জাতীয় সংবাদ

মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে পরীক্ষার্থীরা, এইচএসসির অবশিষ্ট সব পরীক্ষা বাতিল

প্রবাহ রিপোর্ট : পরীক্ষার্থীদের দাবির মুখে উচ্চমাধ্যমিকস্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার অবশিষ্ট সব পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার এ তথ্য জানান। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা চলাকালে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে সরকার পতনের আন্দোলন সংঘটিত হয়। এতে সাতটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গেলেও বাকি পরীক্ষাগুলোর সময়সূচি পেছানো হয়েছে কয়েক দফায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাকি পরীক্ষাগুলো না নেওয়ার দাবি তোলেন পরীক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তারা মিছিল নিয়ে কয়েকশো শিক্ষার্থী সচিবালয়ের ৫ নম্বর ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় একটি রিকশায় মাইক বেঁধে নিয়ে এতে তারা বিভিন্ন রকম দাবি দাওয়ার কথা জানান। শিক্ষার্থীদের একটি দল ভেতরে প্রবেশ করার পর জিপিও ও পল্টনের মাঝামাঝি মুক্তাঙ্গণের পাশে এই ফটকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে তারা ছয় নম্বর ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সচিবালয়ের ফটকে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরা নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা অটো পাশ চাই না। তবে যে সাতটা পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোর প্রাপ্ত নম্বর গড় করে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। পরে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশিষ্ট পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে অবশিষ্ট পরীক্ষা বাতিল হলেও তাদের মূল্যায়ন কিভাবে হবে সে বিষয়ে পরিপত্র বা প্রজ্ঞাপন দিয়ে জানাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৩০ জুন থেকে সারা দেশে একযোগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। এবারে পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার কারণে ১৮, ২১, ২৩ ও ২৫, ২৮ জুলাই ও ১ ও ৪ আগস্টের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সবশেষে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন সূচিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে তারা। এ সময় তারা ‘আমাদের দাবি একটাই-পরীক্ষা বাতিল চাই’, ‘দাবি মোদের একটাই-পরীক্ষা বাতিল চাই’, ‘আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম-সংগ্রাম’, ‘পরীক্ষা না বিকল্প, বিকল্প-বিকল্প’, ‘যুক্তি দিয়ে আন্দোলন-বন্ধ করা যাবে না’, ‘চলছে লড়াই-চলবে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হন তারা। দুপুর দুইটার দিকে তারা জিরোপয়েন্টের দিকের সচিবালয়ের গেট দিয়ে হুড়মুড় করে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। তারা সচিবালয়ে ঢুকে ৬ ও ১১ নম্বর ভবনের মাঝামাঝি জায়গায় মিছিল করতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা জানান, দেড় মাসের পরীক্ষা আমরা কয়েক মাস ধরে ঝুলে আছি। তারা আমাদের কয়েকদিন আগেও জানিয়েছিল সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে পরীক্ষা হবে। তাহলে আরেকক মাস লাগবে পরীক্ষার জন্য। এরপর এক মাসব্যাপী পরীক্ষা হবে। এত সময় নিলে আমাদের ফলাফল প্রকাশ করবে কখন? আর আমরা ভর্তি হবো কবে? তারা আরও জানান, একটা বোর্ড পরীক্ষা কিভাবে ৬-৭ মাস পর্যন্ত ঝুলে থাকে? সেজন্য আমরা এটা মানি না। আমরা চাই যেসব পরীক্ষা হয়েছে সে অনুযায়ী পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হোক। দাবি না মানলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেন এবং আলোচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন। সে সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশ্বাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, কীভাবে ফল তৈরি ও প্রকাশ করা হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সব বোর্ড এটা নিয়ে আলোচনা করবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবে। তারপর কীভাবে ফল তৈরি ও প্রকাশ করা হবে, তা চূড়ান্ত হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button