মাঝরাতে ইজতেমা মাঠে সাদ পন্থীদের হামলায় : নিহত ৪

# আহত শতাধিক
# ১৪৪ ধারা জারি
# জড়িত কাউকে ছাড় নয় : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
প্রবাহ রিপোর্ট : টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠের দখলকে কেন্দ্র করে যোবায়ের ও সাদপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষে ৪ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক। তাবলিগ জামাতের যোবায়েরপন্থিদের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান ও মাওলানা সাদপন্থিদের মিডিয়া সমন্বয়ক আবু সায়েম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে নিহতরা হলেনÍকিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামের বাচ্চু মিয়া (৭০) ও ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকার বেলাল (৬০)। আরেকজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। আহতরা হলেনÍআ. রউফ (৫৫), মজিবুর রহমান (৫৮), আ. হান্নান (৬০), জহুরুল ইসলাম (৩৮), আরিফ (৩৪), ফয়সাল (২৮), তরিকুল (৪২), সাহেদ (৪৪), উকিল মিয়া (৫৮), পান্ত (৫৫) টঙ্গী, খোরশেদ আলম (৫০) বেলাল (৩৪), আনোয়ার (৫০), আবু বক্কর (৫৯), আরিফুল ইসলাম (৫০), আনোয়ার (২৬), আনোয়ার (৭৬), ফোরকান আহমেদ (৩৫), আ. রউফ (৫৫) মজিবুর রহমান (৫৮), আ. হান্নান (৬০), জহুরুল ইসলাম (৩৮), আরিফ (৩৪), ফয়সাল (২৮), তরিকুল (৪২), সাহেদ (৪৪)। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে সাদপন্থিরা তুরাগ নদীর পশ্চিম তীর থেকে কামারপাড়া ব্রিজসহ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করতে থাকেন। এ সময় মাঠের ভেতর থেকে যোবায়েরপন্থিরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। জবাবে সাদপন্থিরাও পাল্টা হামলা চালান। একপর্যায়ে সাদপন্থিরা মাঠে প্রবেশ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে তিনজন নিহত ও শতাধিক মুসল্লি আহত হন। সাদপন্থিদের প্রভাবশালী মুরুব্বি মুয়াজ বিন নূর এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, আমরা এখন ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণে আছি। যোবায়েরপন্থিদের আক্রমণে আমাদের তিন ভাই শহীদ হয়েছেন। ময়দানে অনেক যোবায়েরপন্থি চাকু ও ছোড়াসহ আটক হয়েছেন বলে দাবি করেন মুয়াজ বিন নূর। ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষে হতাহতদের টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সিনিয়র ব্রাদার হাফিজুল ইসলাম এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছেন। আহতরা হাসপাতালে আসছে। টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলান্স চালক আশরাফুল ইসলাম জানান, ঢাকায় নেওয়ার পথে বেলাল নামে একজন মারা গেছেন। তার বাড়ি ঢাকার বেড়াইদ। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষ: ১৪৪ ধারা জারি ঃ সাদ ও জুবায়েরপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ডা. নাজমুল করিম খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। পত্রে উল্লেখ করা হয়, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন ২০১৮ এর ৩০ ও ৩১ ধারায় পুলিশ কমিশনারকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের ৩ (তিন) কিলোমিটার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এলাকায় নিম্নলিখিত আদেশ বলবৎ থাকবে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ডা. নাজমুল করিম খান বলেন, মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আদেশে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ব ইজতেমা মাঠে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইজতেমা মায়দানসহ আশপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে ঘোরাফেরা বা জমায়েত এবং মিছিল সমাবেশ করতে পারবে না, কোনো প্রকার অস্ত্র-শস্ত্র, ছুরি, লাঠি, বিস্ফোরক দ্রব্যাদি বা এ জাতীয় কোনো পদার্থ বহন নিষিদ্ধ এবং কোনো প্রকার লাউডস্পিকার ব্যবহার বা উচ্চস্বরে শব্দ করা যাবে না।
জড়িত কাউকে ছাড় নয় : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে মাওলানা জুবায়ের আহমেদ ও মাওলানা সাদ কান্দলভির অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন এবং ৫০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সাদ ও জুবায়েরপন্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
মামলার পর জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ইজতেমা মাঠে হত্যাকা-ে যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো ছাড় দেওয়ার অবকাশ নেই।
সাদপন্থীরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ইজতেমার তারিখ সরকার বাতিল করেনি। তারা দুই পক্ষ যদি আলোচনা করে সমাধান করতে পারে, তাহলে সাদপন্থীরা ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন। তারা আলোচনা করুক। প্রসঙ্গত, বুধবার ভোরে গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন নিহত হন। তাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর গ্রামের বাচ্চু মিয়া (৭০) এবং ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার বেরাইদ এলাকার বেলাল (৬০)। নিহত বাকি দুজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।



