সম্পাদকীয়

সাধারণের জন্য নিশ্চিত করুন

সরকারি চিকিৎসাসেবা

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস এর একটি জরিপ থেকে জানা গেছে, দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীরা প্রয়োজনের মাত্র ১.৬২ শতাংশ ওষুধ বিনা মূল্যে পায়। বাকি ওষুধ রোগীদের নিজ খরচে কিনতে হয়। শুধু তা-ই নয়, রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার একটা বড় অংশই করাতে হয় বাইরের ক্লিনিক থেকে উচ্চমূল্যে, যার ফলে দরিদ্র অনেক রোগী সেই ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না। তারা হয় বিনা চিকিৎসায় থাকছে, না হয় কবিরাজি কিংবা বিকল্প চিকিৎসার আশ্রয় নিচ্ছে। বর্তমানে চিকিৎসার যে হাল তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। অনেকের মতে, জনস্বাস্থ্যের অবস্থা দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয় ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকায় অনেক দরিদ্র মানুষ চিকিৎসাসেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে। বিবিএসের সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপে প্রাপ্ত তথ্যে বলা হয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ গ্যাস্ট্রিক, রক্তচাপ, বাতজ¦র, হাঁপানি ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলেও তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কোনো ধরনের চিকিৎসাই নেয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে স্বাস্থ্য ব্যয়ে সরকারের অংশ ক্রমান্বয়ে কমে ব্যক্তির নিজস্ব খরচ বেড়েছে। খরচ বাঁচাতে বেশির ভাগ মানুষ এখন চিকিৎসকের কাছে যায় না। নিজেরাই দোকান থেকে ওষুধ কিনে খায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্য মতে, চিকিৎসাপ্রার্থীদের ৬৪.৬ শতাংশ অর্থই ব্যয় হয় ওষুধের পেছনে। বাকি ব্যয় হয় রোগ নির্ণয় বা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসক দেখানো, হাসপাতালে ভর্তি এবং অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সেবা নেওয়ার পেছনে। ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে স্বাস্থ্য ব্যয়ে সরকারের অংশ ছিল যথাক্রমে ২৮, ২৬ ও ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিবছরই তা কমেছে। এই বছরগুলোতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৬৪, ৬৬ ও ৬৯ শতাংশ, অর্থাৎ ক্রমেই বেড়েছে। এমনটি কেন হবে? এটি তো ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। ২০১২ সালে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট যে কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছিল, তাতে বলা হয়েছিল, ক্রমান্বয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমিয়ে আনা হবে এবং ২০৩২ সালে তা হবে মাত্র ৩২ শতাংশ। বাস্তবে দেখছি তার উল্টোটা। ক্রমেই তা বাড়ছে। যদিও সরকার স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সাধারণ মানুষ তার সুফল খুব একটা পাচ্ছে না। চিকিৎসার জন্য ব্যক্তির নিজস্ব খরচ এখনো অনেক বেশি এবং ক্রমেই তা বাড়ছে। আমরা আশা করি, এবিষয়ে সরকার দৃষ্টিপাত করবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button