জাতীয় সংবাদ

‘শহীদ মিনার থেকে মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন

প্রবাহ রিপোর্ট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আমরা চাই, মুজিববাদী সংবিধান কবরস্ত করা হোক। যেখান থেকে এক দফা ঘোষণা করা হয়েছে, সেখান থেকে মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভুলেশন’ ঘোষণা করতে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ওইদিন বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘোষণা দেবেন তারা। এই ঘোষণাপত্রে কী কী বিষয় থাকবে তা জানাতে গতকাল রোববারএক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বিস্তারিত তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বেটার লেট দেন নেভার। আমাদের অভ্যুত্থান বিপ্লবের যে ঘোষণাপত্র সেটি ৫ আগস্টে হওয়া উচিত ছিল। এটি না হওয়ার কারণে ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তিগুলো মিডিয়ায়, বুদ্ধিজীবী পাড়ায়, সব জায়গায়– আমরা যাদের উৎখাত করেছি, বিদেশে বসে তারা ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। এটা এক ধরনের বৈধতাকে প্রশ্ন তুলছে। ২ হাজার শহীদ এবং ২০ হাজারের বেশি আহতের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে তারা এই অভ্যুত্থানের বৈধতাকে প্রশ্ন করছে।’ তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে মানুষ ৭২-এর মুজিববাদী সংবিধানের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। এই যে মানুষের বিপরীত অবস্থান, এটির একটি আইনগত নথি থাকা উচিত। সেই জায়গা থেকে আমরা আগামী ৩১ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে যে গণআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে এবং ৭২-এর সংবিধানের বিপরীতে গিয়ে মানুষ যে রাস্তায় নেমে গিয়েছে সেটির প্রাতিষ্ঠানিক, দালিলিক স্বীকৃতি ঘোষণা করবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভুলেশনে পরবর্তী বাংলাদেশের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, অভিপ্রায়, লক্ষ্য এবং ইশতেহার লিপিবদ্ধ থাকবে। এটি কোনও দলের না, কোনও শ্রেণির না। আমাদের স্বপ্নগুলো ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্তরে বঞ্চিত হয়েছে, আমরা প্রতারিত হয়েছি, এই প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভুলেশনের মধ্যে দিয়ে আর যেন বঞ্চিত না থাকে। গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের ইশতেহার জাতির সামনে ঘোষণা করা হবে।’ সংবাদ সম্মেলণে সারজিস আলম বক্তব্যে রেখে বলেন, ‘১৬ বছরের নিপীড়ন শেষে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে একটি যৌক্তিক আন্দোলন শুরু হলো। এটি ৫ আগস্টে গিয়ে শেষ হয়। এটি বিপ্লবই। বিপ্লবের প্রথম যেই ধাপ, তার একটি অতিক্রম করেছি আমরা।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতারা বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের যে ঘোষণাপত্র, সেটি অবশ্যই আরও আগে ঘোষণা করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পুরো দেশের রাষ্ট্রীয় যে সিস্টেম, এই দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমকে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে এসে, সেখান থেকে কিছু করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সিস্টেমকে সুন্দরভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যে সহযোগিতা প্রয়োজন, রাষ্ট্র এই মুহূর্তে সিস্টেমের সবার কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী তা পাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে মানুষ কীভাবে অন্যায় অত্যাচার, নিপীড়নের শিকার হয়েছে, কোন ঘটনার প্রেক্ষাপটে এই অভ্যুত্থানটি সংঘটিত হয়েছে, মানুষ জীবনের মায়া না করে, রক্তের মায়া না করে, রাজপথে নেমেছে এবং খুনি হাসিনার পতন হয়েছে। মানুষের নামার পেছনে কিছু কারণ ছিল। প্রত্যেক মানুষের মনে কিছু আকাঙ্ক্ষা ছিল, স্বপ্ন ছিল, একটা স্পিরিট ছিল। এই স্পিরিটগুলো কী ছিল এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের জুলাই বিপ্লব, এই বিল্পব থেকে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা কী, আশা-আকাঙ্ক্ষা কী, এই সামগ্রিক বিষয়গুলো একটি ঘোষণাপত্রে লিখিতভাবে লিপিবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। এই ঘোষণাপত্র পুরো বাংলাদেশের একটি লিখিত দলিল হিসেবে থাকবে। সেই দলিল আমাদের নতুন স্বপ্নকে ধারণ করবে, বিগত সিস্টেমগুলোকে প্রত্যাখান করবে, নতুন যে সিস্টেম আমরা প্রত্যাশা করি সেগুলোকে বাস্তবায়নের পথ দেখাবে।’তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে যে বিষয়গুলো মানুষ নিজের জায়গা থেকে গ্রহণ করেনি এবং আগামীতে মানুষ যে সিস্টেম চায়, তার মধ্যে একটি পার্থক্য তৈরি করবে ঘোষণাপত্র। আগামীতে মানুষের দায়িত্ব যারা ভোটের মাধ্যমে গ্রহণ করবে, তাদের ক্ষেত্রেও এটি একটি নির্দেশিকা হিসেবে থাকবে। সেই বিষয়গুলো আমরা প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভুলেশনে লিপিবদ্ধ করবো। আমরা ইতোমধ্যে এটির একটি খসড়া তৈরি করেছি। এই বিপ্লবের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, দল-মত নির্বিশেষে সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে, সংশোধন, পরিমার্জন করা হচ্ছে। এই বিপ্লব যেমন ফ্যাসিস্টবিরোধী সবাইকে ধারণ করতে পেরেছিল, আমাদের ঘোষণাপত্রও সবার আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারবে বলে আশা করি। এটি আগামীর বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র।’

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button