জাতীয় সংবাদ

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিন হত্যা মামলা

প্রবাহ রিপোর্ট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিএনপি নেতাসহ তিনজনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা তিনটি করা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলা ঢাকার মিরপুর মডেল থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ এবং অন্য মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিন মামলায় মোট আসামি সংখ্যা ২২৮ জন। এছাড়া অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ৬৭ আসামি: কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকা মহানগর উত্তরের ১১নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ কবির খানকে হত্যার মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৬৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসানের আদালতে এ মামলাটি করেন নিহতের স্ত্রী আফসানা ইসলাম (৩৫)। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মিরপুর মডেল থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী মো. ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মো. কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মান্নান কচি ও যুবলীগ নেতা মেসবাউল আলম সাচ্চু। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আইডিয়াল স্কুলের সম্মুখে ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। এসময় ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ কবির খান আন্দোলনে আহত ছাত্রদের সহযোগিতা করে রিকশায় তুলে চিকিৎসার জন্য পাঠাচ্ছিলেন। সেসময় শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ গুলি চালালে তিনি নিহত হন।
হাসিনাসহ ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা: এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে রাজধানীর মিরপুরে লিটন হাসান লালু ওরফে হাসান নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৪৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে নিহত হাসানের ভাই মিলন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। আদালত মিরপুর মডেল থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান (নিখিল), ইলিয়াস মোল্লা, কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি হারুন-অর-রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব এস এম মান্নান (কচি)। মামলায় অভিযোগে বলা হয়, দেশে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে লিটন হাসান লালু গত ৪ আগস্ট মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। দুপুর ২টার দিকে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, হারুন-অর-রশীদ, আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিপ্লব কুমার ও হাবিবুর রহমানের নির্দেশে অন্যান্য আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি করে। অজ্ঞাত আসামির ছোড়া বুলেটে হাসান গুলিবিদ্ধ হন। পরে ৭ আগস্ট আগারগাঁও নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
মামলা তদন্তে পিবিআই: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় কাঠমিস্ত্রি তারিক হোসেনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারহা দিবা ছন্দার আদালতে তারিকের মা মোসা. ফিদুশি খাতুন এ মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি হারুন-অর-রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। বাদীপক্ষের আইনজীবী লিটন মিয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটের দিকে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে শেরেবাংলা নগর থানার সামনে রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন তারিক হোসেন। তাকে দ্রুত পার্শ্ববর্তী শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৯ আগস্ট তিনি মারা যান।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button