আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে একযুগ ধরে শিক্ষকতা!

প্রবাহ রিপোর্ট : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে একযুগ ধরে দাপটের সঙ্গে শিক্ষকতা করছেন ইউসুফ নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এসএসসিতে অঙ্কে সি ও এইচএসসিতে ইংরেজিতে ডি পেয়ে শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও এই শিক্ষক এসএসসিতে জিপিএ-৩.৫০, এইচএসসিতে ৩.১ পেয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় চলছে। অথচ নিয়োগের বিষয়ে পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল, অবশ্যই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় যেকোনও একটিতে জিপিএ-৪ (এ) পেতে হবে এবং স্নাতকে প্রথম শ্রেণি (নূন্যতম ৩.৫) থাকতে হবে। অথচ আবেদন করার শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার পরও নিয়োগ কমিটি কোন ক্ষমতায় তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল, আর তিনি ১২ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে শিক্ষকতা করছেন- এমন প্রশ্ন তুলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে শিক্ষকতা থেকে তাকে আপাতত বিরত রাখার আবেদনও করেছেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে (বর্তমানে যার নাম ইতিহাস ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগ) প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদে একজনকে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। অন্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হয়। অভিযোগে প্ল্যানিং কমিটি গঠন না করেই শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলির আলোকে আবেদনকারীদের যোগ্যতা যেন যাচাই-বাছাই না করা হয়- সে জন্যই প্ল্যানিং কমিটি গঠন কর হয়নি। এই বিভাগে শুধুমাত্র একটি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও বাছাই বোর্ড তিন প্রার্থীকে স্থায়ীভাবে নিয়োগের সুপারিশ করে- যা বেআইনি। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী ইউসুফের যোগ্যতা পূরণ না হলেও তাকে অন্যায়ভাবে ভাইভা কার্ড ইস্যু করা হয়। নিয়োগ বাছাই বোর্ডে ছিলেন বেরোবির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল জলিল মিয়াসহ পাঁচ জন। বাছাই বোর্ডের সদস্যরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও ইউসুফকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেন। ইউসুফ এসএসসিতে জিপিএ- ৩.৫০, এইচএসসিতে ৩.১ পেয়েছেন। এসএসসিতে অঙ্কে সি ও এইচএসসিতে ইংরেজিতে ডি পাওয়া এই ব্যক্তি স্নাতকে দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়েছেন। আবেদনকারীদের মধ্যে অনেক যোগ্য প্রার্থী থাকলে বাছাই বোর্ড সুপারিশ করেনি। শুধু তাই নয়, সুকৌশলে নিয়োগ বাছাই বোর্ড বেরোবি আইনের ২৯ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে একটি প্রভাষক পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও দুই জন এবং অধ্যাপক পদে একজনসহ তিন জনকে নিয়োগ করার সুপারিশ করে, যা বাস্তবসম্মত ছিল না। অভিযোগে আরও বলা হয়, ইতিহাস বিভাগে একটি স্থায়ী পদের কথা উল্লেখ থাকলেও তিন জনকে নিয়োগ করার সুপারিশ করা ছিল নজিরবিহীন ঘটনা। সুপারিশকারীরা উল্লেখ করেছিলেন, আবেদরনকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা ও সাক্ষাৎকারে দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। মজার বিষয় হলো, নিয়োগদানের সুপারিশের সব লেখা টাইপ করা থাকলেও প্রভাষক পদে ‘এক’ শব্দটি কলম দিয়ে কেটে ‘তিন’ লিখে দেওয়া হয়- যা অনভিপ্রেত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ বিষয়ে অভিযোগকারী বেরোবির ইতিহাস ও প্রতœত্বত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, বেরোবির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অযোগ্য ব্যক্তিকে কীভাবে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো- এটা শিক্ষক সমাজের জন্য লজ্জার। যে ব্যক্তি এসএসসি-এইচএসসির একটিতেও জিপিএ-৪ পাননি। শুধু তাই নয়, এসএসসিতে অঙ্কে সি, এইচএসসিতে ইংরেজিতে ডি পায়- তার শিক্ষকতা করার কোনো অধিকার নেই। সে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের নামে প্রতারণা করছে। তিনি অবিলম্বে তার নিয়োগ বাতিল এবং শিক্ষকতার দায়িত্ব থেকে সরানোর আবেদন করেছেন বলে জানান। এই বিষয়ে ইউসুফ দাবি করেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি শর্তাবলির ঘ-তে বলা হয়েছে, ‘‘কোনো পরীক্ষায় বি গ্রেডের নিচে অথবা তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণি গ্রহণযোগ্য হবে না’’। এই অনুযায়ী আমি আবেদনের যোগ্য। সেজন্যই আমাকে বাছাই বোর্ড সুপারিশ করেছে।’ বিজ্ঞপ্তিতে শর্তাবলির (গ) নং শর্তে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার যেকোনও একটিতে নূন্যতম ‘অ’ (৫.০০ পয়েন্ট ভিত্তিক গ্রেড সিস্টেমে সিজিপিএ/জিপিএ নূন্যতম ৪.০) থাকতে হবে- এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা সার্কুলারের দুর্বলতা। এর দায় আমার নয়। জানা গেছে, ইউসুফ সৈয়দপুর গভর্নমেন্ট বোর্ড হাইস্কুল থেকে ২০০১ সালে এসএসসি ও সৈয়দপুর গভর্নমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার কোনো গবেষণাপত্র নেই। তবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. ওয়াজেদ ইনস্টিটিউটে (এখনও অনুমোদন পায়নি) এম.ফিল করার জন্য ভর্তি আছেন- যদিও এর কার্যক্রম শুরু হয়নি এখনও।