শাবিপ্রবিতে শিক্ষকদের শপথ পাঠ করালেন সমন্বয়করা : সমালোচনার ঝড়

ভিডিও ভাইরাল হলে ক্ষমা চাইলেন সমন্বয়করা
প্রবাহ রিপোর্ট : সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) ড. মো. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ ড. মো. ইসমাইল হোসেনকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবি সমন্বয়করা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এদিকে, দুঃখ প্রকাশ করে গতকাল শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছে শাবিপ্রবি সমন্বয়করা। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি আনুষ্ঠানিক কোনো শপথ অনুষ্ঠান ছিল না। নতুন প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় ছিল। এই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। শিক্ষকদের শপথ পড়ানো ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক পলাশ বখতিয়ার বলেন, শিক্ষকরা আমাদের শ্রদ্ধারপাত্র। তাদের অসম্মান হোক সেটা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা স্যারদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শাবির কনফারেন্স রুমে নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে শপথবাক্য পাঠ করছেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বাক্যগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা শাবিছাত্র পলাশ বখতিয়ার। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শাবিপ্রবি’র একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সম্মেলন কক্ষে দাঁড়িয়ে নতুন প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও থিয়েটার সাস্টের সভাপতি পলাশ বখতিয়ার। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মো. আবদুল কাদির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সালেহ মো. নাসিম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার সকালে সমন্বয়কদের পক্ষে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি আনুষ্ঠানিক কোনো শপথ অনুষ্ঠান ছিল না। নতুন প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় ছিল। শহিদদের আত্মত্যাগ এবং জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধরে রাখতে স্যারদের কাছে কয়েকটি দাবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার বিষয় উঠে আসে। যে ভিডিওটা সামনে এসেছে- এটি জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞা ছিল। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমাদের বাক্যগুলো ছিল- জুলাই বিপ্লবে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা, আহতদের সুস্থতা কামনা। জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ও আদর্শ ধারণ করে ক্যাম্পাসকে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি মুক্ত রেখে শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি। দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শাবিপ্রবি যেন দেশ ও জাঁতি এবং বিশ্বাবাসীকে আলোর পথ দেখাতে সক্ষম হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করার প্রতিজ্ঞা। আমাদের এই উদ্দেশ্যকে আমরা আরও সুন্দর এবং যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে না পারার কারণে মূলত এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছ। এই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এ বিষয়ে থিয়েটার সাস্টের সভাপতি পলাশ বখতিয়ার বলেন, নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার স্যারের সঙ্গে গতকাল (গত বৃহস্পতিবার) মত বিনিময়ের সময় জুলাই বিপ্লবের কথা স্মরণ করে আমরা অনেকে বক্তব্য দেই। তারই ফলশ্রুতিতে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটকে ধরে রাখতে স্যারদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে অনুরোধ করি। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা আমাদের শ্রদ্ধারপাত্র। শিক্ষকদের অসম্মান হোক এটা আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো না। আমরা স্যারদের কাছে এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও স্যারদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। থিয়েটার সাস্টের সভাপতি পলাশ বখতিয়ার বলেন, নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার স্যারের সাথে গতকাল (গত বৃহস্পতিবার) মত বিনিময়ের সময় জুলাই বিপ্লবের কথা স্মরণ করে আমরা অনেকে বক্তব্য দিই এবং তারই ফলশ্রুতিতে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট কে ধরে রাখতে স্যারদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে অনুরোধ করি। তিনি বলেন, শিক্ষকরা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র, শিক্ষকদের অসম্মান হোক এটা আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো না। আমরা স্যারদের কাছে এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও স্যারদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। প্রসঙ্গত, গত বুধবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের নতুন উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন। পরে গত বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এ শপথবাক্য পাঠ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন ছাত্রনেতা উপস্থিত ছিলেন। শপথবাক্যে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আদর্শ ধারণ করে শিক্ষার্থীবান্ধব প্রতিষ্ঠান গড়ার শপথ নেন নবনিযুক্ত দুই প্রশাসক। শপথবাক্যে পড়ানো হয়, ‘শুকরিয়া যে, আমরা ছাত্র জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি লাভ করেছি। আজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদে যোগদানের মুহূর্তে ২৪ জুলাইয়ের সকল শহীদদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। মহান জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ও আদর্শকে সমুন্নত রাখতে আমরা শপথ করছি যে, বিপ্লবী সরকার কর্তৃক যে দিকনির্দেশনা আমরা পেয়েছি এবং জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষা এবং গবেষণা উন্নয়নে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সচেষ্ট থাকবো। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য আপসহীনভাবে নিয়োজিত থাকবো। আমাদের বিদ্যা, গবেষণা সৎ কাজের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাবিপ্রবি দেশের জনগণের এবং বিশ্ববাসীকে আলোর পথ দেখাতে যেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করবো।’