হাকিম আদালতের সামনে হাতবোমা বিস্ফোরণ : সেনাবাহিনীর টহল

প্রবাহ রিপোর্ট : ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ভবনের হাজতখানার সামনে দুটি হাতবোমা বিস্ফোণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার সকাল ৮টার দিকে এই বিস্ফোরণের পর ‘সুবিধাবাদী দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান তুলে ১০ থেকে ১৫ জন আইনজীবী সেখানে মিছিল করেছেন। বোমা বিস্ফোরণের পর ১০টার দিকে পুরান ঢাকার আদালতপাড়ায় চারটি জিপে চড়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এক আইনজীবী বলেন “আওয়ামী পন্থি আইনজীবীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবী আবুল কালাম খানও। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমানের দাবি, বিএনপি ‘অপকর্ম করে’ আওয়ামীপন্থিদের ঘাড়ে দোষ দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, তার চেম্বারের নাম ফলক ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এদিন বেহাত হওয়া চেম্বার পুনরুদ্ধার নিয়ে জজ কোর্টে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভা হওয়ার কথা ছিল। আওয়ামী লীগ সমর্থিত রাষ্ট্রপক্ষের কয়েকজন সহকারী পিপিকে এ দিন আদালতে দেখা গেলেও কোনো অতিরিক্ত পিপি, বিশেষ পিপি অথবা প্রধান পিপি আদালত পাড়ায় আসেননি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের আগের দিন ৪ অগাস্ট ঢাকার নিম্ন আদালতে বিএনপিপন্থি ওমর ফারুক ফারুকী, আবদুল খালেক মিলনসহ কয়েকজন আইনজীবীর চেম্বার, আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। সরকার পতনের পর ওই ঘটনার জের ধরে গত মঙ্গলবার আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত শাওন, বর্তমান সহ সভাপতি আবু তৈয়ব, দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোশারররফ হোসেন কাজল আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কনিষ্ঠ আইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম বাহারসহ বেশ কয়েকজনের চেম্বার ভাংচুর করেন বিএনপিপন্থি কনিষ্ঠ আইনজীবীরা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের চেম্বার বন্ধ রয়েছে। আইনজীবীর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য সম্পাদকের কক্ষগুলোও তালাবন্ধ। ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরুর ভাঙচুরের শিকার চেম্বার অরক্ষিত অবস্থায় আছে। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো আইনজীবীর উপস্থিতি দেখা যায়নি। আদালতের কর্মচারীরা জানান, সকাল ১১টায় বিচারকের এজলাসে বসার কথা রয়েছে। যোগাযোগের চেষ্টা করলে মহানগর দায়রা আদালতের প্রধান কৌঁসুলী আবদুল্লাহ আবুর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি তার কার্যালয়েও আসেননি। তিনি পদত্যাগ করেছেন কিনা এ বিষয়ে তার কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি। আওয়ামী পন্থি আইনজীবী মিজানুর রহমান সবুজ বলেন, “বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা নিয়ম বর্হিভূতভাবে ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপির আইনজীবী খোরশেদ আলম মিয়াকে সভাপতি ঘোষণা করেছে। তারা অবৈধভাবে আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য সম্পাদকের চেয়ারগুলো দখল করে নিয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লাঞ্ছিত
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা বারের বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইজীবী পরিষদের জ্যেষ্ঠ নেতা মোশাররফ হোসেন এবং আহসান তারিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আজাদ রহমান বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পিপি সুভাষ এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক একজন নারী আইনজীবীকে কে বা কারা আদালতপাড়ায় লাঞ্ছিত করে।” বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইজীবী পরিষদের প্রাথমিক সদস্য মিজানুর রহমান সবুজ বলেন, “প্রধানন্ত্রীর পদত্যগের পর গত মঙ্গলবার ঢাকা আইনজীবী সমিতিভবনসহ নিম্ন আদালতে বিএনপি ও জামাতপন্থি আইনজীবীরা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা আমাদের নেতৃবৃন্দের চেম্বারে হামলা ও ভাংচুর করে। তারা ঢাকা আইনজীবী সমতির বঙ্গবন্ধু ভবনের চেম্বারগুলো বলপূর্বক দখল করে। এসব বিষয়ে গতকাল সকাল ১১টায় ঢাকা জজ কোর্টে সভা করার কথা ছিল। এর অংশ হিসেবে আদালতে গেলে আমাদের দুইজন আইনজীবীকে মারধর করে আদালত পাড়া থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আদালতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আপাতত আজকে আদালত পাড়ায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
জাতীয়তা বাদী আইনজীবী ফোরামের সভা
এদিকে দুপুর ১২টায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নিম্ন আদালতের ইউনিট সভা করেছে। ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে এই সভা হয়। বিএনপিপন্থি আইনজীবী আবুল কালাম খান বলেন, “যেসব আইনজীবী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবেন, ভাঙচুর করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কোনো বিএনপি নেতাকর্মী মন্দিরে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা করার চেষ্টা করে তাদেরকে ছেড়ে দেওয় হবে না।”