সম্পাদকীয়

সমস্যায় ধুঁকছে ঢাকা কলেজ

ঢাকা কলেজ প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ঢাকা কলেজে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার ঢাকা কলেজ। দেশের প্রথম আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রায় পৌনে দুই শতাব্দী আগে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা কলেজ। পাশ্চাত্যের কলাবিদ্যা, বিজ্ঞান ও দর্শনকে এ অঞ্চলের বিদ্যার্থীদের সামনে উন্মোচন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। এরপর নানা ঘাত-প্রতিঘাতেও শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি তার অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিয়ে গেছে, যার সোনালি ফসল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। উনিশ শতকে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা কলেজ। তবে সময়ের বিবর্তনে প্রতিষ্ঠানটির সেই ঐতিহ্য এখন অনেকটাই ম্লান। জরাজীর্ণ অবকাঠামোর সঙ্গে মলিনতায় ঢাকা পড়ছে শিক্ষার মান। শ্রেণীকক্ষ, লাইব্রেরি, শিক্ষার পরিবেশ ও পাঠদান থেকে আবাসন-সবকিছু নিয়েই ছাত্রদের রয়েছে নানা অভিযোগ। পুরনো ভবনগুলোর অধিকাংশ দেয়ালেই দেখা দিয়েছে ফাটল। কোথাও কোথাও খসে পড়েছে ছাদের পলেস্তারা, বেরিয়ে এসেছে রড। বেশির ভাগ রুমের দরজা-জানালার অবস্থা নাজুক। লোডশেডিং হলে দিনের বেলায়ও পুরো ভবনে নেমে আসে রাতের আঁধার। এছাড়াও স্নাতক পর্যায়ে চাহিদানুসারে শ্রেণীকক্ষ, ল্যাব, ব্যবহারিকের সরঞ্জামাদি ও আবাসনের সুযোগ-সুবিধার প্রচ- ঘাটতি। অনেক বিভাগেই সেশন অনুযায়ী পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ ও ল্যাব সুবিধা নেই। ফলে এক বর্ষের পরীক্ষা শুরু হলে অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষার সুযোগ থাকে না। একমাত্র লাইব্রেরিটিতেও নেই পর্যাপ্ত আসন। আবাসন সংকটও তীব্র। ছাত্রাবাসগুলোর প্রতিটি কক্ষেই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী, থাকতে হয় গাদাগাদি করে। ক্যাফেটেরিয়া ও ডাইনিংয়ের খাবারও বেশ নিম্নমানের। শিক্ষার্থীদের মুখ্য উদ্দেশ্য পড়ালেখা হলেও অধিকাংশ রুমেই পড়ার পরিবেশ নেই। এ ছাড়া অধিকাংশ ছাত্রাবাসেই শিক্ষার্থীদের খাবার তৈরি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। এমনকি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার মান নিয়েও। একসময় যেখান থেকে দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানের বিভাগগুলোয় এখন ল্যাব কক্ষের সংকট; নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগসহ অধিকাংশ বিভাগেই ল্যাব কক্ষের সংখ্যা একটি বা দুটি, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে এক বর্ষের শিক্ষার্থীরা ল্যাব ক্লাস করলে অন্য বর্ষের ছাত্রদের অপেক্ষায় থাকতে হয়। তাই শিক্ষার মান বজায় রাখতে এবং প্রাচীন এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ আরো বাড়ানো উচিত। যেহেতু ‘দেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঢাকা কলেজের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ফলে শিক্ষার মান বজায় রাখতে এবং আরো সমৃদ্ধ অবস্থানে যেতে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো আবাসন ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত জরুরি। এর জন্য কলেজের পাশাপাশি সরকারকেও উদ্যোগী হতে হবে। কলেজটিতে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে বরাদ্দসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।’

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button