খুলনায় বিআইডব্লিউটিএ’র উচ্ছেদ অভিযানে হামলা

সড়ক অবোরোধ, আহত ৩, অভিযান স্থগিত, ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন
স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা নগরীর শিপইয়ার্ড সড়কে বিআইডব্লিউটিএয়ের উচ্ছেদ অভিযানে হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে কাঠ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের বাধা-হামলার মুখে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিআইডব্লিউটিএ। স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘ ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে তারা খুলনা নগরীর পশ্চিম রূপসা নদীর তীরে কাঠের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। ২০০৭ সালে তারা তাদের ব্যবসার স্থান বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছেন। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ তাদের আবেদনে কোনো সাড়া না দিয়ে সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি নোটিশ দেয়। রোববার সকালে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ এলাকায় মাইকিং করে ব্যবসায়ীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এর প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা সোমবার সকাল ১০টায় রূপসা স্ট্যান্ড রোডে মানববন্ধনের আয়োজন করে এবং সড়কে কাঠের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন। বেলা ১১টার আগে সেখানে বিআইডব্লিউটিএ’র ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিমা আক্তারের নেতৃত্বে স্কেভেটর দিয়ে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিলে শ্রমিকরা তাদের ওপর হামলা করেন। এ সময় হামলাকারীরা তাদের দু’টি গাড়ি ভাংচুর করে। হামলায় নুরুল হক, অনুকূল চন্দ্র ও আকতার নামে তিনজন আহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিআইডব্লিউটিএ খুলনার উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা নিয়ম মাফিক সেখানে অভিযান চালাতে যাই। কিন্তু সেখানে অবৈধ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং আমাদের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মেরে আহত করেন। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে রূপসা ষ্ট্রান্ড রোড কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর পক্ষে থেকে রূপসা ষ্ট্রান্ড রোড ব্যবসায়ী ও বসবাসকারী শ্রমিকরা ৫ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। অত্র এলকায় ৫০/৬০ বৎসর যাবৎ কাঠ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে আসছে। কিন্তু কয়েকদিন পূর্বে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ নোটিশ দিয়ে স্থান খালী করার নির্দেশ দেন। সেই নোটিশের প্রেক্ষিতে সোমবার প্রশাসনের লোকজনসহ পুলিশ এবং উচ্ছেদের জন্য যানবাহন আসে। সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ডের জনৈক টিটু নামের এক ব্যক্তি নাকি অত্র আইডব্লিটিএর জমি লীজ নিয়েছেন। মানববন্ধনে লোকের মধ্যে উক্ত টিটু সাহেবের লোকজন ছিল। যারা প্রশাসনের গাড়ীর উপর বিক্ষিপ্ত ভাবে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে সরকারী গাড়ীর ক্ষতিসাধন করে। যার দোষ অত্র ব্যবসায়ীর সমিতির উপর বর্তায়। গাড়ী ভাংচুরের জন্য আমরা কাঠ ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা সরকারী কোন কাজের বিপক্ষে নই। আমাদের দাবী দীর্ঘ দিন যারা ব্যবসা করে আসছে তাদের উচ্ছেদ করে অন্য ব্যক্তির নামে দিলে আমরা মানতে রাজি না। কারণ সরকার যদি উন্নয়ন কাজে নেয় আপত্তি নেই। কিন্তু কোন ব্যাক্তিকে দিলে আমরা মানতে রাজি না। এখানে ব্যবসার সাথে ২৫/৩০ হাজার লোক জড়িত। আমরা যারা ব্যবসা করে আসছি তারা অনেক বার আইডব্লিটি ও বিভিন্ন সরকারী অফিসে নিজেদের নামে কাগজপত্র নিয়া অনুমতির জন্য বন্দোবস্ত পাবার আবেদন করেছি কিন্তু আমাদের দেওয়া হয়নি। এখন অন্য লোকের নামে কিভাবে দেয়। দিলে আমাদের নামে দিতে হবে। মানব বন্ধনে কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ সেলিম কাজী সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালক ছিলেন মোঃ রিয়াজ হুসাইন, বক্তব্য রাখেন ২৯, ৩০, ৩১ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড মহিলা কাউন্সিলর এ্যাডঃ মোসাঃ জেসমিন পারভীন (জলি), ৩০ নংওয়ার্ডের আওয়ামীলীগ সভাপতি এ্যাডঃ মোঃ ফারুক শেখ, মোঃ লোকমান, হাকিম, এম এ খালেক, মোঃ তুরান, মোঃ কাইয়ুম মোল্লা, মেহেদী হাসান, আনোয়ার হোসেন, মোঃ মঈন, মোঃ শহিদুল, মোঃ বুলবুল, মোঃ জামাল, মোঃ লিটন, রেজাউল, হারুন, হীরন ও মোঃ হালিম আকন প্রমুখ। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর (সংরক্ষিত) জেসমিন জলি বলেন, কাঠ ব্যবসায়ীরা তাদের বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির প্রতি কোনো কর্ণপাত না করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। এতে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সদর থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত হয়েছে। ঘটনায় অভিযুক্ত কাউকে আটক করা যায়নি। কাঠের গুড়ি সরিয়ে সড়কে চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন (বিকেল-৫টা) কোন মামলা হয়নি।