কম খরচে কৃষিপণ্য পরিবহনে চালু হলো স্পেশাল ট্রেন
প্রবাহ রিপোর্ট : নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী বাজার দর নিয়ন্ত্রণে ২২ অক্টোবর থেকে চালু হয়েছে ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’। দেশের দক্ষিণ ও উত্তর অঞ্চল থেকে সপ্তাহে তিন দিন এই বিশেষ ট্রেনে রাজধানী ঢাকাতে কম খরচে সবজি ও কৃষিপণ্য পরিবহন করার সুবিধা পাবেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কৃষিপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, সড়কপথে চাঁদাবাজি ও হয়রানি লাঘবে এই স্পেশাল ট্রেন চালু করেছে রেল বিভাগ। ২২ অক্টোবর সকাল সোয়া ১০টায় খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে এই ট্রেন। এই ট্রেনটি এখন থেকে গতকাল মঙ্গলবার খুলনা, বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় ও শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় কৃষিপণ্য নিয়ে যাতায়াত করবে। এই ট্রেনে প্রতি কেজি সবজি ও কৃষিপণ্য বহনে ১ টাকা ০৮ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৪৭ পয়সা খরচ পড়বে। এতে খুশি ব্যবসায়ীরা। প্রথম দিন খুলনা থেকে ৭টি বগিতে ৬৪০ কেজি পণ্য নিয়ে ছেড়ে গেছে বিশেষ ট্রেন। এই ট্রেনের মাধ্যমে প্রতিদিন ১২০ টন পণ্য আনা নেওয়ার সুবিধা মিলবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (পশ্চিম) সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, পণ্যের গুনগত মান বজায় রাখতে সম্প্রতি চীন থেকে আনা আধুনিক কোচ সংযুক্ত করা হয়েছে। এই ট্রেনে থাকছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বগিও। যা যাত্রাপথে যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ ১৫টি স্টেশন থেকে পণ্য নেবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বেচাকেনার সময় বিবেচনা করে রাতে পৌঁছাবে ট্রেন। চাহিদা বাড়লে বাড়ানো হবে ট্রেনের সংখ্যা।
সবজি ছাড়াই যশোর ছাড়লো স্পেশাল ট্রেন: কৃষিপণ্য পরিবহনে স্পেশাল ট্রেনটি প্রথম দিনেই সবজি ছাড়াই যশোর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। যশোর সদরের কৃষকরা বলছেন, বিশেষ এই ট্রেনের কোনো খবর তারা জানেন না। আর রেল স্টেশন মাস্টারের দাবি, ব্যাপক প্রচারণা চালালেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। তবে, আগামীতে সাড়া পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তারা। নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, নাকাল হয়ে পড়ছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশের ১৫টি উৎপাদক অঞ্চল থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ করে দেশব্যাপী সরবরাহ নিশ্চিতের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’। বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে যশোর স্টেশনে পৌঁছানোর কথা থাকলেও ৪০ বিলম্বে পৌঁছায়। তবে প্রথম দিনেই কৃষিপণ্য বা খাদ্যসামগ্রী বুকিং ছাড়াই যশোর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যায়। সবজি পরিবহনে স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়ে কথা হয় যশোর সদরের ছোট হৈবতপুর গ্রামের সবজি চাষি আবদুল আলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম ট্রেনের কথা। কবে থেকে চালু হবে বা হয়েছে, জানিনে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রেন মুন্সি মেহেরুল্লাহ স্টেশনে থামলে আমাদের জন্যে ভালো হয়। এখান থেকে ট্রেনে পণ্য পরিবহন করতে পারলে আমাদের সুবিধা। যশোর সদরের বারীনগর সাতমাইল হাটের আড়তদার আতিয়ার রহমান বলেন, সবজির জন্যে স্পেশাল ট্রেন চালুর বিষয়টি আপনার কাছেই শুনলাম। অবশ্য, আমাদের আড়ত থেকে সবজি পাঠানোর জন্যে ট্রাকই ভালো ও সুবিধাজনক। কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য আমাদের আড়তে দিয়ে যান। আর ট্রাক একদম আড়তের সামনে দাঁড়িয়ে লোড দিতে পারে। এতে আমাদের সুবিধা। আর স্টেশনে যাওয়া আমাদের জন্যে কষ্টকর, যদিও ট্রেনে মাল পাঠাতে পারলে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হবো। এদিকে, যশোর রেলওয়ে স্টেশন ত্যাগ করার পর মুন্সী মেহেরুল্লাহ স্টেশনে সবজি ট্রেন থামার কথা। কিন্তু সেখান থেকে স্থানীয় সাংবাদিক তারিক হাসান জানান, সেখানে কোনো সবজি বা ব্যবসায়ী কাউকেই দেখা যায়নি। পরের স্টেশন ঝিনাইদহের বারবাজার। সাতমাইল বারবাজার এলাকার সবজি চাষি বা ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনের জন্যে এটি সুবিধাজনক। এই স্টেশনের মাস্টার মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বারবাজার স্টেশন পার হয়েছে বিশেষ ট্রেনটি। এই স্টেশন থেকে কোনো সবজি ওঠেনি।’ মুন্সী মেহেরুল্লাহ স্টেশন থেকে উঠেছে কিনা জানেন না তিনি। রেলস্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, যশোরের সবজি চাষি, প্রতি সপ্তাহে মঙ্গল বার বিশেষ এ ট্রেন চলাচল করবে। এজন্য ব্যবসায়ী পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি বিভাগকেও নতুন সার্ভিস সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রথম দিন হিসেবে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। তবে আগামীতে সাড়া পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী আমরা। তিনি আরও বলেন, কৃষক বা ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি সবজি বা পণ্য ১ টাকা ৪০ পয়সা ভাড়ায় ঢাকায় নিতে পারবেন। সাশ্রয়ী ভাড়া হিসেবে ট্রেনকে ব্যবহারের জন্য তিনি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। সবজির বিশেষ ট্রেনের বিষয়ে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুশান্ত তলরদার বলেন, সবজি পরিবহনের জন্যে বিশেষ ট্রেনের খবর আমরা জানি। সম্প্রতি যশোর সদরের আব্দুলপুর গ্রামের সবজি চাষিদের নিয়ে একটি ট্রেনিংয়ে এ বিষয়ে সঙ্গে কথা হয়েছিল। তারা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। যেহেতু ট্রেনে পণ্য পাঠাতে খরচ কম, সে কারণে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এদিকে, ট্রেনের পরিচালক জুলহাস উদ্দিন জানান, খুলনা থেকে ৬৪০ কেজি পণ্য নিয়ে তারা ট্রেনটি ছেড়েছেন। যশোরে ১০ মিনিটের যাত্রাবিরতি ছিল। এখানে কোনো পণ্য পাওয়া যায়নি। তবে আগামীতে পণ্য আসবে বলে তিনি আশাবাদী। ৭ বগির স্পেশাল এই ট্রেনটি যশোর ছাড়াও মুন্সী মেহেরুল্লাহ স্টেশন, বারবাজার, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, সফদারপুর, আনসরবাড়িয়া, উথলি, দর্শনা প্রভৃতি স্টেশনে থামবে। সবজি নিয়ে রাত ১০টার দিকে ট্রেনটি ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁ ও কমলাপুর স্টেশনে থামবে। এই ট্রেনটি মঙ্গল বার খুলনা, বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় ও শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় কৃষিপণ্য নিয়ে যাতায়াত করবে। এই ট্রেনে প্রতি কেজি সবজি ও কৃষিপণ্য বহনে ১ টাকা ০৮ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৪৭ পয়সা খরচ পড়বে। এতে খুশি ব্যবসায়ীরা। প্রথম দিন খুলনা থেকে ৭টি বগিতে ৬৪০ কেজি পণ্য নিয়ে ছেড়ে গেছে বিশেষ ট্রেন। এই ট্রেনের মাধ্যমে প্রতিদিন ১২০ টন পণ্য আনা নেওয়ার সুবিধা মিলবে।