নতি ঘটেছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button