জাতীয় সংবাদ

সিরাজগঞ্জে ২৯ নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি

প্রবাহ রিপোর্ট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে সিরাজগঞ্জে ২৯ জন নিহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে নাশকতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দায়ের করা ছয়টি মামলা ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। মুক্তি দেওয়া হয়েছে এসব মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া প্রায় দুই শতাধিক আসামিকে। জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের একদফা আন্দোলন চলাকালে সিরাজগঞ্জ শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় সাবেক একাধিক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি এবং দলীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। এসব ঘটনায় ১৫ পুলিশসহ মোট ২৯ জন নিহত হন। গত ৪ আগস্ট সকালে ছাত্র-জনতা ও বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীরা পুরো শহর দখলে নেয়। একপর্যায়ে এস এস রোডে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছাত্র-জনতা ও বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষ হয়। এতে যুবদল-ছাত্রদলের তিন নেতা-কর্মী নিহত হন। এরা হলেন, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রঞ্জু, যুবদল কর্মী আবদুল লতিফ ও ছাত্রদলকর্মী রুবেল। ওইদিন দুপুরে রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া বাজারে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ছাত্র-জনতার হামলায় নিহত হন এক সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতা। এরা হলেন- ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার লিটন, তার ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাত টিটু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন এবং দৈনিক খবরপত্রের রায়গঞ্জ প্রতিনিধি প্রবীন সাংবাদিক প্রদীপ ভৌমিক। একইদিন এনায়েতপুর থানায় পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে তিন ছাত্র-জনতা নিহত হন। নিহতরা হলেন- বেতিল গ্রামের কলেজছাত্র শিহাব ও সিয়াম এবং খুকনী গ্রামের মোহাম্মদ ইয়ায়াহিয়া। ওই ঘটনায় ১৫ পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। নিহতদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পাঁচজন উপপরিদর্শক (এসআই), একজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও আটজন কনস্টেবল। নিহত ওসি আবদুর রাজ্জাক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের মহারাজপুর গ্রামের মাহতাব ম-লের ছেলে। আর নিহত এসআইরা হলেন- পাবনার সুজানগর উপজেলার ভাদরভাগ গ্রামের শাহাদত হোসেন খানের ছেলে রইজ উদ্দিন খান, একই উপজেলার মানিকহাট গ্রামের প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের ছেলে প্রনবেশ কুমার বিশ্বাস, নীলফামারীর জলঢাকা বাজার এলাকার খলিলুর রহমান ম-লের ছেলে তহছেনুজ্জামান, দিনাজপুরের পার্বতীপুরের দেবকু-া গ্রামের মনছুর আলী মোল্লার ছেলে আনিছুর রহমান মোল্লা ও নাজমুল। নিহত এএসআই নওগাঁ সদরের কোমায়গাড়ি গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে ওবায়দুর রহমান। নিহত কনস্টেবলরা হলেন- পাবনা সুজানগরের খয়রান গ্রামের সেকেন্দার আলী মল্লিকের ছেলে আরিফুল আযম, একই উপজেলার বড়খাপুর গ্রামের আবু জাফরের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম, নওগাঁর পতœীতলার আমন্তপুর গ্রামের তোজাম্মেল হকের ছেলে রবিউল আলম, পাবনার সাথিয়া হাঁড়িয়া গ্রামের ই্উসুফ আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম, ফরিদপুর উপজেলার আগপুংগলী গ্রামের আল আমিন মোল্লার ছেলে আবদুস সালেক, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের লোকমান আলীর ছেলে লোকমান আলী ও জয়রামপুর গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে শাহিন উদ্দিন। এছাড়াও রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃত অপর কনস্টেবলের পরিচয় জানা যায়নি। এদিকে গত ৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরীর পুড়ে যাওয়া বাসা থেকে দুজনের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। তাদের একজন শহরের জানপুর মহল্লার ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন ও অপরজন সদর উপজেলার গজারিয়া মুন্সীপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেন ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এসব হত্যাকা-ের পর পুলিশের কর্মবিরতি, সময়মতো সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মামলা দায়ের হয়নি। তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম বলেন, নিহত যুবদল-ছাত্রদল নেতাকর্মীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। আমরা সাতটি মামলা রেডি করছি। খুব শিগগিরই মামলাগুলো দায়ের করা হবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, হত্যাকা-ের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকে ঘিরে দায়ের করা সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আরিফুর রহমান ম-ল বলেন, সিরাজগঞ্জে ঘটে যাওয়া সবগুলো হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button