জাতীয় সংবাদ

সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিতে গভর্নরকে চিঠি

প্রবাহ রিপোর্ট : বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের হাত থেকে সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকটিকে রক্ষা করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যানসহ উদ্যোক্তারা। গভর্নর বরাবর পাঠানো চিঠিতে সই করেছেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা ও সাবেক চেয়ারম্যান মেজর ড. রেজাউল হক (অব.), এক্সিকিউটিভ কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা মো. আনিসুল হক এবং অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা আবদুর রহমান। তারা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন- আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীরা সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক পিএলসি-এর অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। মাত্র ২২ বছরে ব্যাংকটি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ২০১৭ সালে ব্যাংকের ওপর শকুনের থাবা বিস্তৃত হতে থাকে। সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের নিয়মিত ৪০৪তম সভা ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর নির্ধারিত ছিল ব্যাংকের মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ের বোর্ড রুমে। উল্লিখিত তারিখে বিগত স্বৈর সরকারের একটি বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে এস আলম এবং তাদের সহযোগীরা ওই সময়ে বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সচিবকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ওই বাহিনীর কার্যালয়ে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। উল্লেখ্য, পর্ষদের ওই সভা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের পরিবর্তে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে সম্পাদন করা হয়। যেখানে পর্ষদের অন্য সদস্যদেরও জোরপূর্বক বাসা থেকে তুলে এনে প্রথমে গোয়েন্দা সংস্থা অফিসে, পরে তাদের তত্ত্বাবধানে হোটেল ওয়েস্টিনে হাজির করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ব্যাংকের ৪০৪তম সভার নোটিশ ও কার্যবিবরণী যাচাই করলে এটা স্পষ্ট হবে যে, ওই সভা অনুষ্ঠানের জন্য পূর্বে বিতরণকৃত নোটিশে অন্তর্ভুক্ত নির্ধারিত অর্থাৎ ৩৬টি এজেন্ডা স্থগিত করে বিবিধ সিদ্ধান্ত হিসেবে নোটিশ বহির্ভূত যথা- ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগ ও কোম্পানি সচিব পরিবর্তনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীকালে অন্য প্রায় সব পরিচালককে পর্যায়ক্রমে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয় এবং এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামমাত্র প্রতিনিধিকে পরিচালক হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে স্থান দেওয়া হয়। সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের (পিএলসি) পরিচালনা পর্ষদ জোর করে দখলের বিষয়টি তখনকার বিভিন্ন জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এছাড়া বিগত সরকারের ছত্রছায়ায় এস আলম গ্রুপ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের শেয়ার বেআইনিভাবে অর্থাৎ ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪ (ক) ধারা সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন ও কেন্দ্রীভূত করে ব্যাংকের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীকালে এস আলম গ্রুপের সীমাহীন দুর্নীতি ও নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রদানের দরুণ ব্যাংকটি আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে এই ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও বিশেষ কায়দায় এখনও ব্যাংকের টাকা এস আলম ও তার বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে ও বেনামে উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে, যা দ্রুত বন্ধ করা দরকার। অন্যথায় গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। অপরদিকে, ব্যাংকের গ্রাহকের আমানত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে পরিশোধ করার প্রক্রিয়া চলমান আছে বিধায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পরিচালিত কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ঘাটতি (নেগেটিভ ব্যালেন্স) দিন দিন বাড়ছে। যা প্রমাণ করে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ শুধুমাত্র টাকাপাচার, ব্যাংক লুটপাট ও তাদের নির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ব্যাংকটি দখল করেছে। গ্রাহকের স্বার্থ ও টাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের লক্ষ্য নয়। এছাড়া ২০১৭ সালে ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপ দখলের পর ব্যাংকের নিজস্ব সার্ভিস রুলস অমান্য করে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো যোগ্যতা যাচাই না করেই চট্টগ্রামের এস আলমের জন্য স্থান পটিয়ার লোকজনকে একচেটিয়া ব্যাংকের প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিয়োগ প্রদান করা হয় এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ওই বিশেষ অঞ্চলের কর্মকর্তাদেরকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়, যার ফলে পূর্বের কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তুষ্টি লক্ষ্য করা যায়। এমতাবস্থায়, বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন পূর্বক ব্যাংক একটি সেবা দানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংকের আমানতকারীর টাকার সুরক্ষা, সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকে স্থিতিশীলতা আনা ও আইনের সুশাসন এবং ব্যাংকিং সেক্টরে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচ্য বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে উদ্যোক্তা ও প্রকৃত শেয়ার হোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর পরিচালনা পর্ষদ গঠনের আবেদন জানাই। একইসঙ্গে এস আলমের আজ্ঞাবহ বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সব দুর্নীতি, অনিয়ম ও বেনামী ঋণ প্রদান থেকে বিরত রাখার জন্য তাদের দ্রুত অপসারণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের অগণিত গ্রাহক ও আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button