অসহযোগ কর্মসূচিতে সারা দেশে নিহত ৯৫

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশে সংঘাত-সংঘর্ষ, গুলি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় অন্তত ৯৩ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ সদস্য। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গতকাল দিনভর সংঘর্ষে নরসিংদীতে ৬ জন, ফেনীতে ৮ জন, লক্ষ্মীপুরে ৮ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২২ জন, কিশোরগঞ্জে ৪ জন, রাজধানী ঢাকায় ৮ জন, বগুড়ায় ৫ জন, মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, ভোলায় ৩ জন, রংপুরে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ৫ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন, শেরপুরে ২জন, জয়পুরহাটে ১ জন, হবিগঞ্জে ১জন, ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ১ জন, সাভারে ১ জন ও বরিশালে ১ জনসহ ৯৩ জন নিহত হয়েছেন। ফেনী ঃ আন্দোলনের সমর্থনে ফেনীতে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এই হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন ফেনী সরকারি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, সদর উপজেলার ফাজিলপুর কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ছাইদুল ইসলাম এবং পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে শিহাব উদ্দিন। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মুন্সিগঞ্জ ঃ মুন্সিগঞ্জের সুপার মার্কেট এলাকায় আন্দোলকারী-আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মুন্সিগঞ্জের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের বাধা দিতে যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে বাধে সংঘর্ষ। দফায় দফায় বিস্ফোরণ হয় কয়েকটি ককটেল। আগুন দেয়া হয় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে। পুলিশ নিয়ন্ত্রণে গেলে তারাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এছাড়াও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
পাবনা ঃ পাবনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের টাউন হল সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল থেকেই পাবনা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া হয়। বেলা ১১টার দিকে শহরের টাউন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্র-জনতা। টাউন হল এলাকায় ঘণ্টাখানেক ধরে অবস্থান করে আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে গোলাগুলি শুরু হলে অতর্কিত গুলির আঘাতে ৩ জন নিহত হয়।
মাগুরা ঃ মাগুরায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন। পুলিশ জানায়, বেলঅ ১১টার দিকে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া করে রাবার বুলেট ও গুলি নিক্ষেপ করে। এ সময় নিহত হন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদেী হাসান রাব্বী।
রংপুর ঃ রংপুরে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) নগরীর সিটি করপোরেশন এলাকায় সংঘর্ষ বাধলে নিহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন নগরীর গুরাতিপাড়ার যুবলীগ কর্মী খসরু, মাসুম ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধন রায়। এছাড়া আরও একজন মারা গেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী।
কিশোরগঞ্জ ঃ কিশোরগঞ্জে নিহত ৪ জন নিহত হয়েছেন।
বগুড়ায় ঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে বগুড়ায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত সেখানে দুজন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হাজারো বিক্ষোভকারী। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে তারা। দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামসুন্নাহার বলেন, ১২ জন চিকিৎসা নিতে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যান। তার মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। মাথায় গুলি লেগে তিনি নিহত হয়েছেন। তার নাম মনিরুল ইসলাম (২৪)। অন্যদিকে আহত চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই হাসপাতালেও একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে।
কুমিল্লা ঃ কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ মিছিলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। নিহত আব্দুর রাজ্জাক রুবেল দেবিদ্বার উপজেলার বাড়েরা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। অন্য একজনের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের নিউমার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ঢাকা সাইন্সল্যাব ঃ সাইন্সল্যাবে একজন নিহত হয়েছেন। এর আগে সাইন্সল্যাব এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সকাল ১১টার দিকে বাটা সিগন্যালের দিক থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি মিছিল সাইন্সল্যাবের দিকে আসতে থাকে এবং আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আন্দোলনকারীরা পাল্টা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখান থেকে পিছু হটে।
বরিশাল ঃ বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় টুটুল চৌধুরী (৬০) নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত টুটুল বরিশাল মহানগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের পাশে মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেন আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। নিচতলায় ও দোতালার কক্ষে আগুন দেয়ার পর স্থানীয় লোকজন দরজা ভেঙে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এ সময় কার্যালয়ের সামনে থাকা দুটি মোটরসাইকেলেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সিরাজগঞ্জ ঃ সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া সংঘর্ষে লক্ষ্মীপুরে ৫ জন, জয়পুরহাটে ১ জন, শেরপুরে ১ জন, ভোলা ৩ জন, সিলেটে ৩ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।