সম্পাদকীয়

বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন

অকারণে বেড়েছে চালের দাম

নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে চলতি আমন মৌসুমের চাল উৎপাদন। বাজারে চালের সরবরাহও রয়েছে পর্যাপ্ত। কিন্তু তারপরও হঠাৎ করে মিলাররা বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর প্রভাবে বাজারে চালের দাম বেড়েছে আরো বেশি। চালের দামের এমন উল্লম্ফনে হতবাক ক্রেতারা। অতীতে দেখা গেছে, বাজারে চালের দাম বাড়লেও তা বাড়ে একবারে বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে। এবার নির্বাচনের পরপরই এমন কী ঘটল যে বস্তাপ্রতি দাম বেড়ে গেল ৩০০ টাকা পর্যন্ত? চালের বাজারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছেও এই প্রশ্নের উত্তর নেই। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে এক কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। মোট ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ৫৭ লাখ ২৭ হাজার হেক্টর জমির। এখান থেকেই চাল উৎপাদিত হয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ ৯৩ হাজার টন। বাকি প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির ধান কাটা হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি চাল পাওয়া যাবে। দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের যুক্তি বা অজুহাতের অভাব হয় না। বর্তমান মূল্যবৃদ্ধিরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন চাল ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকরা। তাঁদের দাবি, এবার বাড়তি দামে ধান কিনতে হয়েছে, তাই চালের দাম বেশি হচ্ছে। কিন্তু যে ব্যাখ্যাটি তাঁরা দেননি, তা হলো তাঁরা ধানে কতটা বেশি দাম দিয়েছেন এবং সেই অনুপাতে চালের দাম কতটা বেশি হওয়া উচিত। আমরা মনে করি, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তা যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। অতিরিক্ত দাম বাড়ানো হয়ে থাকলে তা কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে মিলাররা দাম বাড়িয়েছেন শুনেই সারা দেশের সব ব্যবসায়ী আগের কেনা চালের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন। চাল এখনো দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। এই পণ্যটির হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধিতে সারা দেশেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। সেই প্রতিক্রিয়া নতুন সরকারের জন্যও সুখকর হবে না। তাই চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। টিসিবি, ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) বা অনুরূপ উদ্যোগের মাধ্যমে সরকারের মজুদ থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল বাজারে ছাড়তে হবে। প্রয়োজনে চাল আমদানি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, আমদানির অনুমতি যেন চাল সিন্ডিকেটের লোকজনের হাতেই চলে না যায়। অতীতে দেখা গেছে, শুল্ক হ্রাস করে ৯ লাখ টনের বেশি চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও এক মাসেরও বেশি সময়ে আমদানি হয়েছিল মাত্র সাড়ে চার হাজার টন। একই চিত্র দেখা গেছে ডিম আমদানির ক্ষেত্রেও। তেমনটি যেন না হয়, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা মনে করি, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার বাজারে কার্যকর উপায়ে হস্তক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি সিন্ডিকেট ও অন্যান্য অপচেষ্টা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button