জাতীয় সংবাদ

অসুস্থ বাবাকে বনে ফেলে গেলেন মেয়ে, উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলেন ওসি

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ ষাটোর্ধ্ব অসুস্থ বাবা সাকিব আলী সরদারকে নিয়ে এসেছিলেন গাজীপুরের বয়স্ক পুনর্বাসনকেন্দ্রে। বৃদ্ধ বাবার অসুস্থতার কারণে ওই পুনর্বাসনকেন্দ্রে রাখতে অনীহা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। কোনও উপায় না পেয়ে হোতাপাড়া এলাকার বিমানবাহিনীর ঘাঁটির উত্তর পাশের গজারি বনে বৃদ্ধকে ফেলে রেখে চলে যায় বড় মেয়ে ও জামাতা। সেখানে ২ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধকে গজারি বনে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। তিন দিন পর স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ওসি আব্দুল হালিম বৃদ্ধকে গজারি বন থেকে উদ্ধার করেন। তিনি এখন গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃদ্ধ সাকিব আলী সরদার শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার চরডিপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। তিনি পেশায় চালক (ড্রাইভার) ছিলেন। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় তার বড় মেয়ের বাসায় বসবাস করতেন। গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ওসি আব্দুল হালিম জানান, সাকিব আলী সরদারের সম্পত্তি তার ছেলে লিখে নেয়। এরপর থেকে ছেলে ভরণপোষণ না দিলে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় বড় মেয়ের কাছে এসে আশ্রয় নেন তিনি। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে মেয়ে ও মেয়ের জামাতা বৃদ্ধের আরেক মেয়ে ও ছেলের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ি বয়স্ক পুনর্বাসনকেন্দ্রে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ২ ডিসেম্বর মেয়ে ও জামাতা তাকে বয়স্ক পুনর্বাসনকেন্দ্রে নিয়ে আসলে অসুস্থ থাকায় বৃদ্ধকে রাখতে অপারগতা জানায় কর্তৃপক্ষ। পরে তারা স্থানীয় বিমানবাহিনীর ঘাঁটির উত্তর পাশের গজারি বনে ফেলে যায় বৃদ্ধকে। সেখানে তিন দিন পড়ে থাকায় বৃদ্ধ মলমূত্র করে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে জঙ্গলে বৃদ্ধকে পড়ে থাকার খবর পেয়ে তিনি (ওসি) উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোবারক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জনবল না থাকা এবং ফান্ড (বাজেট) না থাকায় তাদের পক্ষে এ বিষয়ে কোনোকিছু করার নাই বলে জানিয়ে দেন ওসিকে। পরে তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে দিয়ে বৃদ্ধকে গজারি বন থেকে উদ্ধার করে তাকে গোসল করিয়ে ৪ ডিসেম্বর রাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখেন। তিনি আরও জানান, গজারি বনে বৃদ্ধকে অনেক নোংরা অবস্থায় পাওয়া যায়। তার পায়ে মলমূত্র লেগে ছিল এবং প্রস্রাবের রাস্তায় ক্যানুলা লাগানো ছিল। বিষয়টি উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে জানালে তিনি বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা বলে বৃদ্ধের দায়িত্ব নিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। তিনি সার্বক্ষণিক হাসপাতালে বৃদ্ধের চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং ফলমূলসহ খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর বৃদ্ধকে বয়স্ক পুনর্বাসনকেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করবেন এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে জানান ওসি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button