জাতীয় সংবাদ

রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

কোটা সংস্কার

প্রবাহ রিপোর্ট : জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটা সংস্কারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল রোববার বিকাল ৩টায় রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেওয়ার পর গুলিস্তানে সমাবেশ করে এ আল্টিমেটাম দেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করব, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, সরকার কিংবা দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ বা বক্তব্য আসে। এটা পর্যবেক্ষণ করে দাবি আদায় না হলে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।” পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জল কামান ভাঙচুরের অভিযোগে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের উপর অজ্ঞাতনামা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে পুলিশকে আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছি; এবার আরও ২৪ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। যদি মামলা তুলে নেওয়া না হয় আমাদের কর্মসূচি আরও কঠোর হবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের এর দায় নিতে হবে।” এর আগে দফায় দফায় পুলিশের বাধা পেরিয়ে বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও এ পদযাত্রায় অংশ নেন। ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীকেও দোয়েল চত্বর ও কার্জন হল এলাকায় অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা ছিলেন। বেলা ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে এই পদযাত্রা শুরু হয়। শাহবাগ, মৎস্য ভবন হয়ে সচিবালয়ের সামনে দিয়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। গণপদযাত্রাটি শিক্ষা ভবনের সামনে পোঁছালে প্রথম পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। সেই বাধা পেরিয়ে শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টে পৌঁছে ফের পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে পড়েন। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবন অভিমুখে এগিয়ে যায় পদযাত্রা। আন্দোলনকারীরা গুলিস্তান পেরিয়ে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইট ও স্টেডিয়াম এলাকায় অবস্থান নেন। সেখান থেকে পুলিশের নিরাপত্তায় শিক্ষার্থীদের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়। স্মারকিলিপিতে তারা শুধু অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা রেখে এ-সংক্রান্ত আইন সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। গণপদযাত্রার ঘোষণা আসে গত শনিবার। গত শনিবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, গতকাল রোববার দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও গণপদযাত্রা করে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন। সারাদেশে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেওয়া হয় সেখানে। হাই কোর্টে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায়ের পর নতুন করে এই আন্দোলন শুরু হয়। গত ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরুতে মানববন্ধন, সমাবেশের মত কর্মসূচি থাকেলেও গত সপ্তাহে সারা দেশে তাদের অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়, যার নাম তারা দিয়েছেন ‘বাংলা ব্লকেড’। গত বুধবার দিনভর অবরোধে নাকাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে। কোটার বিরোধিতায় চার দফা দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এখন এক দফায় এসে ঠেকেছে। আন্দোলনকারীদের এক দফা দাবি হল- সকল গ্রেডে সকল প্রকার ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে নূন্যতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা নিয়ে হাই কোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারির আদেশ দিলেও আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। হাই কোর্টের যে রায়ের পর এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই রায়ের বাস্তবায়নের অংশও ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ সালের আগে থাকা সব কোটা ফিরিয়ে এনে আদালত বলেছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে কোটার হার বা অনুপাত পরিবর্তন করতে পারে। হাই কোর্টের এই রায়ের ফলে কোটা সংস্কারের পথ খুললেও আন্দোলনকারীরা তাদের অবস্থানে অটল। তারা বলছেন, কেবল অনগ্রসরদের জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত কোটা মানতে তারা রাজি আছেন, অন্য কোনো কোটা নয়। আর এ বিষয়টি আইন করে বাস্তাবয়নের বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি চাইছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button