জাতীয় সংবাদ

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

এফএনএস: আজ মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ত্রয়োদশ দিবস। একাত্তরের এই দিনে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অনেক দূর এগিয়ে যায়। বলা যায়, কেবল আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল। দলে দলে মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ, পলায়ন এ অঞ্চলের মানুষকে দারুণভাবে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। বিজয়কে একরকম নিশ্চিত করেছিল।
এদিন রামগতিতে পাকিস্তানী সেনাদের পরাজয় ঘটেছিল। ফেনী মুক্ত করার পর মুক্তিবাহিনীর একটি দল চট্টগ্রামের উদ্দেশে কুমিল্লা পৌঁছেছিল দুপুর ১২টায়। চতুর্থ ও নবম বেঙ্গলের মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামকে শত্রুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে। সাত নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা হিলি থেকে বগুড়া হয়ে দিনাজপুরের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। নাটোরের লালপুর সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পদ্মা নদী পার হয়ে এ সময় রাজশাহী আক্রমণ করেন। পরাজিত হয় পাকবাহিনী। তারা রাজশাহী ছেড়ে নাটোরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। শেখপাড়া সাব-সেক্টরের মুক্তিবাহিনী পাবনা অভিমুখে এগিয়ে যায়। চার নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনী সেদিন সিলেটের পথে হরিপুর মুক্ত করেছিল।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স আশংকা করে বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শিগগিরই যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। তিনি ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ চায় না। তবে যুদ্ধ বাঁধলে সে তাতে জড়িয়ে পড়বে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বললেও এই দিনই ২৪ ঘণ্টা থেমে থাকার পর বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর। একাত্তরের এই দিনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মূলতবী বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব তৃতীয়বারের মতো সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো দেয়ার ফলে বাতিল হয়ে যায়।
এদিকে রাজধানী ঢাকাকে মুক্ত করতে জোর প্রচেষ্টা চলছিল। ডেমরার পর এস ফোঁর্সকে প্রবল বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টা পর্যন্ত সেখানে যুদ্ধ চলে। অন্যদিকে, প্রকাশ্য ঘোষণা না দিলেও ১৩ ডিসেম্বর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের পাকিস্তানী অধিনায়ক লে. জেনারেল একে নিয়াজীসহ সেনা কর্মকর্তা আত্মসমর্পণ করার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন। ভারতীয়দের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল পরদিন ১৪ ডিসেম্বর।
একাত্তরে আজকের এই দিনে মুক্তিবাহিনীর অব্যাহত অগ্রযাত্রায় স্বাধীন পতাকা উড়ানো হয় বগুড়া জেলা শহর ও কাহালু উপজেলা, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, মানিকগঞ্জ শহর ও ধামরাই উপজেলা, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও নাটোরের লালপুরসহ আরো কয়েকটি জনপদে। দখলদারমুক্ত হওয়ায় ঘটনাগুলো প্রতি মুহূর্তেই মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকদের মনে উদ্যম ও শক্তি সঞ্চার করে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button