সম্পাদকীয়

চিকিৎসাসেবার ওপর আস্থা ফেরাতে হবে

বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর প্রায় এক কোটি মানুষ মারা যায় ক্যান্সারের কারণে। বাংলাদেশেও নানা ধরনের ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ছে। ক্যান্সার হওয়ার ক্ষতির কারণগুলো আগের চেয়ে বেড়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো কম বয়সীরাও ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার বেড়ে যাওয়ায় ব্যক্তি থেকে শুরু করে সামষ্টিকভাবে আর্থিক ও মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে ঠিক কত সংখ্যক মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং প্রতি বছর এতে মৃত্যু হচ্ছে তার সরকারি হিসাব নেই। তবে দেশে এ মুহূর্তে ১৫ লাখের বেশি ক্যান্সারের রোগী রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি। ক্যান্সার রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এ দেশে বছরে অন্তত তিন থেকে চার লাখের মতো মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে দেড় লাখ। এ হিসাব কোথাও তালিকাভুক্ত হচ্ছে না।
আমাদের দেশে প্রাক্কলিত রোগীর সংখ্যার চেয়ে কয়েক গুণ ক্যান্সার রোগী বছরে রোগ শনাক্তের বাইরে থেকে যায়। ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর তুলনায় দেশে সরকারি বা বেসরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা উন্নত না হওয়ায়। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রায় ২০ লাখের মতো বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর বিদেশে যায়। প্রতি বছর সাত লাখ বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্য ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে যায়। এতে ব্যয় হয় ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা যা আছে, তা একদিকে অপ্রতুল এবং অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ব্যয়বহুল। বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় সরকারি এই হাসপাতালে খরচ কিছুটা কম। কিন্তু লম্বা সময় ধরে সেটাও সামাল দিতে আক্রান্তদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আক্রান্তদের তথ্য মতে, চিকিৎসা ব্যয় সামলাতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করে অনেক পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। তারপরেও মিলছে না সঠিক স্বাস্থসেবা। হাসপাতালগুলোতে জনবলের অভাব তো রয়েছেই, যন্ত্রপাতির অভাবও অত্যন্ত প্রকট। যে সামান্যসংখ্যক যন্ত্রপাতি আছে, সেগুলোও সব সময় কার্যক্ষম থাকে না। বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে কমপক্ষে ১৮০টি রেডিওথেরাপি মেশিন থাকা প্রয়োজন। সেখানে বাস্তবে চালু আছে মাত্র ছয়টি, তা-ও পূর্ণাঙ্গ মাত্রায় নয়। একটি দেশের ক্যান্সার চিকিৎসার এই হাল অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই আমরা আশা করি, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপিসহ ক্যান্সার চিকিৎসার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে দ্রুত উদ্যোগ নিবে। একই সঙ্গে চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করতে হবে। যে করেই হোক, দেশে চিকিৎসাসেবার ওপর আস্থা ফেরাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button