স্থানীয় সংবাদ

অভিভাবক ও এলাকাবাসীর বাঁধার মুখে আড়ংঘাটা স্কুলে যোগদান করতে পারেননি অভিযুক্ত কিরীটী

বিতর্কিত প্রাইমারী শিক্ষক কিরীটী রায়

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনায় প্রাথমিকের বিতর্কিত সহকারী শিক্ষক কিরীটি রায় অভিভাবক ও এলাকাবাসীর বাঁধার মুখে আড়ংঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করতে পারেননি। গতকাল সোমবার সকালে তিনি ওই স্কুলে যোগদান করতে গেলে তার কীর্তিকলাপ এলাকাবাসীর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। একারনে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এই শিক্ষককে যোগদান করতে দিলে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে- এ দাবিতে অভিভাবক ও এলাকাবাসী স্কুলের মেইনগেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একপর্যায়ে বিতর্কিত সহকারী শিক্ষক কিরীটি রায় স্কুলে প্রবেশ করলে বিক্ষোভকারীরা তাকে অবরুদ্ধ করেন। খবর পেয়ে শিক্ষা কর্মকর্তারা ও পুলিশ উপস্থিত হলে এলাকাবাসীর সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষক করীটী রায়কে ওই স্কুল থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। এদিকে, বিতর্কিত এই শিক্ষককে ওই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে না দেওয়া এবং তাকে অনত্র বদলীর দাবীতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও এলাকাবাসী আলাদা আলাদা অভিযোগ দাখিল করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে।
প্রধান শিক্ষক মোঃ এনায়েতুল হক কর্তৃক লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতিদিনের ন্যায় বিদ্যালয়ে এসে দেখি কে বা কারা বিদ্যালয়ের মূল ভবনের প্রধান ফটকে তালা মেরে রেখেছে এবং বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকবৃন্দের বিশাল জমায়েত। পরবর্তীতে অভিভাবকদের সাথে আলাপ করে জানা গেল যে, তারা বিশ্বস্ত মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, সহকারী শিক্ষক কিরীটি রায় এই বিদ্যালয়ে যোগদান করতে আসছেন। কিন্তু তারা এই শিক্ষকের চরিত্র সম্পর্কে আগে থেকেই সম্পূর্ন অবগত আছেন। সে আগে কার্ত্তিককুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিল এটাও তারা অবগত। এমতাবস্থায় তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য আসেন। কিন্তু অভিভাবকবৃন্দ, এলাকাবাসী, স্থানীয় সাংবাদিক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গে তীব্র বাঁধার সমূখীন হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তৎক্ষনাৎ শিক্ষা কর্মকর্তারা বিদ্যালয়ে সরজমিনে পরিদর্শনে আসেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে তাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিক্ষুব্ধ অভিভাবকবৃন্দ, এলাকাবাসী, স্থানীয় সাংবাদিক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে প্রতিশ্রুতি দেন।
অপরদিকে, এলাকাবাসী অভিযোগে উল্লেখ করেন আমরা এলাকাবাসী পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম চরিত্রহীন শিক্ষক কিরীটী রায়কে আড়ংঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক রাখার স্বার্থে উক্ত শিক্ষককে অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করতে দেবো না। উক্ত শিক্ষককে অন্যত্র বদলির অনুরোধ করছি।
এব্যাপারে থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাহান বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতির বিবরণ এবং অভিভাবকদের বক্তব্য ও লিখিত অভিযোগ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এবিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন করা হলে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ওহিদুল আলম ফোন রিসিভ করেনি।
উল্লেখ্য, বিতর্কিত শিক্ষক কিরীটী রায়কে গত ২৯ সেপ্টেম্বর নগরীর উদয়ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নানা অভিযোগে আড়ংঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের ছাত্রীদের শ্লীলতাহানী, নারী শিক্ষকদের হেনস্থা, ইভটিজিং ও ৫ জন নারী শিক্ষকের শরীরের স্পর্শকাতর অংশের ছবি তোলা এবং বদলিকৃত প্রধান শিক্ষকের সাথে খারাপ আচরণের অপরাধ প্রমানীত হওয়ায় তাকে বদলি করা হয় বলে খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে। কিরীটী রায় দীর্ঘদিন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন মামলায় জেল খেটেছেন। গত ১ বছর ধরে তিনি বরখাস্ত আছেন। তালতলা উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকা কালীন তার বিরুদ্ধে অন্তত ৫টি বিভাগীয় মামলা হয়েছে। কয়েকটি মামলার সাজা এখনও অপেক্ষামান আছে। এতসব অপরাধের পরেও তাকে এই স্কুলে যোগদানের সুযোগ দিয়েছিল খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কিন্তু ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের চাপে কিরীটী রায় এই স্কুলে যোগদান না করে পালিয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তাকে আড়ংঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেছে। আজ সোমবার তাকে এই বিদ্যালয়ে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এরআগে, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কিরীটী রায় তালতলা উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য আসেন। তখন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়। এরপর এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের টেবিলের রেজিস্টার বই, শিক্ষক হাজিরা বই, রিটার্ন ফাইল ও কিরীটী রায়ের যোগদানের কাগজ নিয়ে যায়। শিক্ষকদের অনুরোধে তারা কাগজপত্র ফেরত দেয়। ঐদিন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগে গণস্বাক্ষর করে কিরীটী রায়কে এই স্কুলে যোগদান না করানোর দাবি করেন। ঐ দিন অভিভাবকরা অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেছিলেন, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের ছাত্রীদের শ্লীলতাহানী, নারী শিক্ষকদের হেনস্থা, ইভটিজিং ও ৫ জন নারী শিক্ষকের শরীরের স্পর্শকাতর অংশের ছবি তোলা, বিনা অনুমতিতে একজন সহকারী শিক্ষীকার সাথে গোপন পাসপোর্টে একাধিকবার ভারত ভ্রমণ করার জন্য বিভাগীয় মামলা আছে। আমরা এইসব বিভাগীয় মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই ও শাস্তি চাই।
কিরীটী রায়ের বদলির বিষয়ে অভিভাবকরা জানিয়েছিলেন, তার মত একজন বিতর্কিত শিক্ষককে আমরা এই স্কুলে দেখতে চাই না। কিছুদিন আগে তিনি ৫ জন নারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ১শত পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র প্রস্তুত করে ঐ শিক্ষকদের অন্য স্কুলে বদলির ব্যবস্থা করেছিলেন। কিরীটী রায় ২০০৯ সালে প্রথমবার তালতলা উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ঐ বছর একজন ছাত্রকে অমানবিক প্রহার কারার অভিয়েগে তাকে এই স্কুল থেকে শাস্তিযোগ্য বদলি করে দৌলতপুরের কার্তিককুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে দুই জন নারী শিক্ষক তার রিরুদ্ধে মামালা করেন। সেখান থেকে তাকে মেরে তাড়ানো হয়। এরপর তাকে শাস্তিযোগ্য বদলি করে দাকোপের কালাবগী সালেহা হাফেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি বড় ধরনের অপকর্ম লিপ্ত হয়ে আবার ২০১৬ সালে এই স্কুলে যোগদান করেন। এরপর একাধিকবার বিভাগীয় মামলা খেয়ে তিনি এই স্কুলের পরিবেশ নষ্ট করে চলেছেন। এখন তিনি বরখাস্ত আছেন। আমরা আর তাকে এই স্কুলে দেখতে চাই না। উল্লেখ্য, এই শিক্ষক ১৭ বছরের চাকুরী জীবনে এই নিয়ে ৭ বার স্কুল পরিবর্তন করেছেন, গুরুতর অপরাধে একাধিকবার শাস্তিযোগ্য বদলী হয়েছেন, তার বেতনের একটি বড় অংশ শাস্তিযোগ্য অপরাধের জন্য কর্তন হয়। বিভিন্ন অপরাধে শিক্ষা অফিসের তদন্তে তার বিরুদ্ধে যে সব বিভাগীয় মামলা আছে সেগুলোর প্রকৃত সাজা হবে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button