সমাবেশে যোগ দিলেই মিলবে লাখ টাকার ঋণ : শাহবাগে জড়ো হলেন শত শত মানুষ
# প্রলোভনটি ছিল এরকম : ‘বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে’- আর এই ঋণ পেতে হলে এক হাজার টাকা ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে # লক্ষীপুরেও বাসসহ ৭ গাড়ি জব্দ #
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ ‘বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে’- আর এই ঋণ পেতে হলে এক হাজার টাকা ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরপর প্রত্যেককে অংশ নিতে হবে শাহবাগের সমাবেশে- এমন শর্ত দিয়ে দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীর শাহবাগে লক্ষাধিক মানুষকে জড়ো করার চেষ্টা করে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান’ নামের একটি সংগঠন। অভিযোগ উঠেছে, দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান’ মানুষ এনে শাহবাগে জড়ো করেছে। যদিও পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়া মানুষদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছে। জানা গেছে, ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান’ নামের সংগঠনটি সারা দেশের খেটে খাওয়া গরিব মানুষগুলোকে টার্গেট করে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত এনে সেগুলো বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। এর বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ জনপ্রতি এক হাজার করে টাকাও হাতিয়ে নেয় তারা। রবিবার রাত ১টার পর থেকেই সারা দেশ থেকে বাস, পিক-আপ ও মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় আসতে শুরু করে সাধারণ মানুষেরা। তবে বেশির ভাগই জানেন না, কী হবে। শুধু জানেন শাহবাগে আসলে সুদমুক্ত ঋণ পাওয়া যাবে। এদিকে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ প্রশাসনকে দুষছেন সচেতন মানুষরা। তারা বলছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, গতকাল রাতে ঢাকায় অন্তত ৮০০ বাস ঢুকেছে। শাহবাগে আন্দোলন করতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসব লোকজনকে আনা হয়েছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চক্র। গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ প্রশাসন কী করে?
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের সংগঠনটি আমাদের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ করার জন্য অনুমতিও চেয়েছিল। আমরা তাদের অতীত ঘেঁটে দেখলাম, অতীতেও এদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এরা এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ লোকদের থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গাইবান্ধা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ সারা দেশ থেকে তারা লোকজন নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, আমরা রাত ১২টার পর থেকেই বাসের মানুষগুলো প্রতারণার শিকার হয়েছে এটি বুঝিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছি। কিন্তু একের পর এক বাস আসছেই। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকও করা হয়েছে।
লক্ষীপুরে বাসসহ ৭ গাড়ি জব্দ ঃ ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিলেই সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার কথা বলে লক্ষ্মীপুরের হতদরিদ্র মানুষদের প্রলোভন দেখানো হয়। রোববার (২৪ নভেম্বর) রাতে ‘অহিংস আন্দোলন বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের কথিত সেই সমাবেশে নেওয়ার জন্য কমলনগর উপজেলার ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ-কিশোর-কিশোরীকে একত্রিত করা হয়। জেলার কমলনগর উপজেলার করইতলা বাজারে ঘটনাটি ঘটে। রাতেই স্থানীয়রা তাদেরকে ঘেরাও করে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে ৩টি চেয়ারকোচ বাস ও ৪টি মাইক্রোবাস জব্দ করে। এ সময় ১১ জনকে আটক করা হয়। তবে তাদের নাম পরিচয় জানায়নি পুলিশ। সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাসযাত্রী নারী-পুরুষরা জানায়, একটি চক্র সোমবার ঢাকার শাহবাগ কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হতে তাদের উদ্বুদ্ধ করে। ঋণের আবেদন ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা এক হাজার টাকা করে নিয়েছে। ঋণপ্রত্যাশী ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য দেওয়া হয়েছে টোকেন। টোকেনধারী সবাইকে দেওয়া হবে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ। আলেয়া বেগম নামে এক নারী জানান, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা শাহবাগে একটি সমাবেশে যোগ দিতে লোকজন নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।সেখানে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নিকট তারা প্রস্তাব দেবেন। ওই টাকা থেকে তাদের মতো গ্রামের নারী-পুরুষদের ১ লাখ থেকে বড় অংকের টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। করইতলা বাজার এলাকার বাসিন্দা মোরশেদ আলম বলেন, ৫ আগস্টের কয়েক দিন পর থেকে একটি চক্র গ্রামের মানুষদেরকে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার নাম করে সংগঠিত করছিল। ঘটনার সময় সেই চক্রের আহ্বানে ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ ঢাকায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠেন। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেয়।
তোরাবগঞ্জ গ্রামের গৃহবধূ নাছিমা ও রৌশন বেগম জানান, গাড়ি ভাড়া হিসেবে তিনি ১ হাজার টাকা দিয়েছেন। আরও অনেকের কাছ থেকেই এভাবে টাকা নিয়েছে স্থানীয় সংগঠকরা। কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৩টি বাস ও ৪ টি মাইক্রোবাস জব্দ আছে। তবে মূল হোতাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। তারা ঢাকায় আছে। মাঝে মাঝে এসে ফরম পূরণ করে চলে যায়। তারা এখানকার হতদরিদ্র মানুষদেরকে ১ হাজার টাকায় সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছে। এতে তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন সমাবেশ করতে চেয়েছিল। ডিএমপির সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনো সমাবেশ হয়নি, হবেও না। প্রসঙ্গত, দুর্নীতিবিরোধী বিশেষ আইন প্রণয়ণের দাবিতে ২৫ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংহতি সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। এ নিয়ে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানান সমাবেশের আয়োজক সংগঠনের সদস্য মো. মাহবুবুল আলম চৌধুরী।