জাতীয় সংবাদ

‘শেখ হাসিনা আইটি পার্কের’ নাম পরিবর্তনের দাবি

প্রবাহ রিপোর্ট : সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের অলিগার্কি (ক্ষমতার একটি রূপ যেখানে অল্পসংখ্যক লোকের হাতে ক্ষমতা থাকে) কোম্পানি টেকসিটির সঙ্গে সম্পাদিত ‘গণবিরোধী চুক্তি’ বাতিল করে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষকে গ্রহণ করতে আলটিমেটাম দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় পার্কের খোলা চত্বরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশন (এসএইচএসটিপিআইএ) আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এই আলটিমেটাম দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনটি পার্কের নাম পরিবর্তন করে ‘যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ এবং এর প্রধান ভবনটি (এমটিবি) সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ফ্রিল্যান্সার মীর মুগ্ধর নামে নামকরণের দাবি তোলেন। বিনিয়োগকারীদের দাবি, গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার নামে পার্কটি হওয়ায় এবং এটির পরিচালনায় সাবেক সরকারের সুবিধাভোগীরা থাকায় স্থাপনাটি গণআক্রোশের শিকার হচ্ছে। গত কয়েকদিনে অন্তত তিন দফা আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে; যার একটিও মোকাবিলা করতে পারেনি টেকসিটি। পার্কসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। ফলে এই ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের এখানে দায়িত্ব পালনের আর কোনো সুযোগ নেই। তারা দায়িত্বে থাকলে আরও অঘটন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৩০৫ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পটি কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় টেকসিটি নামে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, শেখ হাসিনা পার্ক থেকে অর্জিত রাজস্বের ৮২ শতাংশের ভাগীদার টেকসিটি; যাদের কার্যত কোনো বিনিয়োগই নেই। সরকারের প্রাপ্য ১৮ শতাংশের বড় অংশ আবার লুটেরা কোম্পানি টেকসিটি নানা কারসাজির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বেশ কিছু দাবিদাওয়া তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে পার্কের স্পেস ভাড়া যশোরের বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা, ভৌতিক বিদ্যুৎ বিলসমূহ প্রত্যাহার করে ব্যবহার অনুযায়ী বিল ইস্যু করা, স্থানীয় ক্ষুদ্র-মাঝারি বিনিয়োগকারীদের ব্যবসার ধরন অনুযায়ী সরকারি কাজে অংশগ্রহণের সুযোগদান, ব্যবসা প্রসার ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এই পার্কের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের নির্বাহী কমিটি থেকে ওয়াহিদ শরীফকে অপসারণ করে তার জায়গায় এসএইচএসটিপি-এর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা প্রভৃতি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বিনিয়োগকারীদের দাবি যে যৌক্তিক, তা অনুধাবন করেন। বিনিয়োগকারীদের দাবি মেনে নিতে তারা আন্তরিকও বটে। কিন্তু পতিত সরকারের অলিগার্ক ওয়াহেদ শরীফদের দৌরাত্ম্যে সরকারি কর্মকর্তারা অসহায় হয়ে ছিলেন। শেখ হাসিনা পার্কে স্বার্থ থাকলেও সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘নির্বাহী কমিটিতে’ ওয়াহেদ শরীফ জায়গা করে নেন। সেখানে বসে তিনি বিনিয়োগকারীদের সব ন্যায্য দাবিদাওয়া নাকচ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তিন কর্মদিবসের মধ্যে টেকসিটিকে অব্যাহতি দিয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষ পার্কটির দায়িত্ব না নিলে সংবাদকর্মী ও যশোরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহজালাল। সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের উপদেষ্টা ও যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন এবং এসএইচএসটিপিআইএ সভাপতি আহসান কবীর। এ সময় সংগঠনের সহসভাপতি ইমানুর রহমান ইমন, যুগ্মসম্পাদক এএইচএম আরিফুল হাসনাত, কোষাধ্যক্ষ নাহিদুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য আনিকা হাসান, সাবেক সহসভাপতি মনসুর আলী, সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলামসহ বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী ও অফিসপ্রধান উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button