জাতীয় সংবাদ

নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত বরিশালের সাধারণ মানুষ

প্রবাহ রিপোর্টঃ নদীভাঙনে দিশেহারা হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ (বরিশাল-৪ আসন) উপজেলার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় জনপ্রতিনিধিদেরও। যেখানে সহায়তার থেকে সান্ত¡নার বাণী বেশি আওড়ে বেড়াতে হয় তাদের। ফলে নদী ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন জনপ্রতিনিধিরাও।এ অবস্থায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ পাশাপাশি বিজ্ঞানসম্মত নদী খননের মাধ্যমে ভাঙনের তীব্রতা কমানোর দাবি দুই উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের। যে দাবি সঙ্গে ভিন্নমত নেই স্থানীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথেরও।ভাঙনের বিষয়ে তিনি বলেন, হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে আমার সংসদীয় আসন। আর এই দুই উপজেলার বেশিরভাগ এলাকার অবস্থান বৃহত্তর মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, তেতুলিয়া, কালাবদর নদীর মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। প্রতিবছর প্রতিটি ইউনিয়নেই নদী ভাঙন দেখা দেয়। এবারেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি, মেহেন্দিগঞ্জ সদরসহ দুই উপজেলার অনেকগুলো ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।প্রতিবছর মেহেন্দিগঞ্জের কোন না কোন প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা নদীতে বিলীন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেও একদিনে তিন থেকে চারটি স্কুল ভবন এলজিইডি বিভাগ অকশন দিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ যে কোনো সময় ভবনগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আর ভাঙনের কারণেই আমার অবস্থা খুবই বিপর্যস্ত। সাধারণ মানুষের কথা দুঃখ দুর্দশা দেখতে, তাদের কথা শুনতে প্রায় প্রতিদিন কোন না কোনো ভাঙন কবলিত এলাকায় যেতে হয়।তিনি বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা করে আমরা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠালে কিছু টিন ও নগদ অর্থ পাওয়া যায়। তাতে পরিবার প্রতি দুই বা তিন বান টিন পাচ্ছে। আর প্রতিবানের সঙ্গে ৩ হাজার করে টাকায় পাওয়া যায়। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কিছুটা উপকার হলেও প্রয়োজনের তুলনায় কম, তবে প্রধানমন্ত্রীর কারণে বিপদের সময় কিছু তো পাচ্ছেন তারা।বিভিন্ন নদীর পানি ও স্রোত মেঘনায় এসে মিলিত হয় জানিয়ে সংসদ সদস্য বলেন, সব নদীর পানি মেঘনা হয়েই সাগরে যাচ্ছে। যেখানে চাঁদপুর হয়ে স্রোত হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জে প্রচ- ধাক্কা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। গত কয়েক বছরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কয়েকবার আমাদের এলাকা পরিদর্শন করেছেন, বরাদ্দ দিয়েছেন, ড্রেজিং করে খনন করে দিয়েছেন কিন্তু প্রমত্তা মেঘনার স্রোত এসে এমনভাবে ধাক্কা দেয় যেন কিছু করার আর থাকে না।তিনি বলেন, জিও ব্যাগের ওজনের থেকে মেঘনার স্রোতের গতিবেগ অনেক বেশি। ফলে অল্প সময়ে জিও ব্যাগগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্রোত। আমরা দেখেছি ইমার্জেন্সি বস্তা যত ফেলা হোক না কেন একবছরের বেশি তা থাকে না। তাই স্থায়ী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ছাড়া ভাঙন থেকে মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা রক্ষা পাবে না।তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উলানিয়ায় ৩৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ না দিলে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সদর এতদিনে থাকতো না আর ৬২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ না দিলে হিজলা উপজেলা এ বছরই রাখতে হয়ত পারতাম না।স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে উপজেলা সদরগুলোও কতদিন রক্ষা পাবে জানি না জানিয়ে পঙ্কজ নাথ বলেন, ডুবোচরগুলো খনন না হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হবে। এক তীরে চর পড়লে অপরপ্রান্ত ভাঙে কিন্তু মাঝখানে চর পড়লে দুই তীরই ভাঙে। তাই সময় অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ বা পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি নদীর মাঝখান অর্থাৎ মূল গতিপথটা ড্রেজিং করে ডুবোচর সরিয়ে দিতে পারে, তাহলে ভাঙনের তীব্রতা কমতো। তবে সে পরিকল্পনা কারও দেখি না। বললে কিছু অংশ কেটে দেয়, কিন্তু তাতে খাজনার থেকে বাজনা বেশি হয়ে যায়।নদী ভাঙবে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হবে এটা প্রাকৃতিক নিয়ম হলেও গত দশবছরে এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে যেটা দেখেছি-তাতে মাঝখানের ডুবোচর কেটে দিলে দুই তীরের ভাঙন হ্রাস পাবে। কিন্তু দুই মন্ত্রণালয়ের (পানি ও নৌ) অনীহা। বিআইডব্লিউটিএ তার পছন্দ অনুযায়ী যেখান দিয়ে নৌযান চলবে সেটুকু কাটবে, সেই কাটায় ভাঙনের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়, আর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের হাতে কতটুকু ড্রেজিং ক্যাপাসিটি আছে তা জানি না।তিনি বলেন, ইলিশা থেকে যে নদীটা এসে চানপুর, উলানিয়া দক্ষিণ, সাধবপুর, রুকুন্দি, জাংগালিয়া, আলিমাবাদ, শ্রীপুর ভাঙে, এটা যদি রোধ করতে হয় তাহলে ইলিশার বামে বাহাদুরপুরের নতুনচর কেটে দিতে হবে। যাতে নদীর গতিপথটা পূর্বদিকে সরিয়ে সরাসরি পানি কালাবদরে নিয়ে যাওয়া যায় এবং এতে ভাঙন হ্রাস পাবে। আর নতুনচর কাটলে স্থাপনার ক্ষতিও হচ্ছে না। কিন্তু এটা না কেটে বস্তা ফেলছি, আর সেই বস্তা দুই-তিনমাস পরে থাকছে না।তিনি বলেন, আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণ দরকার অভিজ্ঞদের। নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী পরিকল্পনা করা উচিত। স্থায়ী রক্ষা বাঁধের বিকল্প হতে পারে মাঝখানের ডুবোচর কেটে দেওয়া বাঁকগুলোকে সোজা করে দেওয়া। সড়ক বিভাগ ট্র্যাফিক জ্যাম কমাতে যেভাবে রাস্তার বাঁক সোজা করে এখানেও সেটি করা উচিত বলে আমি মনে করি। এবারো মেহেন্দিগঞ্জ সদর, জাংগালিয়া, চরগোপালপুর, আলিমাবাদ, জয়নগর, দড়িচর-খাজুরিয়া, চরএককরিয়া, ভাসানচর, উত্তর উলানিয়া, দক্ষিণ উলানিয়া, চাঁনপুর, হিজলার হরিনাথপুর, গুয়াবাড়িয়াসহ বেশিরভাগ ইউনিয়নের কোনো না কোনো জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আর এতে কয়েকশত বাড়িঘরসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে এবং অপেক্ষায় আছে আরও।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button