স্বাস্থ্যের মহাপরিচালকের অপসারণসহ ৭ দফা দাবি ড্যাবের

প্রবাহ রিপোর্ট : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. রোবেদ আমিনের অপসারণসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। দাবি মানা না হলে আগামীতে আন্দোলন বিস্তৃত করা হবে বলেও হুঁশিয়ার দেন সংগঠনটির নেতারা। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম। সংবাদ সম্মেলনে ডা. রোবেদ আমিনের পেশাগত অসঙ্গতি ও দুর্নীতি তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্য বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের এক মাস হয়ে গেলেও তার কোনো প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। বরং শান্তি মিছিলে অংশগ্রহণকারী, দুর্নীতিবাজ চিকিৎসকদের পদায়ন করার মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। গত ১৬ বছর বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের যথাযথ বদলি ও পদোন্নতির ব্যবস্থা না করে তাদের বঞ্চনাকে দীর্ঘায়িত এবং নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। গত ৩ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের বিরোধিতা করে ফ্যাসিবাদের দোসর চিকিৎসকদের অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যে শান্তি সমাবেশ করা হয়, তার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী হিসাবে চিহ্নিত বর্তমানে নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক। ছাত্র-জনতার আন্দোলন যে চেতনার বিরুদ্ধে, সেই ফ্যাসিবাদী চেতনার ব্যক্তি, পদলোভী চিকিৎসককে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক সমাজ মেনে নিতে পারছে না। স্বাস্থ্য খাতে স্থবিরতা ও সংকট নিরসনে ড্যাব সাত দফা দাবি জানাচ্ছে। ড্যাবের দাবিগুলো হলো-
১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. রোবেদ আমীনসহ অন্যান্য সুবিধাপ্রাপ্ত ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বাদ দিতে হবে।
২. আহত ছাত্র-জনতাকে যারা চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেছে, তাদের তালিকা করে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে। শান্তি সমাবেশে যোগদানকারী ও ফ্যাসিবাদের দোসর সব চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. বৈষম্যের শিকার সব চিকিৎসক ও কর্মচারীকে দ্রুত ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দিয়ে বৈষম্য দূর করতে হবে। বর্তমানে পদোন্নতিযোগ্য প্রত্যেকের পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. মেডিকেল কলেজসহ প্রতিটি হাসপাতাল দুর্নীতিমুক্ত করতে যোগ্য ও বৈষম্যের শিকার শিক্ষক ও চিকিৎসকদের যথোপযুক্ত পদে পদায়িত করতে হবে। বিগত ১৬ বছর স্বাস্থ্য খাতে যত দুর্নীতি হয়েছে তার শ্বেতপত্র প্রকাশ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৫. মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্বৈরাচারের দোসরদের সরিয়ে বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের পদায়ন করতে হবে।
৬. প্রতিবাদকারী যেসব চিকিৎসকদের হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছে সেই বদলি আদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ভবিষ্যতে বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের কোনোভাবেই হয়রানিমূলক বদলি করা যাবে না।
৭. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও চিকিৎসাসেবার গুণগতমান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালী করতে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল কমিটি অতি দ্রুত বাতিল করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধিত্ব রেখে কমিটি পুনঃগঠন করতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, ‘যারা রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা যায় না। রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে আমরা। তবে আমরা কলুষিত রাজনীতি কখনোই চাই না। অন্তর্বতীকালীন সরকারকে আমরা সহায়তা করতে প্রস্তুত। সে জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টার পদত্যাগ আমরা চাই না। যদি কেউ স্বৈরাচারের পক্ষে অবস্থান নেন আমরা তার বিরুদ্ধে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে এবং স্বাস্থ্য খাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিশ্চিত করবে।