বেসরকারি মেডিকেলে ৮৭ শতাংশ আসন ফাঁকা

দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো চরম শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর আয়ের অন্যতম বড় উৎস শিক্ষার্থী ভর্তির অর্থ। একজন শিক্ষার্থী ভর্তি করে কলেজ ফি বাবদ পায় ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। কোনো কোনো কলেজ ভর্তি থেকে আয় করে বছরে ২০ কোটি টাকার বেশি। অভিযোগ আছে, ভর্তির ব্যাপারে কলেজগুলো যতটা মনোযোগ দেয়, শিক্ষার ব্যাপারে তা দেয় না। দেখা গেছে বেসরকারি মেডিকেল থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা অনেকে চিকিৎসা পেশাতেই আসেন না। তাঁরা উচ্চতর ডিগ্রি বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভালো করেন না। বাবা-মায়েরা অনেক টাকা খরচ করে এখন বেসরকারি কলেজে সন্তানদের ভর্তি করাতে চাচ্ছেন না। আগামী ৫ জুন প্রথম বর্ষ এমবিবিএস ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু কলেজগুলোতে এক হাজারের বেশি আসন খালি আছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর একটি অংশের অভিযোগ, শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থানের কারণে কলেজগুলো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। তবে যেসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভালো, তাদের শিক্ষার্থীর অভাব নেই, আসন খালি নেই। বর্তমানে দেশে মোট বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৬৭টি। এর মধ্যে এ বছর এমবিবিএস কোর্সে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আসন রয়েছে ৬ হাজার ২৯৩টি। ভর্তি শেষ হয়েছে গত ১৮ এপ্রিল। কিন্তু এখনো ৮৭ শতাংশ কলেজেই আসন ফাঁকা রয়েছে। অর্থাৎ সরকার বরাদ্দকৃত নির্দিষ্টসংখ্যক আসনগুলোতে প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী পায়নি ৫৮টি কলেজ। এ বছর এখনো আসন অনুযায়ী শতভাগ শিক্ষার্থী পেয়েছে ৯টি কলেজ। ১-৮টি পর্যন্ত আসন ফাঁকা রয়েছে এমন কলেজের সংখ্যা ১০টি। এমনকি ১২টি কলেজে আসন ফাঁকা রয়েছে মোট আসনের ৮২-২৪ শতাংশ পর্যন্ত। বাকি কলেজগুলোতে ফাঁকা রয়েছে ১-১৯ শতাংশ পর্যন্ত আসন। এমনকি এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। এখনো ফাঁকা রয়েছে তাদের জন্য বরাদ্দ আসনের ৩৫ শতাংশ। সরকারি ও বেসরকারি ভর্তি সময়ের মধ্যে একটা ফারাক তৈরি হচ্ছে। সে কারণে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েও পরে ভর্তি হয় না। কারণ বেসরকারিতে পড়তে ইন্টার্নিসহ ২১ লাখ ২০ হাজার টাকা লাগবে। তারা ভাবে এত টাকা দিয়ে না পড়ে তারা সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা করবে। তাছাড়া সব পরিবার তো সচ্ছল না। এসব ভেবে তারা শেষ পর্যন্ত অন্য জায়গায় ভর্তি হয়ে যায়। মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য এত টাকা সেটা তো অবশ্যই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এছাড়াও বেসরকারিতে বেসিক বিষয়ে চরম শিক্ষক সংকট রয়েছে। অনেকে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ব্যয় কমাতে শিক্ষক নিচ্ছে না। এ ছাড়া বেসরকারিতে শিক্ষকদের পদোন্নতি নীতিমালা ও কমন সার্ভিস রুল না থাকায় অনেকে আগ্রহী হচ্ছে না। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএমডিসির মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে নজরদারি বাড়াতে হবে। ল্যাবরেটরি, অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।