জাতীয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও ‘গণহত্যার’ প্রতিবাদে চবি শিক্ষকদের মানববন্ধন

প্রবাহ রিপোর্টঃ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, ‘গণহত্যা’ ও গণ-গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষকরা। দুটি আলাদা ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাজ’ ও ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক ঐক্য’ এই দুই ব্যানারে কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় নিহত ছাত্র ও জনগণের হত্যার যথাযথ বিচার দাবি করেন তারা।বুধবার দুপুর ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক ঐক্য’ এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন প্রায় অর্ধশত শিক্ষক। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদেরকে হত্যা, গ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদ জানান তারা। এসময় আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে দাবি করেন শিক্ষকরা। গ্রেফতারকৃত সকল শিক্ষার্থীর মুক্তি ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানান তারা। আন্দোলন শেষে র‌্যালি নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করেন শিক্ষকরা।আন্দোলনে সঞ্চালনা বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, শিক্ষার্থীদের এমন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষ মানবিক হয়ে উঠেছিল। আর সেই আন্দোলনে এভাবে নির্বিচারে গুলি করেছে কারা? তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতে করতে হবে। এই আন্দোলনে এই শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি-ভিত্তিক পদক্ষেপ দেখে আমি অভিভূত। এখন থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা শিক্ষকরা শিখবো।যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক বলেন, নিরাপত্তা শুধু পুলিশ বাহিনীর জন্য নয়, একজন রিকশাওয়ালার জীবনও সাংবিধানিকভাবে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ছাত্ররা তো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল। তাহলে কেন তাদের ‘রাজাকার’ ডাকা হলো। কেন তাদের গুলি করা হলো। তারা তো এই প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীন দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী বলেন, যে বর্বরতা হয়েছে সেটি এই প্রজন্মও দেখেনি এর আগের প্রজন্মও দেখেনি। আমাদের আয়করের পয়সায় পরিচালিত বাহিনীকে গুলি চালানোর হুকুম কারা দিয়েছে আমরা শিক্ষক সমাজ এর উত্তর চায়। হাজার হাজার শিক্ষার্থী মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। রাষ্ট্রের প্রধান সেখানে গিয়ে সান্ত¡না দিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো কার নির্দেশে আমার সন্তান আজ নেই। প্রতিটি হত্যার নিরপেক্ষ বিচার করতে হবে।ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী, মোহাম্মদ আবুল বশর প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে ওই শিক্ষকেরা একটি মৌন মিছিল করেন। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।আন্দোলনে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর একটি দেশে শিক্ষার্থীদের ছোট একটি দাবিকে রাষ্ট্র এতো মর্মান্তিক ও ভয়ানক পর্যায়ে কীভাবে টেনে নিল। রাষ্ট্রের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে যে পরিণতি হল তার কারণে আমাদের এখানে দাঁড়াতে হয়েছে। আমাদের ছাত্র ও গণমানুষকে হত্যা করা হয়েছে, গণ-গ্রেফতার চলছে এসব হয়রানির প্রতিবাদ জানাতে দাঁড়িয়েছি।যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়মা আলম বলেন, এতগুলো প্রাণ যে ঝরে গেল কোনো মূল্যেই তাদের ফিরিয়ে আনা যাবে না। তাই এই হত্যাকা-ের কোনো ক্ষমা নাই। এখন যে গণ-গ্রেফতার চলছে, বিনা অভিযোগে বেআইনিভাবে ছাত্রদের আটক করা হচ্ছে, আমরা তার প্রতিবাদ জানাই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করছি।প্রাণরসয়ান ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ২১১টি প্রাণের ক্ষতি স্থাপনা ধ্বংসের ক্ষতির চেয়ে অনেক বেশি। রাষ্ট্রের স্থাপনা নিয়ে কথা বললে আমরা প্রাণের বিষয়ে কথা বলছি না। এখনো যারা নিরাপত্তা হেফজতে রয়েছে, জেলে রয়েছে, নজরদারিতে রয়েছে সবাইকে রাষ্ট্রীয় আইন মেনে সসম্মানে মুক্তি দেওয়া উচিত। স্বাভাবিক নিয়মে নিরাপত্তার সহিত শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়া উচিত। এছাড়াও এই কর্মসূচিতে অংশ নেন কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক শামীমা ফেরদৌসী, মো. ইমাম হোসাইন, মো. কামাল উদ্দিন, খাদিজা মিতু, মো. শফিকুল ইসলাম, মুনমুন নেছা চোধুরী, ফারজানা আহমেদ ও স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button